Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আফগানিস্তানের জব্দ অর্থ সম্পর্কে গ্লোবাল টাইমস

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৫ এএম

আফগানিস্তানের জীবন-রক্ষাকারী অর্থ ফেরত দিতে সহায়তা করা উচিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের এক সম্পাদকীয়তে এই আহ্বান জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, সোমবার সতর্কতা দিয়েছে আফগান তালেবানরা। তারা বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে জমা থাকা আফগানিস্তানের সম্পদ অন্যায়ভাবে জব্দ রাখার সিদ্ধান্ত যদি মার্কিন প্রশাসন পরিবর্তন না করে তাহলে তারা মার্কিনিদের প্রতি তাদের নীতি পুনর্বিবেচনা করবে। ওই সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা আফগানিস্তানের ৭০০ কোটি ডলার জব্দ রাখার নির্বাহী আদেশে গত শুক্রবার স্বাক্ষর করেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। উপযুক্ত স্থানে এই অর্থ ব্যবহার করা হবে। ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন যারা, তাদের ক্ষতিপূরণে ব্যয় হবে এই সম্পদের অর্ধেক। বাকি অর্ধেক ব্যবহার করা হবে আফগান জনগণের কল্যাণে একটি ট্রাস্ট গঠনে। এই সিদ্ধান্তে শুধু যে আফগানিস্তানে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে- এমন নয়। একই সাথে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে। গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়েছে, গত বছর আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই সম্পদ জব্দ করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ব্যাপক উদ্বেগ প্রকাশ করে। কারণ, কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই অন্য দেশগুলোর সম্পদ অতীতে জব্দ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে দেখা দিয়েছে মানবিক সঙ্কট। তাই যুক্তরাষ্ট্র যা করেছে তা জনগণের কল্পনার বাইরে। অর্থ ফেরত দেয়ার পরিবর্তে, তা নিজেদের খেয়ালখুশি মতো বন্টন করেছে। সবচেয়ে খারাপ বিষয় হলো, ৯/১১ এর ভিকটিমদের জন্য ৩৫০ কোটি ডলার দেয়ার অর্থ হলো, তা যুক্তরাষ্ট্রের নিজের পকেটেই ঢুকানো। ওই সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়েছে, নিজের দেশের আইন দিয়ে অন্য দেশের সম্পদ খেয়ালখুশি মতো ব্যবহার করার, হোক সেটা জব্দ করা বা সরাসরি বন্টন করা- এর কোনো অধিকার নেই যুক্তরাষ্ট্রের। এতে আইনগত ভিত্তি এবং নৈতিকতার ঘাটতি আছে। বর্বরোচিত বিষয় হলো, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দেশ নগ্নভাবে সবচেয়ে দরিদ্রতম একটি দেশের সম্পদ লুট করতে পারে এবং তা ২০২২ সালেও ঘটতে পারে। এটা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও একবার স্মরণ করিয়ে দেয় যে, যুক্তরাষ্ট্রের হাতে আর্থিক আধিপত্য বিপজ্জনক ও বিশ্বের জন্য অস্থিতিশীল। এটা বন্ধ হওয়া উচিত। এতে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ৭০০ কোটি ডলার খুব বড় কিছু নয়। এটা দিয়ে তারা সম্ভবত তিনটি বি-২ বোমারু বিমান কিনতে পারে। কিন্তু আফগান জনগণের কাছে এর অর্থ হলো জীবন বাঁচানো। জাতিসংঘে আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ডেবোরা লিয়নস সতর্ক করেছেন এই বলে যে, বিদেশে আফগানিস্তানের সম্পদ জব্দ করার অর্থ হলো দেশটিকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম পিছনে নিয়ে যাওয়া। বর্তমানে দেশটির অর্ধেকের বেশি মানুষ চরম অনাহারে ভুগছেন। অপুষ্টিতে ভুলে মারা যাচ্ছে লাখ লাখ শিশু। তারা চিকিৎসা পাচ্ছে না। শিক্ষা এবং সামাজিক সেবাখাতগুলো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এ সময়ে আফগানিস্তানের জনগণের অর্থ লুটে নেয়ায় কি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকদের বিবেকে আঘাত করবে না? অন্যভাবে বলা যায়, মার্কিন রাজনীতিকদের কি বিবেক এখনও আছে? পরিসংখ্যান বলছে, যুদ্ধের সময় আফগানিস্তানের কমপক্ষে ৩০ হাজার বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন অথবা মারা গেছেন। প্রায় এক কোটি ১০ লাখ মানুষ শরণার্থী হয়েছেন। আফগানিস্তানের এসব ভিকটিমের ক্ষতিপূরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ৭০,০০০ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা বাজেটের একটি অংশ কি ব্যবহার করা উচিত নয়? আফগানিস্তানের জীবন রক্ষাকারী সম্পদ আটকে রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা জানিয়েছে চীন, রাশিয়া ও পাকিস্তানের মতো দেশ। পক্ষান্তরে মানবাধিকার ও আইনের শাসন নিয়ে পশ্চিমা যেসব দেশ প্রতারণা করে, তারা রয়েছে নীরব। আফগান জনগণের দুর্দশা বাড়িয়ে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আরও একবার প্রমাণ করে দিয়েছে যে, কথিত আইনভিত্তিক আন্তর্জাতিক অর্ডার দুর্বলদের জন্য নয়। এটা শুধু শক্তিধর ও আধিপত্যবাদদের জন্য। গ্লোবাল টাইমস।



 

Show all comments

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ