Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

এবারও লো স্কোরিং ম্যাচ!

মিরাজ দ্যুতি ছাপিয়ে সাকিবের জয় চট্টগ্রাম : ২০ ওভারে ১২৫/৮ বরিশাল : ১৮.৪ ওভারে ১২৬/৬ ফল : বরিশাল ৪ উইকেটে জয়ী

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

১২০ বলের খেলায় রান যাবে ২০০ ছাড়িয়ে, প্রতিপক্ষও সেটিকে তাড়া করে জিতবে রোমাঞ্চ ছড়িয়ে- টি-টোয়েন্টি মাচ মানেই ব্যাটসমানদের খেলা, ধুন্ধুমার ছার-ছক্কার বিনোদন। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট হলে তো কথাই নেই, একই আবেদন থাকে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতেও। তবে নিজেদের খোলস ছেড়ে এখনও বেরুতে পারেনি বাংলাদেশ। জাতীয় দল কিংবা ঘরোয়া ক্রিকেট, কোন ফরম্যাট যে কখন কোন আদলে খেলে সেটি নিয়েও থেকে যায় প্রশ্ন! এই যেমন গতকাল শুরু হওয়া বিপিএলের কথাই ধরুন না!

মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে গতকাল দুই প্রান্ত থেকে স্পিনার দিয়ে শুরু, পেসারের স্পিন করা, লো স্কোরিং ম্যাচ- দুই বছর পর বিপিএল ফিরল আগের রূপেই। শেষ দিকে বেনি হাওয়েলের ২০ বলে ৪১ রানের ঝড়ের পরও ১২৫ রান তুলেছিল মেহেদী হাসান মিরাজের চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। রান তাড়ায় মিরাজের এক ওভারে একটু খেই হারিয়ে ম্যাচটা কঠিন করে তুললেও শেষ পর্যন্ত শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ৪ উইকেটের জয় পেয়েছে সাকিব আল হাসানের ফরচুন বরিশাল। ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করেও বিপিএলের এ মৌসুম হার দিয়েই শুরু হলো ‘অধিনায়ক’ মিরাজের। এসব তো কেতাবী বিশ্লেষন। দুই বছর পর ফিরেও জনপ্রিয় এই টুর্নামেন্ট মাঠের লড়াইয়েও দিতে পারেনি রোমাঞ্চের ছিঁটে ফোঁটা!

হোম অব ক্রিকেটের স্লো উইকেট নিয়ে আক্ষেপটা বরাবররের। আর তাতে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল চট্টগ্রাম। ইনিংসের প্রথম বলেই অফ স্পিনার নাঈম হাসানকে লং-অন দিয়ে ছক্কা মেরে কেনার লুইসের শুরুটাও ছিল আশা জাগানিয়া। শেষ দিকে বেনি হাওলের ক্যামিও ছাড়া গোটা ম্যাচই ছিল মাড়ম্যাচে, পানশে। তৃতীয় বলে আবারও তুলে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন সেখানেই। চতুর্থ ওভারে প্রথমবার আসা পেসার আলজারি জোসেফকে এরপর নিজের উইকেটটা উপহার দেন আফিফ হোসেন- লেগ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে।

পঞ্চম ওভারে এসে সাব্বির রহমানকে ফেরান সাকিব, সুইপ করতে গিয়ে সাব্বির হন এলবিডব্লিউ। পাওয়ারপ্লেতে ৩৬ রান তুললেও ৩ উইকেট হারায় চট্টগ্রাম। পাওয়ার প্লের পরও নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় তারা। ইংলিশ জ্যাক লিনটটকে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন তার স্বদেশি উইল জ্যাকস, নাঈমের বলে ক্যাচ তোলেন ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলতে যাওয়া মিরাজ। জোসেফের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দেন শামীম হোসেনও। ৬৩ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে ফেলে চট্টগ্রাম, ইনিংসের তখন বাকি মাত্র ৬ ওভার।
নাঈম হাসানকে নাঈম ইসলামের মারা ছয়ে ১৫তম ওভারে ওঠে ১০ রান, তবে নিজের শেষ ওভারে এসে মাত্র ৪ রান দেন লিনটট। হাওয়েল ঝড় শুরু করেন ১৭তম ওভারে- ব্রাভোকে চারের পর মারা ছয়ে ওঠে ১৪ রান। সাকিব এরপর নিজের শেষ ওভারে ৪ রান দিলেও জোসেফ ও ব্রাভোর করা ইনিংসের শেষ ২ ওভার থেকে ওঠে ৩০ রান। ১ বল বাকি থাকতে ব্রাভোর ফুল লেংথের বলে থার্ডম্যানে ধরা পড়েন হাওয়েল, ইনিংসে ৩টি চারের সঙ্গে ছিল ৩টি ছয়। শেষ বলে চার মারেন মুকিদুল।

রান তাড়ায় বরিশাল হোঁচট খায় শুরুতেই। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজের নিচু বলে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন নাজমুল হোসেন। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে মিরাজের বলেই বোল্ড হন সাকিবও, চট্টগ্রাম প্রথম ৬ ওভারে তোলে ২৮ রান। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান সৈকত আলীর সঙ্গে তৌহিদ হৃদয়ের তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৩২ বলে ওঠে ৩৪ রান। চট্টগ্রামকে পরের ব্রেক থ্রু দেন পেসার মুকিদুল ইসলাম, তাঁকে কাট করতে গিয়ে আলগাভাবে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন হৃদয়, ১৭ বলে ১৬ রান করে।

তবে শুক্কুর ও সৈকতের জুটিতে বরিশাল ঠিক পথেই এগিয়েছে। মিরাজের করা ১৫তম ওভারের প্রথম বলে সৈকত ছয় মারার পর দলটির প্রয়োজন ছিল ৩৫ বলে ৩৪ রান। ম্যাচের চিত্রটা হুট করেই একটু বদলাল এরপর। মিরাজের পরপর দুই বলে ফিরলেন থিতু হওয়া সৈকত ও শুক্কুর দুজনই। সৈকত কাউ কর্নারে ক্যাচ দেওয়ার পর সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ শুক্কুর। সালমান হ্যাটট্রিক বল আটকালেও সে ওভারের শেষ বলে হয়েছেন রানআউট। পয়েন্ট থেকে সিঙ্গেল নিতে গিয়ে ফিরে এসেছিলেন, তবে আফিফের দারুণ থ্রোয়ে সরাসরি ভেঙেছে স্টাম্প।

মিরাজ বোলিং শেষ করেছেন ৪ ওভারে ১৬ রানে ৪ উইকেট নিয়ে। টি-টোয়েন্টিতে এই অফ স্পিনারের এটি ক্যারিয়ারসেরা বোলিং, এর আগে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে রাজশাহী রয়্যালসের বিপক্ষে ৬ রানে ২ উইকেট নিয়েছিলেন খুলনা টাইগার্সের হয়ে। মাঝে ১৩তম ওভারে শুক্কুরকে প্রথম তিন বল অফ স্পিন করেছিলেন মিডিয়াম পেসার হাওয়েল। ১৯তম ওভারে এসে করলেন লেগ স্পিনও। তবে আটকাতে পারেননি বরিশালকে। বরিশালের জয় নিশ্চিত হওয়ার সময় ব্রাভো শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ১০ বলে ১২ রানে, জিয়াউর রহমান করেন ১২ বলে ১৯ রান। যে কোনো টুর্নামেন্টের শুরুতেই অন্তত নজর কাড়ার সব আয়োজনই থাকে। এবার এমনিতেই করোনার কারনে নেই গ্যালারির প্রাণ দর্শক, কোথায় ঘরে বসে যারা ছার-ছক্কার একটু বিনোদন নেবার জন্য টিভি সেটের সামনে বসবে, উল্টো এমন ম্যাড়ম্যাড়ে ম্যাচে শুরুর পর বিপিএল নিয়ে আগ্রহ আরো কমে কি-না সেটি নিয়েই বাড়ছে দুশ্চিন্তা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স : ২০ ওভারে ১২৫/৮ (লুইস ৬, জ্যাকস ১৬, আফিফ ৬, সাব্বির ৮, মিরাজ ৯, শামীম ১৪, নাঈম ১৫, হাওয়েল ৪১, মুকিদুল ৪*, শরীফুল ০*; নাঈম ২/২৫, সাকিব ১/৯, জোসেফ ৩/৩২, লিনটট ১/১৮, ব্রাভো ১/৩৯)।
ফরচুন বরিশাল : ১৮.৪ ওভারে ১২৬/৬ (নাজমুল ১, সৈকত ৩৯, সাকিব ১৩, হৃদয় ১৬, শুক্কুর ১৬, ব্রাভো ১২*, সালমান ০, জিয়াউর ১৯; নাসুম ০/১৯, মিরাজ ৪/১৬, শরীফুল ০/২৯, জ্যাকস ০/৭, হাওয়েল ০/২৬, মুকিদুল ১/২৫)।
ফল : বরিশাল ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা : মেহেদী হাসান মিরাজ (চট্টগ্রাম)।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্রিকেট


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ