Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শব্দদূষণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর

| প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:১২ এএম

ঢাকা, সিলেটসহ সমগ্র দেশ ভয়াবহ শব্দদূষণের কবলে নিপতিত। শহরই হোক, আর গ্রামাঞ্চলই হোক, শব্দদূষণ এখন অলিতে-গলিতে ছড়িয়ে পড়েছে। শব্দদূষণের মাত্রা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করছেন। শব্দদূষণে অতীষ্ট নগরবাসী। কিছুতেই আমাদের দেশে দমানো যাচ্ছে না শব্দদূষণ। শব্দদূষণের ফলে মানবদেহে নানা রোগ ব্যাধির জন্ম হচ্ছে। যেমন- মানুষের হার্ট, কিডনি এবং মস্তিষ্কের ওপর দারুণ ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করছে উচ্চ মাত্রার শব্দ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন শব্দদূষণের ফলে কানে কমশোনা, গ্যাস্ট্রিক ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। আমাদের দেশে শব্দদূষণের প্রভাব সামগ্রিকভাবে ব্যাপক। অনেক ক্ষেত্রে তা অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলছে। যাঁরা অসুস্থ হচ্ছেন, তাঁদের স্বাস্থ্য ব্যয় হচ্ছে। অসুস্থতার কারণে অনেকে কর্মক্ষেত্রে আবার শিক্ষার্থীরা স্কুলে অনুপস্থিত থাকছে, এর অর্থনৈতিক প্রভাব রয়েছে।

শব্দদূষণ এ নীরব ঘাতক। অথচ এই সমস্যা সমাধানের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সচেতনতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। উৎপাদনশীলতার ওপর শব্দদূষণের প্রভাব পড়ে। ঘুমের ব্যাঘাতের কারণে ঠিকমতো কাজ না করতে পারলে উৎপাদন কমে যায়। শব্দদূষণের প্রভাবে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুর আশঙ্কা প্রকট হয়। উৎপাদনের পাশাপাশি কাজের পরিসর সংকুচিত হতে থাকে। শব্দদূষণের কারণে স্বাস্থ্য ব্যয়ের পাশাপাশি কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ায় দেশের জিডিপিতে প্রভাব পড়ছে। শব্দদূষণ বন্ধে বিদ্যমান আইনের কতটা প্রয়োগ হচ্ছে, সেটি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

অযথা হর্ন বাজানোর কারণে কত টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়, তার সামগ্রিক কোন গবেষণা নেই। এ বিষয়ের গবেষণালব্ধ ফল নিয়ে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারণ করা উচিত ছিল। অথচ কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। শব্দ বিজ্ঞানের মতে, মানুষের কথা বলার স্বাভাবিক শব্দমাত্রা ৬০ ডেসিবেল। কারও ট্রাকের সাধারণ হর্ন ৭০ থেকে ৯০ ডেসিবেল। অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, হাইড্রোলিক হর্ন ১২০ ডেসিবেল। ১২০ ডেসিবেল মাত্রার হর্ন মস্তিষ্ক ও কানের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যু, অকালপ্রতিবন্ধী, মস্তিষ্কবিকৃতি, অল্প বয়সে বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদির অন্যতম প্রধান কারণ হর্নের শব্দ। অর্থাৎ হর্ন এখন নাগরিক জীবনের সবচেয়ে বড় যন্ত্রণা। মানুষের স্বাস্থ্যহানি হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয় হর্নের কারণে। হর্ন বাজানোকে বহুমাত্রিক সমস্যা হিসেবে দেখা দরকার। কারণ, এটি শুধু হর্ন বাজানো নয়, বরং সমস্ত পরিবেশ, আইনকানুন, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, নীতিনির্ধারকদের চিন্তা সবকিছুই এর সঙ্গে জড়িত। যখন একেকটা হর্ন বাজানো হয়, তখন কানে প্রায় তালা লাগে। বাংলাদেশের শহরগুলোতে হর্নের মাত্রা সাধারণত ৭০ থেকে ১২০ ডেসিবেলের মধ্যে হয়ে থাকে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে। এর ফলে দীর্ঘ মেয়াদে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের শেখার ক্ষমতা, আইকিউ কমে যায়। তারা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। গর্ভবর্তী ও তাঁর গর্ভের সন্তানের সমস্যা হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০০৬-এ ঘোষণা করেছে নীরব এলাকা, মিশ্র এলাকা, আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা ও শিল্প এলাকা। তবে নির্ধারিত মানমাত্রা কোথাও বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। মোটরসাইকেলের ব্যবহার বেড়েছে, যা হর্নের বড় উৎস। এক তথ্যমতে ৭৫ ভাগের বেশি শব্দদূষণের উৎস হলো মোটরসাইকেল। মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা লেন করা গেলে অযথা হর্ন বাজানো নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হতো।

গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে প্রতি পাঁচজনে একজন কানে কম শোনেন। যাঁরা কানে কম শুনছেন, তাঁদের ৮০ শতাংশ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে বাস করেন। এ সচেতনতার জন্য বিভিন্ন দেশ বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। আমাদেরও তেমন উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। শব্দদূষণ থেকে মুক্তি পেতে আমাদের মনমানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। এসংক্রান্ত আমাদের যে আইন আছে, রেডিও-টেলিভিশনে তার ব্যাপক প্রচার করতে হবে। যত্রতত্র পারাপারে পথচারীদের শৃঙ্খল করতে হবে। তবে প্রথমেই সরকারের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের এগিয়ে আসতে হবে। জনগণকে অযথা হর্ন ব্যবহার বন্ধে সচেতন করতে বয় স্কাউট, গার্ল গাইডস, রেড ক্রিসেন্ট, বিএনসিসি, বন্ধুসভার মতো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে কাজে লাগাতে হবে। শ্রমণশক্তি কমে যাওয়া রোধে বৈশ্বিকভাবে আলোচনা হচ্ছে এবং বিশ্বব্যাপী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। নীতি প্রয়োগ ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে আমাদের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন শব্দদূষণ থেকে বাঁচতে পারে, তার জন্য কাজ করতে হবে। অকারণে হর্ন বাজানো বন্ধে নীতিমালা বাস্তবায়ন ও জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করি, দেশকে শব্দদূষণমুক্ত জাতি হিসাবে গড়ে তুলতে সরকার বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অতএব, অবিলম্বে সারাদেশে শব্দদূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং দ্রুত কিছু না করলে সামনে সমূহ বিপদ।

মো. লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট,
মোবাইল: ০১৭১৬-২৭০১২০।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শব্দদূষণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর
আরও পড়ুন