Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

গবাদিপশুর জন্য নিম্নমানের ওষুধ : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় দায় এড়াতে পারে না

| প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৮ এএম

বগুড়ায় গবাদিপশু মোটাতাজাকরণে নকল-ভেজাল ও মানহীন ওষুধ অবাধে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে যে খবর গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। জেলায় অর্ধ শতাধিক এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা প্রাণিসম্পদ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে নকল-ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন করছে। এব্যাপারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যথাযথ নজরদারি বহাল থাকলে এমনটি হওয়ার কথা নয়। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, নকল-ভেজাল ও মানহীন ওষুধ উৎপাদকরা কোটি কোটি টাকা মুনাফা লুটে নিলেও গবাদিপশু লালন-পালনকারীরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব ওষুধ ব্যবহারের ফলে অনেক সময় গবাদিপশুর কিডনি, ফুসফুস ও যকৃত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমন কি ক্ষেত্র বিশেষে পশুর মৃত্যুও হচ্ছে। ওদিকে অসুস্থ ও রোগাক্রান্ত গবাদিপশুর দুধ ও গোশত খেয়ে মানুষও কিডনি রোগ, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগব্যাধির শিকার হচ্ছে। স্থানীয় কিডনি ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ইদানিং কিডনি বিকল ও কোলন ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা বাড়তে দেখা যাচ্ছে। নকল-ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ খাওয়ানো গবাদিপশুর দুধ ও গোশত খাওয়াই এর কারণ হতে পারে। মন্ত্রণালয়ের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কতটা দায়িত্ব পালন করছে, এ থেকে সেটা সম্যক উপলব্ধি করা যায়। এ অনুমানও অসঙ্গত হবে না, শুধু বগুড়া নয়, দেশের অন্যান্য জেলাতেও অনুরূপভাবে নকল-ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাত হচ্ছে এবং তা গবাদিপশুর খামারি ও লালন-পালনকারীরা বুঝে বা না বুঝে ব্যবহার করছে। ফলাফলও একই রকম হওয়ার কথা। সবচেয়ে বড়কথা, জনস্বাস্থ্য এর ফলে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।

মাছ, হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশু উৎপাদনে দেশ ব্যাপক অগ্রগতি ও সাফল্য অর্জন করেছে। মাছ চাষ এবং হাঁস-মুগরি ও গবাদিপশু পালন বাণিজ্যিকভাবে হচ্ছে। উৎপাদন বৃদ্ধির এটাই প্রধান কারণ। দেশের সর্বত্র মাছ, হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর খামার গড়ে উঠেছে। এসব হাজার হাজার খামারে বিপুল বিনিয়োগ হয়েছে। আত্মকর্মসংস্থান ছাড়াও বহু লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। মোটকথা, মাছ, গোশত ও দুধের দিক দিয়ে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করার পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই মাছের দেশেও একসময় বিদেশ থেকে মাছ আমদানি করতে হয়েছে। মুরগির গোশতের অভাব দেখা গেছে। গবাদিপশুও বিপুল সংখ্যায় আমদানি করতে হয়েছে ভারত ও মিয়ানমার থেকে। চোরাই পথেও এসেছে আরো হাজার হাজার গবাদিপশু। অবশ্যই সে অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। মাছ এখন কমই আমদানি হয়। পল্ট্রিশিল্পের বিকাশে মুরগির ডিম ও গোশতের বিশাল যোগান আসছে প্রতিদিন। গবাদিপশুর আমদানি ও চোরাচালন বন্ধ হয়েছে। এই অর্জন ও সাফল্যের পেছনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা বা অবদান যতটা, তার চেয়ে অনেক বেশি ভূমিকা রয়েছে ভাগ্যপরির্বতনকামী লাখ লাখ উদ্যোক্তার। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে মন্ত্রণালয়ের সৃজনশীল ভূমিকা এবং সৎ ও নিষ্ঠ তত্ত্বাবধান সদাসক্রিয় থাকলে ওই দু’খাতে আরো উন্নতি ও অগ্রগতি হতো। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, মাছ, মুরগি ও গবাদিপশুকে কী খাওয়ানো হচ্ছে, তাদের দ্রুত বর্ধনে কী রকম ওষুধপত্র দেয়া হচ্ছে, চিকিৎসাতেই বা কী ধরনের ওষুধ ব্যবহৃত হচ্ছে, এসব সম্পর্কে দেশের মানুষ কমই জানে। বিভিন্ন সময় পত্রপত্রিকায় এই মর্মে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, মাছের খাদ্য হিসেবে ট্যানারিবর্জ্য, মুরগির খাদ্য হিসেবে একই বর্জ্য এবং আমদানিকৃত নিম্নমানের খাদ্য দেয়া হয়। খামারের মাছ ও মুরগির পুষ্টি ও ওজন বাড়ানোর জন্য ক্ষতিকর ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। একইভাবে গবাদিপশুর ক্ষেত্রেও হরমোন ইনজেকশনসহ নানা ধরনের ওষুধ খাওয়ানো হয়। এসব অখাদ্য-কুখাদ্য ও ওষুধের ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয় মাছ, মুরগি ও গবাদিপশুর ওপর। বলা বাহুল্য, ছয় মাসের বৃদ্ধি ১৫ দিনে, এক বছরের বৃদ্ধি তিন মাসে কিংবা তিন বছরের বৃদ্ধি এক বছরে হলে সবচেয়ে ক্ষতি হয় স্বাভাবিকতায়। এই অস্বাভাবিক পন্থায় বর্ধিত মাছ, মুরগি ও গবাদিপশুর গোশত থেকে প্রতিক্রিয়াও অস্বাভাবিক হতে বাধ্য।

যেহেতু খাদ্য মানহীন, মোটাতাজাকরণের ওষুধ নকল-ভেজাল ও নিম্নমানের, সুতরাং ওই ধরনের খাদ্য ও ওষুধে লালিত-পালিত মাছ এবং মুরগি ও গবাদিপশুর গোশত মানুষের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হওয়াই সম্ভব। মানুষের নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত ও মৃত্যু হওয়ার ঘটনা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্যোৎপাদনে প্রক্রিয়ায় মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কেমিক্যাল ও উপকরণ ব্যবহার, কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের মাত্রাতিরিক্ত প্রয়োগ, বোতল ও প্যাকেটজাত খাদ্য এবং ফলফলারী সংরক্ষণে বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার ইত্যাদির প্রতিক্রিয়া এজন্য বিশেষভাবে দায়ী। খাদ্য ও খাদ্যপণ্য বিশুদ্ধ, প্রাকৃতিক ও দূষণমুক্ত হওয়া দরকার এবং হতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। বিশ্বজুড়ে এ ধরনের খাদ্যপণ্যের চাহিদা ও কদর বাড়ছে। আমরাও এর বাইরে থাকতে পারি না। কৃষি, খাদ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, বাণিজ্য প্রভৃতি মন্ত্রণালয়কে এব্যাপারে স্ব স্ব দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসতে হবে। আলোচ্য ক্ষেত্রে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় কোনোভাবেই তার দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। আমরা আশা করবো, মন্ত্রণালয়ের তরফে অবিলম্বে বগুড়ায় গবাদিপশু মোটাতাজাকরণে ব্যবহৃত নকল-ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদন-বিপণন বিষয়ে দ্রুত তদন্তের ব্যবস্থা করা হবে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের স্থানীয় দায়িত্বশীলদেরও তদন্তের আওতায় আনতে হবে। এ ব্যাপারে দেশজুড়ে তদন্ত হওয়া আবশ্যক বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। তাদের অভিমত গ্রাহ্যতা পাওয়ার অধিকার রাখে বলে আমরা মনে করি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গবাদিপশু


আরও
আরও পড়ুন