Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শস্যের নিবিড়তায় কৃষকের বাড়ছে আয় ঘটছে আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন

প্রকাশের সময় : ১০ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গোপালগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সবেজমিন গবেষণা বিভাগের পিরোজপুর-গোপালগঞ্জ-বাগেরহাট সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৩ জেলার সাড়ে ২১ হাজার কৃষক আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। তারা দু’ফসলি জমিকে তিন ফসলি ও তিন ফসলি জমিকে ৪ ফসলি জমিতে রূপান্তরিত করে শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধি করেছে। বসতবাড়ির আঙ্গিনায় সারা বছর সবজি ও ফলের আবাদ করে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করছেন। ফসলের উৎপাদন বাড়িয়ে তারা আয় বৃদ্ধি করেছেন। তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার হরিদাসপুর গ্রামের কৃষক জিল্লুর রহমান বলেন, আমাদের এলাকার কৃষিতে বিভন্ন সমস্যা রয়েছে। এ কারণে আগে কৃষিকাজ ছিল অলাভজনক। কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে এ প্রকল্প প্রথমে আমাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। পরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) বিজ্ঞানীদের সদ্য উদ্ভাবিত উন্নত জাতের ধান, গম, ভূট্টা, আলু, পাট, তৈলবীজ, ডাল, বিটি বেগুন, সমার টমেটো ও মসলা বীজ প্রদান করে। চাষাবাদের আধুনিক প্রযুক্তির সাথে উচ্চফলনশীল বীজ পেয়ে আমরা দু’ফসলি জমিকে তিন ফসলি ও তিন ফসলি জমিকে ৪ ফসলি জমিতে পরিবর্তন করেছি। অধিক ফসল উৎপাদন করে আয় বৃদ্ধি করেছি। এলাকার নারী ও শিশুর মৌসুমী কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। আমার দেখাদেখি অনেক কৃষক লাভজনক চাষাবাদে ঝুঁকে পড়েছেন। প্রকল্পটি আমাদের ৩ জেলার কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। শুনেছি ২০১৭ সালের জুন মাসে এ প্রকল্প শেষ হচ্ছে। প্রকল্পটির মেয়াদ আরো ৫ বছর বৃদ্ধি করা হলে পশ্চাদপদ এ তিন জেলার কৃষির ব্যাপক উন্নতি সাধিত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। মুকসুদপুর উপজেলার কদমপুর গ্রামের কৃষক ওবায়দুর রহমান বলেন, এ প্রকল্প অব্যবহৃত জমিতে বারি উদ্ভাবিত জাতের আম, মাল্টা, কুল, লিচু, পেয়ারা, সফেদা ও কলার বাগন সৃজন করেছে। কৃষকের বসতবাড়ির আঙ্গিনায় সবজি ও ফলের আবাদ সম্প্রসারণ করে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। অব্যহৃত জমিতে ফল ও বসতবাড়ির আঙ্গিনায় সবজির আবাদ করে আমরা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে অধিক মুনাফা ঘরে তুলছি। প্রকল্পের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভৌগোলিক কারণে দক্ষিণের পিরোজপুর-গোপালগঞ্জ-বাগেরহাট জেলার কৃষি পরিবেশিক ভিন্নতা রয়েছে। এ অঞ্চলের কৃষি নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। এ কারণে ফসলের উৎপাদন ভালো হতো না। তাই বারি কৃষকের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, মাঠ দিবস, খাদ্য নিরাপত্তা, প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি জন্য ৫ বছর মেয়াদি সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে। ২০১৩ সালে প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ১ বছর পর ২০১৪ সালে কাজ শুরু হয়। ৩ জেলার ২১ হাজার ৫০০ কৃষক এ প্রকল্প থেকে সাবলম্বী হয়েছেন। এ অঞ্চলের কৃষির ক্ষেত্রে সবুজ বিপ্লব সাধিত হয়েছে। উৎপাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে উন্নত চাষাবাদের পাশাপাশি বারির উচ্চফলনশীল বীজ সংরক্ষণের কৌশল শিখিয়ে দেয়া হয়েছে। এ কৌশল তারা কাজে লাগাতে পারলে এ অঞ্চলে কৃষি ও কৃষকের কোনো সমস্যাই থাকবে না। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধŸতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এইচএম খায়রুল বাসার বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় কৃষককে খাপখাইয়ে নেয়াসহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করছি। পানির উপর ভাসমান চাষাবাদ, ব্যাগিং পদ্ধতি, সেক্সফেরোমেন পদ্ধতিসহ কৃষির সব ধরনের প্রযুক্তি আমরা কৃষকদের হাতে-কলমে শিখিয়েছি। কৃষকরা এগুলো গ্রহণ করে ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি করে আর্থ-সমাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। এ প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শস্যের নিবিড়তায় কৃষকের বাড়ছে আয় ঘটছে আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ