Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভারতে গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে

সংবিধানের আদর্শ লঙ্ঘিত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

গতকাল ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ উদযাপন করছে ভারত। ১৯৫০ সালে দেশের সংবিধান কার্যকর হওয়ার কথা স্মরণ করে দিবসটি পালিত হয়। এদিন রাজধানীর মধ্য দিয়ে একটি জমকালো কুচকাওয়াজ ভারতকে তার সামরিক পেশিশক্তি প্রদর্শনের একটি অজুহাত দেয় যখন বিভিন্ন রাজ্যের ভাসমান এবং রঙিন ডিসপ্লেগুলো একটি বৈচিত্র্যময়; কিন্তু ঐক্যবদ্ধ দেশকে চিত্রিত করে। তবে এই বছরের বিল্ড আপ, তার পরিবর্তে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্যগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিভাজন প্রকাশ করেছে।

অভিযোগ উঠছে যে, ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি রাজ্য সরকারগুলোর বিরুদ্ধে রুক্ষতা চালাচ্ছে। রাজ্যের অনুমতি বা সম্মতি ছাড়াই কেন্দ্রীয় সরকারকে রাজ্য-স্তরের আমলাদের দিল্লিতে স্থানান্তর করার ক্ষমতা দেবে বলে বিজেপির একটি প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বেশ কিছু রাজ্য নেতা ক্ষুব্ধভাবে প্রতিবাদ করছেন। উত্তেজনা বৃদ্ধি করে, কেন্দ্রীয় সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সীমানা রক্ষা করে এমন রাজ্যগুলোতে তার ক্ষমতা প্রসারিত করতে চলে গেছে। ভারতের রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে সর্বদাই জটিল সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু কিছু পর্যবেক্ষক মনে করেন যে, তাদের বন্ধন একটি নতুন নিম্ন স্তরে পৌঁছেছে- যা সংবিধানের আদর্শ থেকে অনেক দূরে।

বর্তমানে ব্যবহারিক রাজনীতিতে ৭২ বছরের সংবিধানটিকে ক্রমশই যেন দুর্বল, মলিন দেখাতে শুরু করেছে। ভারতীয় রাজনীতিতে যারা বর্তমান শিরোনেতা, তাদের কাছে সাংবিধানিক নৈতিকতার প্রতি বিশ্বস্ত থাকা যে তত গুরুত্বপূর্ণ নয়, সেটা এরই মধ্যে যথেষ্ট স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে (যেমন সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপ) সংসদে যথাযথ আলোচনা ছাড়াই কেন্দ্রীয় সরকার বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। আমেরিকান সংবিধান-বিশেষজ্ঞ টম গিনসবার্গ এবং আজিজ হক একেই বর্ণনা করেছেন ‘সাংবিধানিক পশ্চাদপসরণ’ হিসাবে- গণতন্ত্রের এক ক্রমান্বিত, কিন্তু শেষ পর্যন্ত মৌলিক, অবক্ষয় নিশ্চিত করছে এই ‘পশ্চাদপসরণ’।

ভারত আবার এমন এক যুগে প্রবেশ করেছে, যেখানে কর্তৃত্ববাদ, সংখ্যাগুরুবাদ, জনপ্রিয়তাবাদ ইত্যাদি সব মিলেমিশে ভারতীয় প্রজাতন্ত্র এবং তার সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে বিপদগ্রস্ত করতে শুরু করেছে। অনেকেই এই পরিস্থিতিকে বলেছেন ‘অঘোষিত জরুরি অবস্থা’। বাকস্বাধীনতা, সাম্যের অধিকার ইত্যাদি সংবিধান-স্বীকৃত বেশ কিছু মৌলিক অধিকার এর মধ্যেই এমনভাবেই সঙ্কীর্ণ কিংবা লুপ্ত করা হয়েছে, যা ভারতীয়রা আগে কখনও দেখেনি।

আগেকার পর্বের সঙ্গে একটি তফাৎ অবশ্য আছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাবিশিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর তরফে এবং সরকারিবহির্ভূত নাগরিক পরিসরে সংবিধানের ওপর এই ক্রমান্বিত আক্রমণের বিষয়ে একটা বিরাট অবজ্ঞা আর অবহেলার ভাব এখন। প্রতি ২৬ নভেম্বর ধূমধাম করে সংবিধান দিবস উদযাপন করা হয় ঠিকই, কিন্তু এ সামাজিক-রাজনৈতিক অবহেলা চতুর্দিকে পরিব্যাপ্ত। আগে সংবিধানের ওপর যে কোনো আক্রমণে প্রধান রক্ষকের ভূমিকা নিত আদালত। এখন বিচারবিভাগের সেই ভূমিকার কমতি দেখা যাচ্ছে বারবার।

বর্তমান সরকারের মনোভাবটা ঠিকঠাক ধরা পড়ল এই মাসের প্রথমে, যখন ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’-এর উদ্বোধনী ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি বললেন, ‘গত ৭৫ বছরে আমরা কেবল অধিকারের কথা বলেছি, অধিকারের দাবি নিয়ে লড়াই করে সময় নষ্ট করেছি’ এবং যোগ করলেন, ‘নিজের কর্তব্য ভুলে যাওয়ার কারণেই ‘ভারত এখনও এত দুর্বল’। ‘অধিকার’-এর ওপরে উঠে এল ‘কর্তব্য’, নরেন্দ্র মোদি সরকারের মন্ত্রীরাও সে কথা মুখে মুখে ফেরালেন। ‘অগ্রপশ্চাৎ’ উল্টে দেয়ার এই পরিকল্পনাকে বিপজ্জনক বললে কম বলা হয়। আইন-গবেষকদের ভাষায় একে বলা যায় ‘ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের মৌলিক নৈতিক আদর্শ’-এর সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা। সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ