Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় বিজয়

প্রকাশের সময় : ১ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

টেস্ট ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি ইংল্যান্ডকে হারিয়ে টেস্ট জিতে নতুন ইতিহাস রচনা করেছে বাংলাদেশ। গত ১৬ বছর ধরে টেস্ট খেলছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে এতবড় গৌরবদীপ্ত বিজয় আর কখনো আসেনি। ওয়ানডে ক্রিকেটে এমন কোনো বড় দেশ নেই, যাকে বাংলাদেশ হারায়নি। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে তুলনামূলকভাবে দুর্বল জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছাড়া আর কোনো দেশকে হারাতে পারেনি। গত রোববার ঢাকায় ইংল্যান্ডকে ১০৮ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাদেশ জানান দিয়েছে বিশ্বের যে কোনো শক্তিশালী দেশকে হারানোর ক্ষমতা তার তৈরি হয়েছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টেও জেতার সম্ভাবনা ছিল। অল্পের জন্য সেই সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়। মাত্র ২২ রানে হেরে যায়। এই হারের উপযুক্ত জবাব বাংলাদেশ ঢাকায় দিয়েছে। টেস্ট ক্রিকেটে ইতিহাসের এই শ্রেষ্ঠতম জয়ের নায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ, ঊনিশ বছরের এক ‘বিস্ময় বালক’। তাকে যথাযথ সঙ্গ দিয়েছে বিশ্বখ্যাত অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তারা দু’জনই দেখিয়ে দিয়েছে বিজয় কিভাবে তাড়া করে কব্জা করতে হয়। এই বিজয়ে বিশেষ অবদান ও ভূমিকা যুক্ত করেছে তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস প্রমুখ। এই অনন্যসাধারণ বিজয়ের নায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ কেবল দল ও দেশকেই অসাধারণ উচ্চতায় অধিষ্ঠিত করেনি, নিজেকেও ইতিহাসের অংশে পরিণত করেছে। ইংল্যান্ড ও বাংলাদেশের মধ্যে দুই টেস্টের এই সিরিজে সুযোগ পাওয়া এটাই তার প্রথম। প্রথম সুযোগেই সে বিস্ময়কর দক্ষতা ও নৈপুণ্যের পরিচয় দিয়েছে। চট্টগ্রাম টেস্টে তার উইকেট শিকারের সংখ্যা সাত। ঢাকা টেস্টে ১২। মোট ১৯। বিশ্ব ক্রিকেটের বিগত ১২৯ বছরের মধ্যে অভিষেকে ১৯ উইকেট শিকার একটি রেকর্ড। এর আগে এই রেকর্ডের অধিকারী ছিল অস্ট্রেলিয়ার ২০ বছর বয়সের জেমস ফেরিস। বাংলাদেশে ২০০৫ সালে টেস্টে এক ম্যাচে ১২ উইকেট শিকারের রেকর্ড ছিল এনামুল হক জুনিয়রের। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে উপর্যুপরি তিন ইনিংসে ১২ উইকেট নেয় এনামুল। দুই ম্যাচ সিরিজে তার মোট উইকেট সংখ্যা ছিল ১৮। মেহেদি হাসান মিরাজ এখানেও শীর্ষে। আমরা তাকে স্বাগত ও অভিনন্দন জানাই। এই সঙ্গে সাকিব আল হাসানসহ দলের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই বোর্ড, ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা, নির্বাচকম-লী, কোচ সবাইকে।
ক্রিকেটের অভিজাত ফরম্যাট হলো টেস্ট। এই ফরম্যাটে বাংলাদেশ গত ১৬ বছরে তেমন সাফল্য দেখাতে পারেনি। টেস্টে সাত জয়ের পাঁচটি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, দু’টি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এ ছাড়া মুলতানে পাকিস্তানের বিপক্ষে জিততে জিততেও এক উইকেটে হেরে যায় বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও সম্ভাবনা জাগিয়ে শেষ পর্যন্ত হার মানতে হয় তাকে। মেধা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ঘাটতি ছিল এর মূল কারণ। এবার দীর্ঘ বিরতির পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশ প্রমাণ করে দেয় এখন আর আগের মতো ঘাটতি নেই। দলে মেধার যেমন সমাবেশ ঘটেছে তেমনি যোগ্যতা-অভিজ্ঞতাও বেড়েছে। চট্টগ্রাম টেস্টে হারের পর বাংলাদেশ দলের মনোবলে এতটুকু চিড় ধরেনি। সেটা ঢাকা টেস্টে প্রমাণিত হয়েছে। বলা যায়, ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ ইংল্যান্ডের যোগ্য প্রতিযোগীর পরিচয় দিয়েছে। জেতার জন্য মনোবলটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ যেন জেতার জন্য মরিয়া হয়েই মাঠে নেমেছিল। বাংলাদেশ ২৭২ রানের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল ইংল্যান্ডকে। ইংল্যান্ডের অবশ্য দ্বিতীয় ইনিংসে এত রান চেজ করে জেতার রেকর্ড নেই। তারপরও ইংল্যান্ড বলে কথা! ইংল্যান্ডের ওপেনিং জুটির ১০০ রান করার পর অনেকেরই কপালে ভাঁজ পড়ে। এর পরের অধ্যায় সম্পূর্ণ অন্য রকম। মেহেদি হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসান একের পর এক উইকেট শিকার করে ইংল্যান্ডকে ধসিয়ে দেয়। মাত্র ৭০ মিনিটে ৬৪ রানে নিয়ে ১০ উইকেট হারিয়ে ফেলে ইংল্যান্ড। স্মরণ করা যেতে পারে, নাক উঁচু, দাম্ভিক ইংল্যান্ডের কেউ কেউ এর আগে বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস কেড়ে নেয়া উচিত, এমন মন্তব্য করেছিল। সেই ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ যোগ্য প্রত্যুত্তোর দিয়েছে।
এটা বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বিজয়, স্মরণীয় বিজয়Ñ এসবই ঠিক আছে, তবে এ নিয়ে অহং প্রকাশের বা আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো কারণ নেই। ক্রিকেটের সব ফরম্যাটে আমাদের উল্লেখযোগ্য উন্নতি ও অগ্রগতি হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু কোন ফরম্যাটে কোথায় কোথায় দুর্বলতা আছে, ঘাটতি আছে, তাও আমাদের অজানা নেই। বলতেই হবে, বাংলাদেশে প্রতিভার অভাব নেই। আমরা কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমানকে পেয়েছি, মেহেদি হাসান মিরাজের মতো ম্যাজিক বয়কে পেয়েছি। আমাদের আছে সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, মুশফিকুর রহীম, মাশরাফি বিন মোর্তজা প্রমুখের মতো বিশ্বমানের ক্রিকেটার। অবস্থা এখন এমন যে, প্রতিভার ভিড়ে কাকে রেখে কাকে জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, তা নিয়েই সমস্যা দেখা যায়। এটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য একটা বড় রকমের ইতিবাচক দিক। এ-ও স্বীকার করতে হবে, ক্রিকেটকে আমাদের দেশের সকল পর্যায়েই গুরুত্ব প্রদান করা হয়। বর্তমান বোর্ড ও সরকার ক্রিকেটের অগ্রগতির জন্য যতটা করা সম্ভব, সবই করছে। আরো উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য আরো অনেক কিছুই করার রয়েছে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন প্রশিক্ষণের প্রতি। ক্রিকেট চর্চার পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি সুযোগ-সুবিধা আরো বাড়াতে হবে। ক্রিকেটে নেতার জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণ, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, টিম স্পিরিট, উচ্চ মনোবল এবং প্রবল দেশপ্রেমের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের অবশ্যই বিজয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে, বিজয়কে অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবাই এদিকে খেয়াল রাখবেন, এটাই আমাদের একান্ত প্রত্যাশা।

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় বিজয়
আরও পড়ুন