Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

গারো তরুণী ধর্ষণ মামলায় ৬ দিনের রিমান্ডে রুবেল

প্রকাশের সময় : ১৬ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে হাতকড়া আড়াল করে আদালত থেকে পালিয়ে যায় গারো তরুণী ধর্ষণ মামলার আসামি আফসান রহমান ওরফে রুবেল। পুলিশের এসআই যখন ম্যাজিস্ট্রেটের রুমে আর কনস্টেবল টয়লেটে ঠিক তখনই পালানোর সুযোগটা নেয় দুর্ধর্ষ এ আসামি। আদালতপাড়া ত্যাগ করার পর একটি লেপতোষকের দোকান থেকে কাপড় নিয়ে হাতে পেঁচিয়ে রাখে। যাতে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে, তার ভাঙা হাতে ব্যান্ডিজ করা। এভাবেই দু’রাত পালিয়ে ছিল। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি তার। হ্যান্ডকাপ পরিহিত অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার পুলিশের হাতে ধড়া পড়ে সে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ছয়দিনের পুলিশি রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
রুবেলকে গ্রেফতারের পর গতকাল বনানীতে ডিসি গুলশানের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার
মোস্তাক আহমেদ বলেন, রুবেল আদালত থেকে বের হয়ে হাতকড়া আড়াল করে শাঁখারি বাজারের দিকে যায়। পথে লেপতোষকের দোকান থেকে এক টুকরো কাপড় নিয়ে হাতে পেঁচিয়ে নেয়। পরে শাঁখারি বাজার মসজিদে গিয়ে ঢোকে। সেখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান করে। বের হয়ে তার এক বন্ধুকে ফোন করে বিকাশের মাধ্যমে এক হাজার টাকা নেয়। এর পরে যায় গুলিস্তান। সেখান থেকে গ্রামীণ পরিবহনের একটি গাড়িতে বাড্ডা হয়ে চলে যায় ভাটারার নুরেরচালা। বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের সাড়া পায়নি। শেষে রাত কাটায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে। সকালে বাসে করে টঙ্গীতে যায়। ভিড় এড়াতে সে বিভিন্ন ফাঁকা স্থানে ঘোরাঘুরি করে। পুলিশের ভয়ে সে কোনো হোটেলে না গিয়ে রাস্তায় চটপটি খায়। কোথায় যাবে সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে সন্ধ্যায় ফিরে আসে বাড্ডায়। উত্তর বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ার সংলগ্ন একটি বস্তিঘরের পাশে রাত কাটায়। গতকাল সকাল ৭টার দিকে আবার ঢাকার বাইরে যাওয়ার জন্য সুবাস্তু টাওয়ারের কাছে বাসস্ট্যান্ডে যায় সে।
এ সময় রুবেলকে দেখতে পায় সাদা পোশাকে থাকা বাড্ডা থানার এসআই বিএম মামুন। তিনি দৌঁড়ে গিয়ে জাপটে ধরেন রুবেলকে। নিজেকে বাঁচাতে উল্টো পুলিশকেই ছিনতাইকারী বলে ফাঁসানোর চেষ্টা করে সে। ততক্ষণে পুলিশের অন্য সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। পরে তারা রুবেলের হাতে পেঁচানো কাপড় খুলে ফেলে।
এদিকে বাড্ডা থানা-পুলিশ গতকাল তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে রুবেলের বিরুদ্ধে ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে আদালত আসামি রুবেলের কাছে জানতে চান, তার কোনো আইনজীবী আছেন কি না। না সূচক জবাব দিয়ে নিজেই শুনানি করে।
উল্লেখ্য, গারো তরুণীকে ধর্ষণ মামলায় রুবেলকে গত রোববার ঢাকা মহানগর হাকিমের আদালতে তাকে নিয়ে যান বাড্ডা থানার এসআই ইমরানুল হাসান ও কনস্টেবল দীপক চন্দ্র পোদ্দার। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার জন্য রুবেলকে সিএমএম কোর্টের নতুন ভবনের অষ্টম তলার ২০ নম্বর কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেল ৩টার দিকে জবানবন্দি রেকর্ড করার প্রক্রিয়া শুরু করতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইমরানুল হাসান ম্যাজিস্ট্রেটের খাস কামরায় যান। এ সময় ওই আদালতের বারান্দায় একজন কনস্টেবল আসামি রুবেলের পাহারায় ছিল। ম্যাজিস্ট্রেটের রুম থেকে ঠিক দুইমিনিট পর তদন্ত কর্মকর্তা বের হন। এসময় তিনি কনস্টেবলকে দেখতে পেলেও আসামিকে কোথাও খুঁজে পাননি। পরবর্তীতে কনস্টেবলকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি জানান, আসামিকে বারান্দায় দাঁড়াতে বলে তিনি টয়লেটে যান। এরমধ্যে আসামি রুবেল পালিয়ে যায়। দায়িত্ব পালনে অবহেলার দায়ে পুলিশের ওই দুই সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এদিকে আদালতের সিসি ক্যামেরার ফুটেছে দেখা গেছে, প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে রুবেল আদালত ত্যাগ করে।
২৫ অক্টোবর রুবেল তার দুই সহযোগীকে নিয়ে উত্তরা বাড্ডা এলাকায় এক গারো তরুণীকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর ওই তরুণীর হবু স্বামীর কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় ওই তরুণী বাদি হয়ে বাড্ডা থানায় একটি মামলা দায়ের করলে র‌্যাব-১ এর একটি দল ১২ নভেম্বর তাকে বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে বাড্ডা থানায় সোপর্দ করে।
র‌্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী, ২৫ অক্টোবর বাড্ডার ৩ নম্বর লেনের হাসান উদ্দীন সড়কের একটি বাসায় ওই গারো তরুণীকে আল আমিন, সালাউদ্দিন সালুসহ কয়েকজনের সহায়তায় ধর্ষণ করেন আসামি রুবেল। পরে এ ঘটনায় ২৮ অক্টোবর ওই তরুণী বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় মামলা করেন। পরে বিমানবন্দর এলাকা থেকে আসামি রুবেলকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এর আগে ২৫ অক্টোবর বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ওই গারো তরুণী তার হবু স্বামী রিপন ম্রংয়ের সঙ্গে দেখা করতে বাড্ডার হাসান উদ্দীন সড়কে হাজী রুহুল আমিনের মেসে গিয়েছিলেন। ওইদিন মেসের ম্যানেজার হানিফ মেসে অবস্থানরত অন্য ভাড়াটিয়া নাজমুল, সালাউদ্দীন সালু, জয়নাল, আল আমিন ও রনির উপস্থিতিতে রিপন ম্রংকে বলেন, মেসে মহিলা আনা নিষেধ, তুমি কেন এখানে মহিলা নিয়ে আসছ। এজন্য তিনি রিপন ম্রংকে ১ নভেম্বরের মধ্যে মেস ছাড়ার নির্দেশ দেন। একই সময়ে মেসের বাসিন্দা সালাউদ্দিন সালু ফোনে রুবেলকে মেসে ডেকে আনেন। তার সঙ্গে আসে সন্ত্রাসী আল আমিন, রনি, সুমন ও নাজমুল। তারা রিপন ম্রংয়ের কাছে মহিলা আসার কথিত অপরাধের দফারফা করার অজুহাতে ম্রংয়ের কাছে থাকা ১৭ হাজার টাকা এবং তার ব্যবহৃত স্মার্টফোনটি ছিনিয়ে নেন। কিছু সময় পর রুবেল ও তার সহযোগীরা ওই তরুণীকে পাশের পারভেজের রিকশার গ্যারেজের পাশে হাজী মোশারফ মিয়ার পরিত্যক্ত বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গারো তরুণী ধর্ষণ মামলায় ৬ দিনের রিমান্ডে রুবেল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ