Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক

প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বরিশালের কেন্দ্রীয় কারাগার ক্যাম্পাস থেকে সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিনপ্রাপ্ত ৭ আসামিকে ডিবি পুলিশের পরিচয়ে উঠিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যাদের উঠিয়ে নেয়া হয়েছে তারা হলেনÑ বাকিবিল্লাহ, মো. নুরুল ইসলাম, মো. সোহাগ হাওলাদার, যোবায়ের, মো. আবুল বাসার, মো. সিরাজুল ইসলাম, মিনহাজুল ইসলাম ও মশিউর রহমান। এদের মধ্যে একমাত্র মশিউর রহমানের শোন এ্যারেস্ট রয়েছে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, জেলগেট থেকে বের হয়ে জেলারের বাসভবনের কাছাকাছি পৌঁছার আগেই একটি কালো গাড়ী ও একটি সাদা গাড়ীতে তাদের তুলে নেয়া হয়। দীর্ঘ দু’বছর পর জেল থেকে বের হয়ে আসা সন্তানদের গ্রহণের জন্য অপেক্ষমাণ পিতামাতাদের আসার আগেই তাদের গাড়ীতে তুলে নেয়া হয়। এসময়ে পরিবারের সদস্যরা গাড়ীর পেছনে দৌড় দিলে জামিনপ্রাপ্তরা ডিবি ডিবি বলে চিৎকার করে। গত বৃহস্পতিবারের এ ঘটনা নিয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় সাধারণ ডায়রি করতে গেলে তাদের অভিযোগ রেখে দিলেও তা খাতায় লিপিবদ্ধ করা হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত রোববার বরিশাল প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে নিখোঁজ হওয়া সন্তানদের সন্ধান ও ফিরিয়ে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। এদিকে অন্য এক খবরে বলা হয়েছে, কুষ্টিয়ায় এক কৃষককে বাড়ী থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে সন্ত্রাসী বানিয়ে ক্রসফায়ারে হত্যার অপরাধে ওসিসহ তিন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
একশ্রেণীর পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়টি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকেও এসব ব্যাপারে বিধি-নিষেধ আরোপ করে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিনা গ্রেফতারি পরোয়ানায় আটক না করা এবং রিমান্ডে না নেয়ার বিষয়ে নির্দেশনা সত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে, তা মেনে চলা হচ্ছে না। আদালত থেকে জামিন পাবার পর ডিবি পুলিশের পরিচয়ে তুলে নেয়া থেকেই তা স্পষ্ট। তুলে নিয়ে যাওয়াদের পরিবার থেকে প্রেস কনফারেন্সে বলা হয়েছে, গত দু’দিনেও সন্তানদের কোন খোঁজ দিতে পারছে না বরিশাল ও ঝালকাঠির পুলিশ এবং ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এব্যাপারে জামিনপ্রাপ্তদের পরিবারের সদস্যরা জেলারের সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি জানিয়েছেন, একমাত্র মসিউর ছাড়া বাকীদের আমরা ছেড়ে দিয়েছি। সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, ওদের ছেড়ে দেবার পূর্বে কারাগারে অভ্যন্তরে রাখা ওই গাড়ী দুটি কাদের ছিল। মূল ঘটনার বিবরণে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ১৪ আগস্ট নলছিটি থানার মোল্লারহাট ইউনিয়নে খাদেমুল ইসলাম কওমি মাদ্রাসা ও জামে মসজিদে এশার নামাজ পড়তে গেলে তৎকালীন পুলিশ সুপার মজিদ আলী ও নলছিটি থানার ওসি মাসুদসহ একদল পুলিশ তাদের আটক করে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করে। এই মামলায় ঝালকাঠি জেলা দায়েরা জজ মামলা থেকে অব্যাহতি দেন। সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় ৭ নভেম্বর তাদের হাইকোর্ট জামিন মঞ্জুর করেন। ডিবি পরিচয়ে তুলে নেয়ার এ ঘটনা অহরহই ঘটছে। এর কোনো সুরাহা হচ্ছে না। ডিবি পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনাও নতুন কিছু নয়। এসব ঘটনা মানবাধিকার লংঘনই নয়, আইনের শাসনেরও পরিপন্থী, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারো বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ ও গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকে, তবে তাকে আইনসঙ্গতভাবে গ্রেফতার করা যেতে পারে। তা না করে লুকোচুরির মাধ্যমে কাউকে কিছু না জানিয়ে শুধু ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় এ ধরনের অনিয়ম বরদাশতযোগ্য নয়।
পুলিশের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের নির্দেশ সত্ত্বেও পরিস্থিতির কেন কোন উন্নতি হচ্ছে না তা বোধগম্য হচ্ছে না। এ থেকে প্রতীয়মাণ হচ্ছে, পুলিশের চেইন অফ কমান্ডে বড় ধরনের গলদ দেখা দিয়েছে। একশ্রেণীর অতিউৎসাহী পুলিশ সদস্যর এ ধরনের অপকর্মের কারণে পুরো পুলিশ বাহিনীর ভাবমর্যাদা মারাত্মকভাবে ক্ষুণœ হচ্ছে। এ অপকর্ম ও অনিয়ম যদি চলতে থাকে, তবে তা আদালতের নির্দেশনাবলী লংঘনের শামিল। এ কথাও বলা প্রয়োজন, অপকর্ম করলে এক সময় না এক সময় তার খেসারত দিতে হয়। আজ যেসব পুলিশ সদস্য অন্যায্য কাজ করে বেড়াচ্ছেন, তারা যে ভবিষ্যতে আইনের আওতায় আসবেন না, তা গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায় না। এর প্রমাণ পাওয়া যায়, ২০০৭ সালে কুষ্টিয়ায় এক কৃষককে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে সন্ত্রাসী বানিয়ে ক্রসফায়ারে হত্যার অপরাধে ওসিসহ তিন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার মধ্য দিয়ে। আমরা আশা করব, ডিবি পরিচয়ে বা অন্য বাহিনীর পরিচয়ে মানুষকে তুলে নিয়ে যাওয়ার এ ধরনের অন্যায় কাজ প্রতিরোধ পুলিশ প্রশাসন অধিক সচেতন হবে। আদালতের নির্দেশনা মান্য এবং বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। জেল ক্যাম্পাস থেকে যাদের তুলে নেয়া হয়েছে তারা কোথায় কি অবস্থায় রয়েছেন অবিলম্বে তা সংশ্লিষ্টদের পরিবারকে জানানো অপরিহার্য।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক
আরও পড়ুন