Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্লান্টেশন খাতে কর্মী নিয়োগে নিবন্ধন শুরু

মালয়েশিয়া শ্রমবাজার

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

বৈশ্বিক করোনা মহামারির পর প্লান্টেশন খাতে আজ শুক্রবার থেকে অভিবাসী কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে মালয়েশিয়া। সে প্রক্রিয়ায় আগ্রহীদের জন্য ইমিগ্রেশন বিভাগের অনলাইনে নিবন্ধনের সুযোগ উন্মুক্ত হচ্ছে। দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এসময়ে কেবল বনায়ন খাতের জন্যই কোম্পানীর কাছ থেকে আবেদন নেয়া হবে। পরে যাচাই বাছাই করে কর্মী নিয়োগের অনুমতি দেয়া হবে। অন্যান্য খাতের জন্য নিবন্ধন শুরু হবে ১৫ ফেব্রæয়ারি থেকে। মালয়েশিয়া থেকে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

দীর্ঘ তিন বছর পর বাংলদেশের জন্য খুলতে যাওয়া এই শ্রমবাজার নিয়ে অবশ্য এখনো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি প্রস্তুতি নিতে পারেনি। গত ১৯ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ার সঙ্গে জনশক্তি রফতানি সংক্রান্ত সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী সরকারি ডাটাবেজ থেকে কর্মী নিয়োগের কথা বলা হয়েছিল। এখন পর্যন্ত সেই ডাটাবেজ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেনি বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)।

উভয় দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকেই কর্মী প্রেরণের প্রক্রিয়ার বিস্তারিত সিদ্ধান্ত হবার কথা। বৈঠকটি কবে নাগাদ অনুষ্ঠিত হবে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছে না। বিগত দিনের ন্যায় এবার সংখ্যা বাড়িয়ে ২৫ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী প্রেরণের বিষয়ে বাজারে গুজব রয়েছে। সাধারণ রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক প্রতিনিধিরাও মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণে কথিত ২৫ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছে।

সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির অধিকার ক্ষুণ্œ করে ২৫ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী প্রেরণ শুরু হলে তা প্রতিহত করতে আইনের আশ্রয় নেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। রিক্রুটিং এজেন্সি ঐক্য পরিষদের সভাপতি এম টিপু সুলতান এ হুমকি দেন। অবশ্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ সমঝোতা স্মারকের আগ থেকেই বলে আসছেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কোনো সিন্ডিকেট হবে না। তিনি দেশটিতে কর্মী নিয়োগের জন্য সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা দেশটিতে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

গত ১৫ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশটির বৃক্ষরোপণ খাতে শ্রমিক ঘাটতি কমাতে ৩২ হাজার বিদেশি শ্রমিক আনার জন্য সরকার বিশেষ অনুমোদন দিয়েছে গত বছরের সেপ্টেম্বরে। সে প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে ২৮ জানুয়ারি থেকে এই খাতে বিদেশি কর্মী নিয়োগে আবেদন জমা নেয়া হবে। মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারাও ইমিগ্রেশনের ওয়েবসাইটে কর্মী নিয়োগের জন্য আবেদন করতে পারবেন। সেখানে তারা বৃক্ষরোপণ খাতসহ অন্যান্য খাতে কর্মী নিয়োগের অপশন পাবেন।

এদিকে, বিদেশি কর্মী নিয়োগে মালিয়েশিয়া প্রক্রিয়া শুরুর পথে থাকলেও কর্মী পাঠানোর প্রস্তুতি এখনো নিতে পারেনি বাংলাদেশ। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মালয়েশিয়া প্রক্রিয়া শুরুর পথে থাকলেও নিয়োগ চ‚ড়ান্ত করতে বেশ কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। সেই সময়ের মধ্যে কর্মী পাঠানোর প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব হবে। বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) সূত্র জানায়, ২৮ জানুয়ারি থেকে মালয়েশিয়ায় প্লান্টেশন খাতে কর্মী নিয়োগে অনলাইন আবেদন শুরু হচ্ছে। তখন মালয়েশিয়া তাদের নিয়োগ কোম্পানিগুলোকে অনুমতি দেবে। যেসব কোম্পানি আবেদন করবে, সেই আবেদন যাচাই বাছাই করে নিয়োগকর্তা তালিকাভুক্ত করবে মালয়েশিয়া সরকার। তারপর কর্মীর চাহিদা জমা হবে। এরপর সে বিষয়ে খোঁজ নেয়া হবে, ওই কোম্পানির কর্মী রাখার ক্ষমতা আছে কি না এবং কোম্পানিও উপযুক্ত কি না। তারপর তাদের কর্মী নিয়োগের অনুমতি দেয়া হবে।
মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর আগেই দালালরা প্রতারণার মাধ্যমে কর্মীদের কাছ থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। বিধায় কেউ যাতে দালাল বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে টাকা পয়সা লেনদেন না করে তা সতর্ক করে বিএমইটি থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদও প্রবাসী সচিব ড. আহমদ মনিরুছ সালেহীন মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের কাউকে টাকা পয়সা না দেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন।

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে যে সমঝোতা চুক্তি সই হয়, সেখানে মালয়েশিয়া যেতে আগ্রহীদের জন্য কিছু যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়। এসব কর্মীদের ন্যূনতম ইংরেজি ভাষাজ্ঞান অর্থাৎ ইংরেজি পড়া ও কিছুটা বলার দক্ষতা থাকার কথা বলা হয়েছে। এর সঙ্গে মালয় ভাষায় দক্ষতা বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হবে। একাধিক জনশক্তি রফতানিকারক বলছেন, প্রাথমিকভাবে কৃষি, নির্মাণ, খনি, গৃহকর্ম, বাগান ও পরিচ্ছন্নতা এবং সার্ভিস সেক্টেরে কর্মী নেবে মালয়েশিয়া। প্রথম ধাপে তারা ৩২ হাজার বিদেশি কর্মী নেবে কেবল প্লান্টেশন তথা বনায়ন খাতের জন্য। এ ৩২ হাজার কর্মীর বেশিরভাগই বাংলাদেশ থেকে নেয়া হতে পারে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

১৯৯২ সাল থেকে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি শুরু করে বাংলাদেশ। ওই বছর দুই দেশ জনশক্তি রফতানি বিষয়ক চুক্তি করে। কিন্তু সে উদ্যোগের ধারাবাহিকতা রাখা যায়নি। দীর্ঘ বিরতির পর ২০০৬ সালে আবার কর্মী পাঠাতে শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু দেশটিতে বিপুলসংখ্যক অবৈধ বাংলাদেশি ধরা পড়ার পর ২০০৯ সালে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশকে নিষিদ্ধ করা হয়। এর তিন বছর পর আবার ২০১২ সালে নতুন করে কর্মী পাঠানোর বিষয়টি আলোচনায় আসে। ফের চুক্তিবদ্ধ হয় দুই দেশ। এবার জি-টু-জি তথা সরকারের সঙ্গে সরকারের চুক্তির মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর সুযোগ উন্মুক্ত করা হয়। এরপর দেশটিতে দশ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ শুরু হলেও ২০১৮ সালে দুর্নীতি আর অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগে মাহথির মোহাম্মদ ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দেয়। বহু ক‚টনৈতিক উদ্যোগের পর ফের দেশটিতে কর্মী প্রেরণের দ্বার উন্মোচিত হতে যাচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিয়োগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ