Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

গরুর গোশতের দাম রহস্যজনক বৃদ্ধি

দেশে গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৮৫ লাখ : বিবিএস দরিদ্র পরিবারে পবিত্র ঈদুল আজহা ছাড়া গরুর গোশত পাতে ওঠে না

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ মার্চ, ২০২২, ১২:০০ এএম

ভোজ্যতেল, জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে গরু লালন-পালনের তেমন সম্পর্ক নেই। বিদেশ থেকে গরু আমদানিও হয় না। দেশের চরাঞ্চলে শত শত খামারে প্রচুর সংখ্যায় গরু প্রতিপালন করছে কৃষকরা। কিন্তু অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে হঠাৎ করে বেড়ে গেছে গরুর গোশতের দাম। পবিত্র মাহে রমজানকে সামনে রেখেই কি অসাধু ব্যবসায়ী কসাই সিণ্ডিকেট গরুর গোশতের দাম বাড়িয়ে দিল? নাকি অন্য কোনো কারণে গরুর গোশতের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে তা রহস্যজনক।

রাজধানীতে বর্তমানে প্রতিকেজি গরুর গোশত ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বেশির ভাগ এলাকায় দাম ৭০০ টাকা। এক কেজি গোশত কিনলে হাড় ও চর্বি বাদ দিলে থাকে ৬০০ গ্রাম গোশত। গত এক সপ্তাহ আগেও এই গোশত বিক্রি হয়েছে ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি।
ক্রেতারা বলছেন, শবে বরাতের দিন থেকে বেড়ে যাওয়া গরুর গোশতের দাম আর কমবে কিনা তা অনেকটাই অনিশ্চিত। কারণ, এই দেশে কোনও জিনিসের দাম একবার বাড়লে আর কমে না। তবে ঠিক কোন কারণে গরুর গোশতের দাম বেড়েছে তা জানেন না কেউই। কসাই বলছেন বেশি দামে গরু কিনতে হয়। ক্রেতারা বলছেন গরুর গোশতের দাম বৃদ্ধি রহস্যজনক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর যেকোনও বাজারে এখন নিম্নমানের এক কেজি গরুর গোশত ৬৫০ টাকার কম পাওয়া যায় না। ফকিরেরপুল, নিউ মার্কেট, হাতিরপুল, যাত্রাবাড়ি, শান্তিনগর বাজারে গরুর গোশতের দোকানগুলোতে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা দরে। শনির আখড়া বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা দরে। তবে আসন্ন রমজান এবং ঈদে কি দামে গরুর গোশত বিক্রি করা সম্ভব হবে তা নির্ভর করছে বাজারে গরু সরবরাহের ওপর।
গোশত বিক্রেতারা জানিয়েছেন, চড়া দামের কারণে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো গরুর গোশত কিনে খাওয়ার সামর্থ্য হারিয়েছেন। ফলে মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তরাই এখন গরুর গোশতের মূল ক্রেতা। এক কেজি গোশত ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা দিয়ে কেনার সামর্থ্য রাখে এমন মানুষ এখন হাতে গোনা। কারণ, চার থেকে পাঁচ সদস্যের পরিবারের জন্য এক কেজি গোশত কেনা অসম্ভব।

বিক্রেতারাও এখন আর এক কেজি গোশত বিক্রি করতে চায় না। এ ক্ষেত্রে কম পক্ষে দুই কেজি গোশত কিনতে ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকার প্রয়োজন হয়। এমন সামর্থ্যবান মানুষের সংখ্যা কমেছে। মাঝারি আয়ের চাকরিজীবীদের রান্নাঘরে গরুর গোশতের প্রবেশও মাঝে মধ্যে ঘটে। দরিদ্র পরিবারে পবিত্র ঈদুল আজহা ছাড়া গরুর গোশত পাতে ওঠে না।
জানতে চাইলে গাবতলী হাটের গরু ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন জানিয়েছেন, বহুদিন থেকে ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ। খামারিরা এখন গরু বিক্রি করতে চায় না। কারণ, তিন মাস পরই কোরবানি। তারা খামারে লালনপালন করা গরু বিক্রির জন্য কোরবানির বাজার ধরতে চায়। এ কারণে বাজারে গরুর সরবরাহ কমেছে। অপরদিকে দেশের অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে গরুর খাদ্যের দামও বেড়েছে। শুষ্ক ঋতু বলে এখন লতাপাতা ঘাস বা খড় নেই। খামারে লালন করা গরুর জন্য দোকান থেকে কেনা খাদ্যই ভরসা। ফলে গরুর দাম বেড়েছে। আর গরুর দাম বাড়লে গোশতের দাম বাড়বেই যা খুবই স্বাভাবিক।

রাজধানীর কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায় গরুর গোশত কেনার কাস্টমার কমেছে। আগে যারা প্রতি সপ্তাহে ২ কেজি গোশত কিনতেন তারা এখন মাসে হয়তো একবার ২ কেজি গোশত কিনছেন। মাসের বাকি সময় তারা এখন ব্রয়লার বা সোনালি মুরগির কেনেন বলে জানিয়েছেন তিনি। চাল, ডাল, তেল, চিনির দাম বৃদ্ধিও বাজারের অন্যান্য জিনিসে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন কসাইরা। সীমিত আয়ের লোকজনের গরুর গোশত কেনার সাধ্য নেই বললেই চলে। যদিও দেশে গরুর গোশতের উৎপাদন বাড়ছে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাবে, ঢাকায় ২০১৪ সালে এক কেজি গরুর গোশতের গড় দাম ছিল ৩০০ টাকা। ওই সময় মাঝারি আকারের দেশি মুরগির প্রতি কেজি দাম ছিল ৩১৭ টাকা। ২০১৮ সালের সর্বশেষ হিসাবে, দেশি মুরগির গড় দাম ৩৫২ টাকায় ওঠে। আর গরুর গোশতের গড় দাম ৫২৭ টাকায় ঠেকে। ক্যাবের হিসাবে, গত বছরের অক্টোবরে গরুর গোশতের গড় দাম ছিল প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা।
নরেন্দ্র মোদি সরকার ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ করে দেয়ার পর গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে অনেক গরুর খামার হয়েছে। তরুণদের অনেকে বড় খামার করে উদ্যোক্তা হয়েছেন। কয়েক বছর ধরে নিজেদের গরুতেই ঈদুল আজহার বিপুল চাহিদা মিটছে। তবে তা দিয়ে বছরের অন্য সময়ের চাহিদার কতটুকু মিটছে তা অবশ্য অনেকটাই অদৃশ্য রয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, দেশে এখন গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৮৫ লাখের মতো। ২০১৮ সালে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর হিসাব দিয়েছিল, তখন গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৩৯ লাখ ছিল।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব শাহ ইমরান বলেন, পশুখাদ্যের দাম খুবই চড়া। বাণিজ্যিকভাবে পশুখাদ্যের সরবরাহ বাড়িয়ে দাম নাগালে না আনলে খামারে গরু পালন লাভজনক হবে না। আর লাভজনক না হলে খামারিরা নিরুৎসাহিত হবেন।



 

Show all comments
  • Salman Farsi ২৭ মার্চ, ২০২২, ৮:২১ এএম says : 0
    দাম আরো বাড়ুক সাথে সাথে মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও পাল্লা দিয়ে বাড়বে, এগুলো আমাদের মাননীয় মন্ত্রীদের ভবিষ্যদ্বাণী ।
    Total Reply(0) Reply
  • Muzahid Parvez ২৭ মার্চ, ২০২২, ৮:২১ এএম says : 0
    তারপরেও কতগুলো পাগলছাগল আছে ওরা চায় গরুর দাম আরো বাড়ুক। গরুর দাম বাড়লে নাকি গরীবগুলো বড়লোক হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Jamil Khondokar ২৭ মার্চ, ২০২২, ৮:২১ এএম says : 0
    সব মানুষের দোষ তাদের ক্রয়ক্ষমতা এতো বেশী কেনো
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গরুর গোশত

৫ এপ্রিল, ২০২২
২১ ডিসেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ