আল্লাহর বিধান অলঙ্ঘনীয়

মহান রাব্বুল আলামীন সৌর মন্ডল ও ভুমন্ডল এবং তন্মধ্যস্থ বস্তু নিচয়ের জন্য যে প্রাকৃতিক বিধান
উঁচু পেশার লোক নিজ পেশাকে যে দৃষ্টিতে দেখে যদি যথার্থ দৃষ্টিতে দেখে থাকে; তার দৃষ্টিতেও নিজ পেশা তাদৃশ মর্যাদাকর হয়ে উঠবে। এতে করে সে নিজ কাজ ও পেশার প্রতি সশ্রদ্ধ ও আন্তরিক হয়ে উঠবে এবং পরিণামে তার মানবীয় মর্যাদাও সুরক্ষিত হয়ে যাবে। বিষয়টাকে আমরা এভাবেও চিন্তা করতে পারি যে, মানুষ যেহেতু সামাজিব জীব, তাই সমাজের বহুমুখী প্রয়োজন ও সামষ্টিক শ্রীবৃদ্ধির জন্য দরকার বিভিন্ন গুণ ও বিচিত্র যোগ্যতাসম্পন্ন লোকসমষ্টির। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, মহা হিকমতওয়ালা স্রষ্টা মানুষকে সৃষ্টিও করেছেন সেভাবেই।
একেকজন মানুষের একেক রকম যোগ্যতা, একেক রকম দক্ষতা। মানুষ বর্ণ ও রূপে যেমন বৈচিত্র্যময়, তেমনি যোগ্যতা ও গুণেও বহুরঙ্গা। কারো আছে নেতৃত্বের গুণ, কারো চাষাবাদের। কেউ ব্যবসা-বাণিজ্যের সমঝদার, কেউ স্থাপত্যের নিশানবরদার। কারো নেশা শিল্পকলায়, কারো বাক্যচর্চায়। এভাবেই মানব-সমাজ কামার-কুমার, জেলে-ছুতার, শিক্ষক-চিকিৎসক, উকিল-বিচারক নানা পেশার মানুষ দ্বারা গুলেগুলজার।
মহান সৃষ্টিকর্তা মানুষেরই প্রয়োজনে তার এককসমূহকে এভাবে বিভিন্ন কাজের কাজি বানিয়েছেন। এ না হলে মানবসমাজ পূর্ণ ও সমৃদ্ধ হয় না। সুতরাং বলতে পারি, মানবসমাজের পূর্ণতা ও সমৃদ্ধির জন্য প্রত্যেকের যোগ্যতা তার সত্তায় গচ্ছিত এক পবিত্র আমানত। আমানতমাত্রই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যে আমানতের আমানতকারী স্বয়ং রাব্বুল আলামীন, তার গুরুত্ব কী পরিমাপ করা যায়? প্রত্যেক পেশাদারই বিষয়টাকে তার ভাবনায় আনতে পারেন।
ধরুন, আপনি একজন শিক্ষক। আপনার স্বভাবে শিক্ষাদানের বিশেষ ক্ষমতা নিহীত আছে, যা আর সকলের নেই। সমাজ আপনার এই ক্ষমতার মুখাপেক্ষী। এর যথাযথ ব্যবহার দ্বারা মানব-শিশুরা শিক্ষিত ও সুনাগরিক হয়ে ওঠবে, যেমন অন্য কারো এ জাতীয় শ্রমের বদৌলতে আপনি শিক্ষিত ও সুনাগরিক হয়ে উঠেছেন। অর্থাৎ আপনার যে যোগ্যতা তা মানবসমাজের এক চিরায়ত প্রয়োজন। সেই প্রয়োজন মেটানোর লক্ষ্যে সৃষ্টিগতভাবে আপনাকে বেছে নেওয়া হয়েছে এবং এই যোগ্যতা আপনার ভেতর গচ্ছিত রাখা হয়েছে।
সুতরাং এ যোগ্যতা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি পবিত্র আমানত, যা রক্ষা করা আপনার নৈতিক কর্তব্য। এই বোধ যে শিক্ষকের অন্তরে থাকবে, নিঃসন্দেহে সে নিজের পেশাকে বিশেষ মর্যাদার চোখে দেখবে। ফলে সে তার কাজে অনেক বেশি আন্তরিক থাকবে। এ ভাবনার আরো এক দৃষ্টিকোণ আছে। যে কোনো কর্মজীবী ব্যক্তি তার কাজ দ্বারা যেমন নিজের জীবিকা নির্বাহ করে তেমনি অন্যরাও তার কাজের সুফল ভোগ করে। অর্থাৎ একই সাথে সে একজন মানব সেবকও বটে। সে যে কাজই করুক, তা ছাড়া তো অন্যের চলবে না।
নরসুন্দর চুল কেটে না দিলে সভ্য মানুষের বন্যতে পরিণত হওয়ার যোগাড় হবে। লৌহজীবী যদি তার পেশা ছেড়ে দেয়, তবে সভ্যতার চাকা চলমান থাকবে কীভাবে? সভ্যতার নির্মাণে ছুতারের ভূমিকা কী অস্বীকার করা যাবে? হাল আমলে মানুষ অন্তত নামে হলেও এ বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠেছে। তাই আধুনিক কেতায় যারা দুরস্ত, পরিবহন-সেবা, চিকিৎসাসেবা প্রভৃতি শব্দবন্ধে তারা বেশ অভ্যস্ত হয়ে গেছে। বিষয়টা যখন এ রকম, অর্থাৎ পেশা যখন সেবারও মর্যাদা রাখে, তখন নিজ কাজে সেবাসুলভ দৃষ্টিভঙ্গিরও স্পর্শ থাকা চাই।
ইসলামে মানবসেবা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ বিষয়। সে সেবার ধরন যাই হোক না কেন। অত্যন্ত বিশুদ্ধ এক হাদীসে মানুষের যাতায়াত-পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তুর অপসারণকে ঈমানের একটি শাখা সাব্যস্ত করা হয়েছে। অপর এক হাদীসে আছে, শ্রেষ্ঠ মানুষ সেই, যে অন্যের উপকার করে। প্রত্যেক পেশা দ্বারাই যখন মানুষের কোনো না কোনো উপকার সাধিত হয়, তখন পেশাদার ব্যক্তিমাত্রই একজন মানবসেবক।
সুতরাং প্রত্যেকের উচিত নিজ পেশাকে সেই দৃষ্টিতে দেখা। মোটকথা, পেশা যেটাই গ্রহণ করা হোক, তাতে যদি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির ছোঁয়া থাকে, তবে ব্যক্তির চোখে সে পেশা মহৎ হয়ে ওঠতে বাধ্য। তখন আর কোনো পেশাদারের চোখেই আপন পেশা হীন মনে হবে না। হ্যাঁ, অপেক্ষাকৃত একটি অপেক্ষা অন্যটি শ্রেষ্ঠ হতে পারে, কিন্তু মাহাত্মের বহুমুখী উপাদান দৃষ্টে তুচ্ছ নয় কোনোটিই। কাজেই শ্রেষ্ঠটি কেন হস্তগত হলো না, সেই আক্ষেপ না করে উচিত আপন কাজের মর্যাদা উপলব্ধি করা। অন্তরে সেই উপলব্ধি এসে গেলে হীনমন্যতা বিদায় হবে এবং আপন পেশার প্রতি দৃষ্টি হয়ে উঠবে শ্রদ্ধাশীল, যা দায়িত্ব পালনে যত্নবান হওয়া ও কার্যে সুষ্ঠুতা আনয়নের জন্য অপরিহার্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।