Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পণ্যমূল্য বৃদ্ধিতে বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০২২, ১২:০১ এএম

আমদানিতে জোয়ারের পাশাপাশি বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্য, জ্বালানিসহ সব ধরনের পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাণিজ্য ঘাটতি চূড়ায় উঠেছে। চলতি অর্থবছরের ৯ মাসেই (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৫ বিলিয়ন (২ হাজার ৪৯০ কোটি ৭০ লাখ) ডলার। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ২ লাখ ১৫ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা।

এই অঙ্ক গত অর্থবছরের পুরো সময়ের (১২ মাস, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন) চেয়েও ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি। আর জুলাই-মার্চ সময়ের চেয়ে বেশি প্রায় ৬৪ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরের এই ৯ মাসে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৫ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার। আর পুরো অর্থবছরে এই ঘাটতি ছিল ২২ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই কোনো বছর বা অর্থবছরে এত বিশাল অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতির মুখে পড়েনি বাংলাদেশ। আর এর ফলে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট) বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ।
জুলাই-মার্চ সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ১৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ১৪ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক মাত্র ৫৫ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ঘাটতি ছিল।
পণ্য আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্য ও লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতিতে বাংলাদেশ এই মাইলফলক অতিক্রম করেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেছেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতির বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আমদানির লাগাম টেনে ধরা। যে করেই হোক এটা করতে হবে। তা না হলে সংকটে পড়বে অর্থনীতি। করোনা মহামারি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকেই আমদানিতে জোয়ার বইছে। আর এতে আমদানি-রফতানির মধ্যে ব্যবধান বা বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েই চলেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল রোববার বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায় ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে ৬ হাজার ১৫২ কোটি ৪০ লাখ (৬১ দশমিক ৫২ বিলিয়ন) ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরের এই ৯ মাসে ৪২ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে ৩৬ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার আয় করেছেন রফতানিকারকরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩২ দশমিক ৯২ শতাংশ বেশি। এ হিসাবেই অর্থবছরের ৯ মাসে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, লাগামহীন আমদানিতে বেশ চাপে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। ব্যালান্স অফ পেমেন্ট ১৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। অস্থির হয়ে উঠেছে ডলারের বাজার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এই অর্থবছরে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার বাজারে ছাড়া হয়েছে। কিন্তু আমদানি বাড়ায় তারপরও চাহিদা মিটছে না।
তিনি বলেন, অনেক হয়েছে আর নয়। যে করেই হোক আমদানি কমাতেই হবে। এ ছাড়া এখন আর অন্য কোনো পথ খোলা নেই। সাধারণভাবে অর্থনীতিতে আমদানি বাড়াকে ইতিবাচকভাবে দেখা হয়ে থাকে। বলা হয়, আমদানি বাড়লে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে, কর্মসংস্থান বাড়বে। এতদিন আমরাও সেটা বলে আসছি। কিন্তু এখন অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। ৫০ শতাংশ আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির ধাক্কা সামলানোর ক্ষমতা আমাদের অর্থনীতির নেই। এখন এটা কমাতেই হবে। তা না হলে বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়ব আমরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পণ্যমূল্য বৃদ্ধিতে বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ