Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সরকারের ব্যাংকঋণ কমছে

প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হাসান সোহেল : ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার ঋণ নেয়ার তুলনায় পরিশোধ করছে বেশি। এতে দিন দিন এই খাত থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ কমে আসছে। এতে ব্যাংকগুলোতে থাকা অতিরিক্ত তারল্য অব্যবহৃত থাকছে যা চাপ বাড়াচ্ছে আর্থিক খাতের ওপর।
চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) দেশের তফসিলী ব্যাংকগুলো থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা। আর এই সময়ে আগের ঋণের ১০ হাজার কোটি টাকা শোধ করেছে। মূলত সঞ্চয়পত্র বিক্রি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গেল কয়েকবছর ধরেই সরকারের ব্যাংকঋণের চাহিদা কম রয়েছে। চলতি অর্থবছরেও সঞ্চয়পত্র থেকে বেশি পরিমাণ ঋণ নিচ্ছে সরকার। এ কারণে ব্যাংকঋণের প্রয়োজন কম হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাত চাহিদামাফিক ঋণের যোগান থেকে বঞ্চিত হন। শুধু তাই নয়, এতে ঋণের সুদও বাড়ার আশঙ্কা থাকে। তবে বিনিয়োগ স্থবিরতার কারণে বর্তমানে ব্যাংকের হাতে প্রচুর উদ্বৃত্ত তারল্য থাকায় সরকার বেশি ঋণ নিলেও বেসরকারি খাত নিরুৎসাহিত হবে না বলে মনে করেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরুপাক্ষ পাল ইনকিলাবকে বলেন, সরকার ব্যাংক থেকে পরিমিত মাত্রায় ঋণ নিলে আর্থিক খাতের জন্য ভালো। এতে অতিরিক্ত তারল্য ব্যবহার করার সুযোগ পেত ব্যাংকগুলো। আবার বেশি নেয়া যাবে না। এতে বেসরকারি খাত চাপে পড়বে।
জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় ৭৪ শতাংশ। এ সময়ে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ এসেছে ১১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসে নীট বিনিয়োগ এসেছে ৩ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা। এছাড়া গেল অর্থবছরের পুরো সময়ে এ খাতে নীট বিনিয়োগ এসেছিল ৩৩ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে বড় অঙ্কের ব্যাংকঋণ করেছিল সরকার। এ সময়ে দেশের তফসিলী ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের নেওয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। গেল অর্থবছরের শুরুতেও সরকার বড় অঙ্কের ব্যাংকঋণ করেছিল।
বাজেট ঘাটতি পূরণে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে সরকার ৪৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ নেয়া হবে ২৮ হাজার কোটি টাকা, আর স্বল্পমেয়াদী ঋণ ১৫ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুন পর্যন্ত সরকারের মোট ব্যাংক ঋণের স্থিতি ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। ৩১ অক্টোবর শেষে সরকারের ব্যাংকঋণের মোট স্থিতি কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকা। ফলে এ সময়ে সরকারের নীট ব্যাংকঋণের স্থিতি কমেছে ৪ হাজার ৯৯ কোটি টাকা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গেল অর্থবছরের জুন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেয়া সরকারের ব্যাংকঋণের মোট স্থিতি ছিল ২১ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। যা অক্টোবর শেষে কমে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকার কোন ঋণই করেনি। উল্টে আগের নেয়া ঋণের ১০ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা শোধ করেছে। অন্যদিকে, গেল অর্থবছরের জুন শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের নেয়া ঋণের স্থিতি ছিল ৮৬ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। যা অক্টোবর শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯২ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ এ সময়ে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে প্রায় ৬ হাজার ৩৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকার ঋণ নিয়েছে।
বাজেটে ঘাটতি পূরণে বিদায়ী ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ৩৮ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল সরকার। তবে বছরের বেশিরভাগ সময়েই সরকারের ঋণের চাহিদা কম ছিল। ফলে পুরো অর্থবছরের সরকারের নীটব্যাংকঋণ দাঁড়ায় মাত্র। ৪ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা। বৈদেশিক সহায়তা ও সঞ্চয়পত্র বিক্রি অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পাওয়াই ছিল এর অন্যতম কারণ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সরকারের ব্যাংকঋণ কমছে

১৫ নভেম্বর, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ