Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দাঁত ও মাড়ির যত্ম

প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মানুষের দুই প্রকার দাঁত। প্রাথমিক ও স্থায়ী। আমাদের দুই চোয়ালে সারিবদ্ধভাবে দাঁতগুলো হাড়ের ভিতরে প্রোথিত থাকে। আর হাড় ও দাঁতের মধ্যে এক বিশেষ রকমের পর্দা থাকে যাকে বলে পেরিওডনটার মেমব্রেন। এটি হাড় ও দাঁতের গোড়ার সিমেন্টামের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে যার জন্য চিবানোর সময় সহজে হাড়ের আঘাতজনিত ক্ষতি হয় না। আর নরম মাড়ি হাড়ের উপর অ্যালভিওলার প্রসেস দাঁতের মাথা ১-২ মিলিমিটার ঢেকে রাখে যা চিবানোর সময় খাদ্যবস্তুকে ভিতরে যেতে পেরিওডন সিয়াম রোগগ্রস্ত না-হয় সেদিকে আমাদের যতœশীল হতে হবে। দাঁতের গঠনগত নির্দিষ্ট অংশগুলো একটু বলে নেয়া ভালো। দাঁতের ক্রাউন (মাথা) যা মুখের মধ্যে দেখা যায় তাকে ক্লিনিক্যাল ক্রাউন আর অ্যানটমিক্যাল ক্রাউন একটু নিচে, মাড়ি দিয়ে ঢাকা থাকে। তার ২-৩ মিমি নিচে দাঁতের মাড়ির হাড়ের উপরের অংশে অ্যালভিওলার টেস্ট থাকে। এই অ্যালভিওলার হাড়-পেরিওডনটার মেমব্রেন দ্বারা দাঁতের গোড়ার সঙ্গে যুক্ত থাকে। দাঁতে রুটের শেষে এক বা একাধিক সরু ছিদ্র পথে রক্তের নালী ও নার্ভ থাকে। সব দাঁত ১ মিমি মতো নড়ে। আবার চিবানোর সময় পেরিওডনটার মেমব্রেন শক্ত হয়ে দাঁতকে হাড়ের সঙ্গে শক্ত করে রাখে। চিবানোর সময় কতগুলো মাসল, জিভ, ঠোঁট তার নির্দিষ্ট কাজের মাধ্যমে খাদ্য বোলাস ইসোফেগাস হয়ে পাকস্থলীতে যায়। মুখের ভেতরের পরিবেশ লালায় ভিজে থাকে, যাতে কথা বলতে সুবিধা হয়। এই লালা জন্মের প্রথম থেকে মৃত্যু অবধি নির্দিষ্ট নিয়মে মুখের মধ্যে আসে। এ পর্যন্ত যা বলা হল তা দাঁত, মাড়ির গঠন ও কার্যগত দিকের।
দাঁতের সাধারণ রোগ থেকে কিভাবে? কীভাবে এদের প্রতিরোধ ও যতœ নেয়া যায় তার কথা বলি। দাঁতের প্রধানত তিন প্রকার রোগ আমরা লক্ষ করি-১) দাঁতের মধ্যে কালো কালো গর্ত হওয়া যা দন্তক্ষয় বা ক্যারিস বলে। ২) মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া যা আরও ভিতরের অংশে গেলে পচন ক্রিয়া হয়ে মুখে দুর্গন্ধ হয়। ৩) উপযুক্ত রোগগুলোর কারণ কী কী, তাদের প্রতিষেধক ব্যবস্থা কী কী-আমরা যে খাবার খাই তার কণাগুলো দাঁত ও মাড়ির ফাঁকে আটকে থাকে যাদের কাজে লাগিয়ে অতিসুক্ষ্ম জীবাণু (আনুবীক্ষণিক)সমূহ মুখগহ্বরে ছড়িয়ে পড়ে। আবার ঐ জীবাণুগুলো পরিবেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের পরিবর্তন ঘটায় ও ক্ষতিকারক শক্তি জোগাড় করে পাশের মাড়ি ও তার হাড়ের রোগ তৈরি করে বেঁচে থাকে। দন্তক্ষয় জীবাণুর দ্বারা আরম্ভ হয়ে টক্সিন এনামেলকে গলিয়ে কালো করে দেয়, পরে ভিতরের অংশে গেলে পাল্প টিস্যু যা একেবারে ভিতরে থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তখন অসম্ভব ব্যথা করে।
মাড়ির রোগের ক্ষেত্রে মাড়িগুলো একটু একটু করে ফোলে ও রক্তপাত হয়, পরে মুখে দুর্গন্ধ হয়, দাঁত নড়তে থাকে। প্রতিরোধ করতে গিয়ে লালার ক্যালসিয়াম ও বিভিন্ন যোগ ক্যালকুলাস ও টারটারে রূপান্তরিত হয়। মাড়ি নিচের দিকে নামতে থাকে, দাঁত বড় দেখায়, কখনও নড়ে যায়, অনেক সময় পড়েও যায়। সাধারণত লোকে বলে পায়োরিয়া হয়েছে। আধুনিক চিকিৎসায় এই রোগকে বলে পেরিওডনটাইটিস, যার সূচনা মাড়ির জীবাণুর সংক্রমণে আরম্ভ হয়ে ভিতরের দিকের পর্দা বা হাড়কে নষ্ট করে। এই প্রক্রিয়ায় খুব ধীরে ধীরে হাড় নষ্ট হয় তেমন ব্যথা বা যন্ত্রণা হয় না বলে রোগীরা চিকিৎসকের কাছে তেমন একটা যান না। ফলে অনেক বেশি পাথর ও টারটার জমে দাঁতের গোড়া আলগা হয় ও নড়িয়ে দেয়।
আর একটা রোগ হল মুখে ঘা, যা বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। খাদ্যের ভিটামিনের অভাব থেকে ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। মুখগহ্বরের ক্যানসার ৪০ রকমের। যার সঠিক চিকিৎসা, এককভাবে করে সারানো যায় না। শল্য চিকিৎসা, রশ্মি চিকিৎসা, কেমোথেরাপি ছাড়া বর্তমান জিন থেরাপিও হয় তবে তা আমাদের দেশে এখনও আরম্ভ হয়নি। এই রোগ ধূমপানীয়দের মধ্যে বেশি দেখা যায়। যারা খুব মদ্যপায়ী এবং পারিবারিক ইতিহাস আছে তাদের এই রোগ বেশি করে লক্ষ করা যায়। তাই যাতে রোগ না-হয় অর্থাৎ প্রতিষেধক কী কী ব্যবস্থা নেয়া যায় তার দিকগুলো তুলে ধরছি। দাঁত ও মাড়ির সংযোগস্থল ভালো করে পরিষ্কার না-করলে জীবাণুর কলোনি বা প্লাক জমে, যা পরে মাড়ির রোগ তৈরি করে। এটি যাতে না হয় তার দিকে সকলের সৃষ্টি দিতে হবে। রোগ প্রাথমিক স্তরে নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা দরকার। দাঁতে গর্ত হলে ফিলিং করে নেয়া দরকার। কর্কট রোগ প্রাথমিক ক্ষেত্রে নির্ণয় করে চিকিৎসা করা যায়। দাঁত যাতে নষ্ট না হয়, তারজন্য নির্দিষ্ট নিয়মে রাত্রে ও সকালে ব্রাশ করা উচিত। ম্যাসেজ করা অবশ্যই দরকার। প্রতি ছয় মাস অন্তর দাঁতের ডাক্তার দেখিয়ে প্রাথমিক স্তরেই রোগের চিকিৎসা করানো উচিত। সাংবাদিক-কলামিস্ট।
আফতাব চৌধুরী

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দাঁত ও মাড়ির যত্ম

২ নভেম্বর, ২০১৬
আরও পড়ুন