Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভিসি হওয়ার দৌঁড়ে এগিয়ে ‘রাজনৈতিক’ শিক্ষকরা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় উপেক্ষিত গবেষক-শিক্ষাবিদরা

মাহবুব আলম | প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৪ এএম

দেশের প্রথম নারী ভিসি প্রফেসর ফারজানা ইসলামের দ্বিতীয় মেয়াদ আগামী ২ মার্চ শেষ হবে। বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও প্রথা অনুযায়ী তৃতীয় মেয়াদে কোনো ভিসি থাকার নজির নেই। ফলে নতুন বসন্তে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯তম ভিসি কে হবে তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকদের বেশ কয়েকজন ভিসি হওয়ার তদবির করছেন। যাদের প্রত্যেকেই নিজেদের কর্মজীবনে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। অন্যদিকে গবেষক-শিক্ষাবিদ হিসেবে পরিচিত শিক্ষকরা ভিসি হওয়ার দৌঁড়ে পিছিয়ে রয়েছে।

প্রচেষ্টারত এসব শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রফেসর এম এ মতিন, লোক প্রশাসন বিভাগের প্রফেসর আবুল কাশেম মজুমদার, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর নুরুল আলম, অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর আমির হোসেন, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর শেখ মঞ্জুরুল হক, নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর রাশেদা আখতার, পরিসংখ্যান বিভাগের প্রফেসর অজিত কুমার মজুমদারসহ প্রমুখ।
এর বাইরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে সিনিয়র প্রফেসর ও শিক্ষাবিদ রয়েছেন। যারা নিজেদের বিষয়ে গবেষণা, শিক্ষা কার্যক্রমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর এএ মামুন, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর সুফি মোস্তাফিজুর, প্রফেসর একেএম শাহনেওয়াজসহ প্রমুখ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদটি অতিমাত্রায় রাজনৈতিক রুপ লাভ করেছে। যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় সরকারের সহজ অপশন ‘রাজনৈতিক’ শিক্ষকগণ। পূর্বে যেসব শিক্ষকগণ ক্ষমতাসীন দলের লেজুড়বৃত্তিক শিক্ষক সংগঠনের প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলো তাদেরকেই এক্ষেত্রে প্রাধান্য দেয়া হয়। এতে ক্যাম্পাসের শিক্ষক রাজনীতি স্থিতিশীল থাকে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সিনিয়র প্রফেসর বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করে এমন শিক্ষাবিদদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন রাজনীতির সাথে জড়িত আছে বা ছিলো। জাহাঙ্গীরনগরেও অনেক ভালো গবেষক রয়েছে যারা শিক্ষক রাজনীতি করছে। কিন্তু ভিসি পদটি অনেক বেশি প্রশাসনিক। তাই এখানে রাজনৈতিক পরিচয়, গবেষক-শিক্ষাবিদ ইত্যাদি বিবেচনার থেকে একজন দক্ষ প্রশাসক ও গুনী শিক্ষক ভিসির জন্য চলনসই।’
বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাকিবুল রনি বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রভাব এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগের ক্ষেত্রে যারা এগিয়ে থাকেন তাদেরকে ভিসির গদিতে বসানো হয়। এতে সরকারের আশীর্বাদপ্রাপ্ত দলীয় শিক্ষক এজেন্ডা নিয়ে ভিসির চেয়ারে বসেন। দলীয় নির্দেশনা বাস্তবায়ন, দলীয় শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদান ব্যস্ত থাকেন তিনি। এমনকি ভাগ-বাটোয়ারা সংক্রান্ত ঝামেলা মিটিয়ে নিজের পদ বাঁচাতে ব্যস্ত থাকতে হয় ভিসিকে। ফলে তার সময় থাকেনা শিক্ষার্থীসহ ক্যাম্পাসের অন্যান্য অংশীজনদের নিয়ে ভাববার। কাজেই বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষা ও গবেষণায় অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবার আগ্রহ ও সামর্থ আছে এমন একজন শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে দরকার।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগরের নতুন ভিসি হিসেবে একজন দক্ষ প্রশাসক ও পরিচালক প্রত্যাশা করি। যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ও গবেষণায় অসামান্য অবদান রাখতে পারবেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখবেন।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ সৃষ্টি করা সরকারের অগ্রাধিকারে নেই। কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আবাসিক হল নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় সেটিই সরকারের মুখ্য বিষয়। গবেষক-শিক্ষাবিদরা নিয়োগ পেলে সরকারের চাহিদা পূরণ হবে না। যার কারণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিষয়টিও এখানে উপেক্ষিত হয়ে পড়ে। তাই সরকারকে সেবা দিতে রাজি যেকোনো আদর্শের শিক্ষক এক দশক ধরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হচ্ছে।’

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানায়, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির মেয়াদ শেষ হওয়ার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ অবগত রয়েছে। এ সংক্রান্ত কোন প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। আমাদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাব্য সকলের বিষয়ে তথ্য আছে। সে অনুযায়ী আচার্যের কাছে সুপারিশ করা হবে। মহামান্য আচার্য এব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তবে বর্তমান ভিসির মেয়াদ শেষ হলেই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতে একজনকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ