Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মুরাদনগরে চুরির অপবাদে অসহায় পরিবারকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন

বাড়ি লিখে দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে ছাড়া পেলেন মা-মেয়ে-বাবা ও ভাই

প্রকাশের সময় : ১৪ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুরাদনগর উপজেলা সংবাদদাতা : মা-মেয়ের দু’হাত পিছনে খাটের খুঁটিতে বাঁধা। পা দু’টি সামনের অন্য একটি খুঁটিতে টান করে বাঁধা ছিল যেন নড়াচড়া করতে না পারে। প্রথম দফায় নির্যাতনে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে মা-মেয়ে।
স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসক এনে ইনজেকশন পুশ করলে জ্ঞান ফিরে পান তারা। জ্ঞান ফিরে দেখেন চোখের সামনে বড় সুই, ডিম, বরফের খ- ও চুলকাটার কেচিসহ আরো অনেক কিছু। এত সব আয়োজন সঞ্চয়ী মাটির ব্যাংক থেকে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা নেয়ার স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য। অবশেষে একমাত্র সম্বল সাত শতক ভিটেমাটি মঙ্গলবার লিখে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে ৭ ঘন্টার নির্যাতন থেকে তাদের অব্যাহতি মিলে। হাসপাতালের বেডে শুয়ে অশ্রুসজল চোখে নির্মম এ ঘটনার বর্ণনা দেন নির্যাতিত শাহানা বেগম, তার মেয়ে শামসুন নাহার ও ভাই রবিউল আউয়াল। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কামাল্লা গ্রামে এ লোমহর্ষক ঘটনাটি ঘটে।
রোববার সকালে সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, কামাল্লা গ্রামের ব্যবসায়ী মোছলেহ উদ্দিনের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন একই গ্রামের আব্দুল হকের মেয়ে শামসুন নাহার (১৬)। গত বৃহস্পতিবার রাতে মোছলেহ উদ্দিন তার বাড়ির সঞ্চয়ী মাটির ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা চুরির অভিযোগ আনে গৃহপরিচারিকা শামসুন নাহারের বিরুদ্ধে। পরদিন শুক্রবার সকালে শামসুন নাহার, তার মা শাহানা বেগম (৪০), বাবা আব্দুল হক, ছোট ভাই রবিউলকে (১০) কয়েকজন লোকের মাধ্যমে বাড়ি থেকে টেনে-হেঁচড়ে ধরে আনে। এ সময় স্থানীয় মোড়ল দরবেশ চৌধুরী, আল-হেলাল চৌধুরী সিন্দাবাদ, আবুল বাশার মাষ্টার, সাবেক মেম্বার বজলু মিয়া, মোছলেম মুন্সি মেম্বার, জজ মিয়া ও আরিফের উপস্থিতিতে তাদেরকে মোছলেহ উদ্দিনের বাড়ির একটি কক্ষে ৭ ঘন্টা আটক রেখে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। পরে জোরপূর্বক টাকা চুরির স্বীকারোক্তি আদায় করে মোবাইলে ভিডিও করে, কয়েকটি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ও সাদা কাগজে স্বাক্ষর এবং টিপসই রাখে। এনিয়ে কোন প্রকার জানাজানি করলে তাদেরকে গ্রাম ছাড়া করারও হুমকি দেয় সালিশকারীরা। স্থানীয় সাংবাদিকরা বিষয়টি জানতে পেরে শনিবার বিকেলে ভুক্তভোগী ওই পরিবারের লোকজনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

নির্যাতিত শাহানা বেগম বলেন, আমাদেরকে সকাল ৯টা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত হাত-পা বেঁধে অত্যাচার-নির্যাতন করে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করে অলিখিত ষ্ট্যাম্প ও সাদা কাগজে টিপসই ও স্বাক্ষর রাখে। আমরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় খবর পেয়ে গ্রামের মোড়লদের সহযোগিতায় বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দেয় মোছলেহ উদ্দিনের লোকজনেরা স্থানীয় মোড়ল আল-হেলাল চৌধুরী সিন্দাবাদ নির্যাতনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, মা ও মেয়ের চরিত্র খারাপ, তাই স্থানীয় বৈঠকে তাদেরকে গ্রাম ছাড়া করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ী ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, ঘরে তালাবদ্ধ করে নির্যাতন করার খবর শুনে আমি ঘটনাস্থলে যাই। তবে ছোট্ট এই মাটির ব্যাংক থেকে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা চুরি হওয়ার বিষয়টি সন্দেহজনক।
বাড়ির মালিক মোছলে উদ্দিন টাকা চুরির কারণে তাদেরকে মারধর করার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ওই মাটির ব্যাংকে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ছিল। টাকা ফেরৎ দিতে না পারলে মঙ্গলবার আব্দুল হক তার বাড়ির সাত শতক জায়গা লিখে দিবে মর্মে ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দেয়।
কামাল্লা ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ খানের ছেলে আবুল বাশার মাস্টার নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, চুরির সালিস হচ্ছে এমন খবর পেয়ে আমি ওই বাড়িতে যাই। আটককৃত মা-মেয়ে টাকা চুরি করেছে বলে স্বীকার করেছে।
মুরাদনগর থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, এ ধরনের ঘটনায় কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুরাদনগরে চুরির অপবাদে অসহায় পরিবারকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ