Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ফজুমিয়ারহাটে অসহনীয় যানজট

এই ভোগান্তির শেষ কবে?

কাজী মো. ইউনুছ, কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৬ এএম

৬০ বছর বয়সী খলিলুর রহমান। হঠাৎ বুকে ব্যথা নিয়ে জেলা শহরের একটি ক্লিনিকের উদ্দেশ্যে বের হন। দ্রুত হাসপাতালে না গেলে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে তার। ডাক্তারের এমন পরামর্শ মতে গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে খলিলকে নেয়ার জন্য রওনা দেন স্বজনরা।

স্থানীয় ইমান আলী মার্কেট থেকে ফজুমিয়ারহাট বাজারের চৌরাস্তা মোড়ে এসে ২২ মিনিট পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকে অ্যাম্বুলেন্সটি। আটকা পড়েন যানজটের কবলে। এ সময় কাতরাচ্ছিলেন বৃদ্ধ খলিল। স্বজনের চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। পাশে বসে কাঁদছিলেন মেয়ে উম্মে সালমা। চালক ক্রমাগত সাইরেন বাজিয়েই যাচ্ছেন। তবে অ্যাম্বুলেন্স সামনে এগোনোর কোনো জোঁ নেই। লম্বা যানজট। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১ টার সময় ওই অ্যাম্বুলেন্সের দেখা মেলে ফজুমিয়ারহাট চৌরাস্তা মোড়ে।

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার ফজুমিয়ারহাট বাজারের যানজট এখন ব্যবসায়ী-ক্রেতা-বিক্রেতা ও পথচারীদের এখন পথের কাঁটা।

সরেজমিন দেখা যায় এমন দৃশ্যই। শত শত যানবাহন থেমে আছে। মাঝে মধ্যে ধীরগতিতে চলছে গাড়িগুলো। এমন দৃশ্য মাসের পর পর মাস ধরে চলছে। মানুষের ভোগান্তি এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।

উপজেলার ব্যস্ততম বাজার ফজুমিয়ারহাট। নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর জেলা শহর ও রামগতি-কমলনগর উপজেলা পরিষদে যাতায়াতের সহজপথ এই বাজারটি। বাজারের ওপর রাস্তা দখল করে সিএনজি-রিকশা-অটোরিকশা-ভ্যানগাড়ি ও পিকআপ দাঁড়িয়ে এই যানজট সৃষ্টি করে রাখেন। ফজুমিয়ারহাট থেকে কমলনগর থানা ও উপজেলা যেতে সর্বোচ্চ ১৫ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে এখন প্রায় ৪০ মিনিটের মতো। অন্যদিকে ফজুমিয়ারহাট থেকে নোয়াখালী জেলার সদর থানার শান্তিরহাট ও করমুল্লাহ বাজার যেতে সময় লাগে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ মিনিট। কিন্তু এই বাজারের প্রচন্ড যানজটের কারণে এখন সময় লাগে ঘণ্টার উপরে। মহাদুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ফজুমিয়ারহাট বাজারে আসা প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে। নামে মাত্র কমিউনিটি পুলিশ থাকলেও জনগনের কোন কাজে আসছে না। কমিউনিটি পুলিশ শুধু প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।

কমলনগর থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন। ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে চরম উদাসীনতায়। এমন অবস্থায় উপজেলার ফজুমিয়ারহাট বাজারের যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেই কোন উদ্যোগ। মাঝে মধ্যে যানজট নিরসনের জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ দু-একজন গ্রাম পুলিশ দিয়ে নামমাত্র চেষ্টা করলেও দীর্ঘ মেয়াদি কোন উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি। এতে কমিউনিটি পুলিশ, ইউনিয়ন পরিষদ, থানা ও উপজেলা প্রশাসন নিয়ে নানা কটুকথা বলতে শুনা যাচ্ছে ভুক্তভোগীদেরকে। আবদুল বাছির নামে এক পথচারী বললেন, এই যন্ত্রণা আর সহ্য হয় না। এখানে ট্রাফিক পুলিশ জরুরি হয়ে পড়েছে।

বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, কি এক অবস্থা ফজুমিয়ারহাট বাজারে চলছে। পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের লোকজন এই বাজারে প্রতিদিন আসা যাওয়া করে। তারা এই যানজট দেখেও না দেখার ভান ধরেছেন। আর কমিউনিটি পুলিশের সদস্যরা তো এই এলাকায় থাকেন। তারাও চরম উদাসীনতায় রয়েছে। এরা নামে মাত্র কমিউনিটি পুলিশ। জনগনের কোন কাজেই আসছেনা এদেরকে।

ফজুমিয়ারহাট এলাকার বাসিন্দারা বলেন, উপজেলার ব্যস্ততম এই বাজারের চৌরাস্তা মোড়ে চলাচল করাটা এখন কঠিন হয়ে পড়ছে। যানজট ভয়ঙ্করুপ ধারণ করছে। বাজারের ওপর রাস্তা দখল করে সিএনজি ও অটোরিকশা দাড়িয়ে মূলত যানজট সৃষ্টি করে রেখেছে। বিষয়টি সমাধানে আমরা উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

কমলনগর থানার ওসি মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দীন বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত আছি। ইউএনও এবং স্থানীয় চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনা করে যানজট নিরসন করা হবে।

কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, ফজুমিয়ারহাট বাজারের যানজট এখন মারাত্মক আকার ধারন করছে। বিষয়টি নিয়ে ওসি এবং চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফজুমিয়ারহাটে অসহনীয় যানজট

২২ জানুয়ারি, ২০২২
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ