Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আমনের ফলনে খুশী মূল্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক দক্ষিণ-পশ্চিমের

প্রকাশের সময় : ১৬ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মিজানুর রহমান তোতা : কয়েকটি স্থানে অসময়ের বৃষ্টিতে কিছুটা ক্ষতি হলেও দক্ষিণ-পশ্চিমে রোপা আমনের ফলন খুবই ভালো হয়েছে। মাঠে মাঠে ধান কাটা, কৃষকের উঠোনে মাড়াই চলছে সমানে। উঠোন ভরে গেছে ধানে। ঘরে ঘরে এখন নবান্নের উৎসব। কৃষকরা মহাব্যস্ত। ধান মাড়াই, শুকানো, পরিষ্কার করা ও বস্তাভর্তি কাজ চলছে পুরাদমে। মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কৃষকরা ফলনে খুশী, তবে মূল্য নিয়ে দারুণ দুশ্চিন্তায় আছেন।
কৃষকরা জানান, বর্গা ও প্রান্তিক চাষী যারা ধারদেনা করে আবাদ ও উৎপাদন করেছেন তাদের ক্ষতির ভাগটা হবে বেশী। শুধুমাত্র বাজার বিশৃঙ্খলার কারণে সাধারণ কৃষকরা ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফড়িয়া, মজুদদার ও পাইকারী ব্যবসায়ীদের টানাহেঁচড়া চলে ধান ওঠা মৌসুমে। সরকারকে জরুরিভাবে নজর দেয়ার জন্য তাগিদ দিয়েছেন সচেতন ও পর্যবেক্ষক মহল।
যশোরের ছুটিপুর এলাকার কৃষক আজমত আলী বললেন, যাতে ধানের উপযুক্ত ও ন্যায্য মূল্য পাওয়া যায় তার ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে। তা না হলে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাবে। শার্শার শালকোনার কৃষক বাবুল আক্তার বললেন ধানের মূল্য প্রতিমণ ৯শ’ টাকা থেকে সাড়ে ৯শ’ টাকা হলে লাভ হবে। কিন্তু ধানের বর্তমান বাজার মূল্য গড়ে ৮শ’ টাকা। তিনি বললেন, দিনরাত পরিশ্রম করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদিত কৃষি পণ্যের যদি আশানুরূপ দাম না পাওয়া যায়, তাহলে তারা পরবর্তী আবাদ খরচ উঠাবে কিভাবে? যশোরের বারীনগর, ঝিনাইদহের চরমুরারীদহ, ভড়–য়াপাড়া, লাউদিয়া, ভাটই, শৈলকুপার গাড়াগঞ্জ, শেখপাড়া ও মাগুরার শালিখাসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের কথা, এবার কোনভাবেই যাতে কৃষকদের নানা প্রয়োজন মিটাতে তড়িঘড়ি ধান বিক্রির সুযোগ না নিতে পারে মজুদদার, আড়তদার ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা, সেদিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের আগেভাগেই তীক্ষè দৃষ্টি রাখতে হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, যশোর, খুলনা, মাগুরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও বাগেরহাটসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলায় এবার প্রায় ১৮ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের টার্গেট নিয়ে উফশী ও স্থানীয় জাতের রোপা আমন আবাদ হয় ৭লাখ ২৮হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। সূত্র জানায়, লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত জমিতে আবাদ হয়েছে কোন কোন এলাকায়। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে কয়েকজন ধান ব্যবসায়ী জানালেন, কৃষকদের সরলতার সুযোগ নিয়ে সুদখোর, দাদন ব্যবসায়ী, ফড়িয়া, আড়তদার ও মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা সাধারণত ধান উঠা মৌসুমে সাধারণ কৃষকদের ফাঁদে ফেলে নানা অজুহাতে কম দামে ধান কিনে ঠকানোর ফন্দি আঁটে। বাজার তদারকি থাকলে সেই সুযোগ পায় না মুনাফালোভীরা। মাঠপর্যায়ের কৃষি সম্প্রসারণ, কৃষি বিপনন ও খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বক্তব্য, এখনই মাঠের প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ করে মূল্য নির্ধারণ করা উচিত। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একজন উপ পরিচালক দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, শুধু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নয়, সারাদেশেই মাঠ থেকে পুরাদমে ধান কাটা চলছে। কৃষকরা খুব খুশী ধানের ফলনে। কিন্তু মূল্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা।
যশোরের বিভিন্ন হাট-বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েকদিনের মধ্যে নতুন ধান বাজারে উঠবে। এখনই বাজার তদারকি দরকার। ঝিনাইদহের হাটগোপালপুর এলাকার কৃষক আব্দুর রহিম জানালেন, কৃষকদের সরলতার সুযোগ নিয়ে সুদখোর, দাদন ব্যবসায়ী, ফড়িয়া, আড়তদার ও মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা ধান উঠা মৌসুমে যেভাবে বাড়াবাড়ি করে তা রোধ করা হয় না কখনো। বাজার তদারকির অভাবে তাদের দাপট বেড়ে যায়। তাছাড়া সাধারণ সহজ সরল কৃষকের নানাভাবে ঠকিয়ে যায় জোরদার মহাজনরা, তারও কোন প্রতিকার হয় না কখনো। তাদের মনোকষ্ট মনেই রেখে দেন। তবে কোন কোন মৌসুমে ফলন ভালো ও মূল্য ভালো পাওয়ায় ক্ষতি পুষিয়ে নেন। আবার কোন মৌসুমে ক্ষতিগ্রস্ত হন-এভাবেই চলছে কৃষকদের। তাদের জীবনযাত্রা চলছে এভাবেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আমনের ফলনে খুশী মূল্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক দক্ষিণ-পশ্চিমের
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ