Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাদুকরের জন্য অপেক্ষা

প্রকাশের সময় : ১৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শাহনাজ বেগম
পাখি উড়ে গেলেও পলক ফেলে যায় আর মানুষ চলে গেলে ফেলে রেখে যায় স্মৃতি।
এটা নন্দিত লেখক-নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের। আজ তার জন্মদিন। উনি আর আমাদের মাঝে নেই, তবে রেখে গেছেন অগণিত ভক্ত-পাঠক-দর্শক। অনেকের মতই শিক্ষক আনামুল হক একজন হুমায়ূন ভক্ত। প্রতি বছর বই মেলায় তার চোখ খুঁজে ফেরে হুমায়ূন আহমেদকে আর তার নতুন বইয়ের সন্ধানে চষে বেড়ান মেলার স্টল থেকে স্টলে। সম্পা আর সামিরও একই কথা। হুমায়ূন আহমেদের লেখা পড়তাম আর বই মেলার অপেক্ষা করতাম একনজর কাছ থেকে দেখার। বুক স্টলে বসে থাকা জনপ্রিয়তার তুঙ্গস্পর্শী এমন একজন লেখককে দেখে বিস্মিত আর অভিভূত হতাম। ভেবে কুল কিনারা পেতাম না একটা মানুষ কিভাবে আরেকটা মানুষের চিন্তার বহিঃপ্রকাশ এত সুন্দর করে বলতে পারে! উনি তো রসায়নের শিক্ষক। কিভাবে নান্দনিক সাহিত্যিক হয়ে উঠতে পারেন। উনাকে সত্যিকারের একজন শব্দ জাদুকর মনে হয়। এত মায়া নিয়ে কেউ কখনো লিখছে বলে আমার জানা নেই। হারিয়ে যাওয়া মানুষ ফিরে আসলে সে আর আগের মত থাকে না... কেমন জানি অচেনা-অজানা হয়ে যায়। সবই হয়তো ঠিক থাকে কিন্তু কি যেন নাই, কি যেন নাই।
সাহিত্য জগতে অনেক ফাঁকা ফাঁকা লাগে বলে আক্ষেপ পাঠকদের মধ্যে হুমায়ূন ভক্ত জেনিফার। প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের ছাত্রী। জেনিফারের মতে আমি তার অন্ধ ভক্ত। নব বই কালেকশন করে রেখেছি। ইচ্ছে হলেই একটা বের করে পড়তে থাকি। পড়া বই পড়তেও ভাল লাগে। একটা বইয়ের কিছু অংশ তুলে ধরেলেন জেনিফার, একটা মানুষ মারা তেমন জটিল ব্যাপার না। ডেডবডির গতি করাই হচ্ছে সবচে জটিল কাজ। তবে সব ব্যবস্থা আছে। আমি হুট করে কিছু করি না, যা করি ভেবেচিন্তে করি। রুবাক কি করে মারব তা নিয়ে আমি খুব কম করে হলেও এক মাস ভেবেছি.... লোমকুপে শিহরণ জাগানো ভয় আর উদ্বেগ। এই নিয়ে উপন্যাস- যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ! অসাধারণ লেখনী আর জাদুকরী ভাব ভাষার সংমিশ্রণে তৈরী করেছেন মেঘ বলে যাব যাব, ঘুণ পোকা, নন্দিত নরকে। এছাড়াও ৫টি চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘দুই দুয়ারী’, ‘আমার আছে জল’ ও ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’। সিনেমা হল বিমুখদের হলমুখী করেছেন। রসাত্মক নাটক তৈরি করে টেলিভিশনের পর্দায় চোখ আকৃষ্ট করেছেন সাধারণ সব মানুষকে। সে সব আজ স্মৃতি, তার আবির্ভাব হয়ত খুবই অল্প সময়ের জন্য, অথবা ভুল সময়ে। কিংবা খুবই দেরিতে আর না হয় সব সময়ের জন্য। সবই যেন তাকে নিয়েই বলা যায়।
বাংলা নাটকের দৃশ্য আমাদের ড্রইং রুমে। পাপা সিবি আনে আর অমরা ভাইবোন মিলে বসে যায় নাটক দেখতে। কতবার যে দেখেছি উড়ে যায় বকপক্ষী তার ঠিক নেই। সেসব দিনগুলি খুব মিস করি বলে জানালো কলেজ ছাত্র মেহরিন।
সমকালীন বাংলা সাহিত্যের জননন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের ৬৮তম জন্মদিন আজ। তিনি মধ্যবিত্ত জীবনের কথকতা সহজ-সরল গদ্যে তুলে ধরে পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন। গল্প উপন্যাস ছায়াছবি আর হাসির অসংখ্য নাটক উপহার দিয়েছেন। অল্প জীবনে এত কিছুর সম্ভার তিনি রেখে গেছেন যা এখনও আমাদের জীবনে নিত্য দিনের খোরাক যোগাচ্ছেন।
১৯৭২ সালে প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস নন্দিত নরকে দিয়েই হুমায়ূন আহমেদ কথাসাহিত্যে পালাবদলের সাক্ষী। এরপর একের পর এক উপন্যাসে পাঠকের কাছে নন্দিত হয়ে উঠেছেন অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা নিয়ে। আমৃত্যু সেই জনপ্রিয় লেখকের স্রোতে ভাটার টান পড়েনি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাদুকরের জন্য অপেক্ষা

১৩ নভেম্বর, ২০১৬
আরও পড়ুন