Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জন্ম-মৃত্যু নৌকাতেই

শাহ নেওয়াজ, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) থেকে | প্রকাশের সময় : ১২ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৪ এএম

আজ এ ঘাটে, কাল ওঘাটে। জোয়ার ভাটার ছন্দে চলে জীবন। জন্মের পর থেকেই নৌকায় বেড়ে ওঠা। নৌকাতেই হয় বিয়ে এবং সংসার। মৃত্যুও হয় নৌকায়। বলছিলাম মান্তা সম্প্রদায়ের কথা। যুগ যুগ ধরে মুসলিম এই সম্প্রদয়ের লোকেরা নৌকায় বসবাস ও নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।
সম্ভল বলতে একটি কাঠের নৌকা ছাড়া আর কিছুই নেই। মৃত্যুর পরে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া কিংবা নদীর কিনারে পুতে ফেলা হয় মানতা সম্প্রদয়ের লোকদের। নদীতে ভাসমান এই মুসলিম জনগোষ্ঠী প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বুড়াগৌরাঙ্গ, দাড়চিরা ও তেতুলীয়াসহ কয়েকটি নদীতে বসবাস করে আসছেন। এ উপজেলার নদ-নদীতে প্রায় দু’শতাধিক ‘মান্তা’ পরিবার থাকলেও অনেকের ভোটার আইডি কার্ড হয়নি। শিক্ষা, চিকিৎসাসহ মৌলিক অধিকার বঞ্চিত এসব মানুষ। সমাজ সভ্যতা থেকে ছিটকে পরা এই জনগোষ্ঠীর ভাগ্যের উন্নয়ন হয়নি কয়েক যুগেও।
জানা যায়, প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙনে বাড়ি-ঘর হারিয়ে নতুন জীবন শুরু করে নৌকায়। কাঠের তৈরি নৌকায় ভেসে জীবিকার সন্ধানে ছুঁটে আসেন বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী বুড়াগৌরাঙ্গ, দাড়ছিড়া ও তেতুলীয়া নদীতে। এরপরে নৌকাতেই তাদের বংশবিস্তার ঘটতে থাকে। এই প্রজন্মের যারা আছেন, তাদের অনেকেরই জন্ম হয়েছে নৌকায়। বিয়ে করেছেন নৌকাতেই।
নৌকা নিয়ে সারাদিন নদীতে মাছ শিকার করাই এদের কাজ। কাজের সাথে সাথে রান্না-বান্না করে নৌকাতেই খাবার খান। যদিও বর্ষার সময়ের চিত্র একটু ভিন্ন। নদী উত্তাল থাকায় দুপুরে কাজের সাথে সাথে রান্না করা সম্ভব হয়না। তাই সারাদিন কাজ শেষে সন্ধ্যায় নদী কিনারে নোঙর করেন। এরপরে রান্না করে একসঙ্গে রাতে খাবার খেতে হয়।
যুগযুগ ধরে এভাবে জীবন-যাপন করে আসছেন তারা। মান্তা সম্প্রদয়ের লোকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ছোট্ট একটি নৌকায় মা-বাবা ও সন্তানসহ সবাই একসঙ্গে বসবাস করেন। বিয়ের পরে সন্তানদের নৌকা আলাদা করা হয়। এ জনগোষ্ঠির ছেলে মেয়েদের বিয়েও হয় এক নৌকা থেকে আরেক নৌকায়। সমাজ-সভ্যতা থেকে পিছিয়ে থাকায় মূল জনগোষ্ঠির লোকেরা তাদের সাথে আত্মীয়তার বন্ধন করেন না।
মানতা সম্প্রদয়ের মো. বাচ্চু, কালু সরদার ও রাহিমা বেগম বলেনÑ ‘আমরা নৌকায় থাহি। লেহাপড়া কি জিনিস বুঝিনা। আমাগো পোলা-মাইয়া (ছেলে মেয়ে) স্কুলে পড়াইতে চাই। কিন্তু সুযোগ হয় না। আমাগো জীবনে ডাক্তার দেহাই নাই। জ¦র অইলে এমনে এমনে ভালো অইয়া গ্যাছে। অনেকে অসুখে মইরা গ্যাছে। ডাক্তার কবিরাজ কি জিনিস বুঝি নাই। এ্যাহন আমরা ভালো কইরা বাঁচতে চাই। গুরাগারা (ছেলে মেয়ে) মানুষ করতে চাই।
এ ব্যাপারে রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান জানান, মানতা সম্প্রদয়ের লোকদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এদের বাসস্থান হিসেবে নদীর কিনারে ২৯টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ২৯ পরিবারের মাথাগোজার ঠাঁই হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকলের জন্য জমি এবং ঘর বরাদ্ধ করা হবে। তারা যাতে চিকিৎসা, শিক্ষাসহ মৌলিক অধিকার পায় সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ