Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্ত্রীর তালাকের প্রতিশোধ নিতেই নৃশংস খুন

বগুড়ায় মাদরাসাছাত্র শিশু সামিউল হত্যার নেপথ্যে হিন্দু নারীকে মা সাজিয়ে শিশুকে হস্তান্তরে মাদরাসায় ফোন

মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে | প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০২২, ১২:০০ এএম

বগুড়ায় স্ত্রীর দেওয়া তালাকের প্রতিশোধ নিতে শিশু সামিউল ইসলাম সাব্বির (১০) নামের এক মাদরাসা ছাত্রকে নৃশংসভাবে খুন করেছে তারই সদ্য সাবেক সৎ বাবা। এই ঘটনায় সৎ বাবা ফজলুল হক (৪০) এবং খুনে সহায়তাকারী অনিতা রানী (৩৫) নামে এক নারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত ফজলুল হক শাজাহানপুর উপজেলার খরনা কমলাচাপড় গ্রামের মরহুম আবুল হোসেনের ছেলে এবং অনিতা উপজেলার চেলো গ্রামের মৃত খিরদ চন্দ্র দেবনাথের মেয়ে।

গতকাল বুধবার বগুড়ার এসপি সুদীপ কুমার চক্রবর্তী নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান। এর আগে গত মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে শাজাহানপুর উপজেলার মানিকদিপা উত্তরাপাড়া গ্রামে লাউ ক্ষেতের জমিতে গলায় সুতার রশি পেঁচানো অবস্থায় শিশু সামিউলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এসপি জানান, শাজাহানপুর উপজেলার সাজাপুর গ্রামের মরহুম ডালের আলী প্রাং এর মেয়ে সালেহা বেগম (২৮) প্রায় ১০ বছর আগে মাঝিড়া কাগজীপাড়া গ্রামের মরহুম মঞ্জুর আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৩০) কে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে সামিউল ইসলাম সাব্বির জন্মগ্রহণ করে। শিশুটি সাজাপুর পূর্ব দক্ষিণপাড়া তালিমুল কোরআন হাফেজিয়া মাদরাসায় পড়াশোনা করছিল।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসপি বলেন, মাদক সেবন করার কারণে বনিবনা না হওয়ায় প্রায় দেড় মাস পূর্বে সালেহা তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলমকে তালাক দেন। এরপর সালেহা তার ছেলেকে সাথে রেখেই শাজাহানপুর থানার খরনা কমলাচাপড় গ্রামের মরহুম আবুল হোসেনের ছেলে ফজলুল হককে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকেই ফজলুল হক সালেহার ছেলেকে তার নানী বা খালার নিকট রেখে আসার জন্য শারীরিক নির্যাতন ও মানসিক চাপ দিতে থাকে।
এছাড়া ফজলুল হক প্রায়ই রাতে সামিউলকে বাইরে রেখে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিত। শিশুটিকে খাবার না দিয়ে অনাহারে রাখতো। ঈদ-উল-ফিতরের দিন শিশুটি মায়ের সাথে বেড়াতে যেতে চাইলে তাকে সৎ বাবা ফজলুল হক মারপিট করে স্ত্রীর বোনের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।

শিশু সন্তানের কষ্ট দেখে বিয়ের ১০/১৫ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর কাজী অফিসের মাধ্যমে গত ১১ মে ফজলুলকে তালাক করে। গত ১৪ মে ঈদ পরবর্তী ছেলের মাদরাসা খুললে সালেহা ছেলেকে নিজে গিয়ে মাদরাসা রেখে আসেন। এদিকে সালেহা তালাক দেওয়ায় ফজলুল হক তার উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য শিশু সামিউলকে খুন করার পরিকল্পনা করে।

এসপি আরও জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী ফজলুল হক সালেহার ছেলেকে নেওয়ার জন্য ১৬ মে সন্ধ্যা ৭টার দিকে সাজাপুর পূর্ব দক্ষিণপাড়া গ্রামের তালিমুল কোরআন হাফিজিয়া মাদরাসায় যায়। শিশুকে নিতে মাদরাসার শিক্ষক মো. আবু মুছাকে বলে। কিন্তু মাদরাসার নিয়ম অনুযায়ী মায়ের অনুমতি ছাড়া সন্তান কারো কাছে দেওয়া নিষেধ থাকায় শিক্ষক আবু মুছা শিশু সামিউলকে দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এরপর ফজলুল হক পূর্বেই অনিতা রানীকে শিশু সামিউলের মা পরিচয় দিয়ে তার মোবাইল নম্বর মাদরাসার শিক্ষকের নিকট দিয়ে বলে যে, সামিউলের মায়ের সাথে কথা বলেন।

শিক্ষক আবু মুছা তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন থেকে ফজলুল হকের দেওয়া অনিতা রানীর মোবাইল নাম্বারে ফোন করেন। ফোনে অনিতা রানী মায়ের পরিচয় দিয়ে সামিউলকে ফজলুল হকের নিকট দিয়ে দিতে বলে। সে সময় শিক্ষক মাদরাসার অন্যান্য ছাত্রদের সামনে শিশু সামিউলকে ফজলুল হকের কাছে তুলে দেন।
অনিতা রানীর সহায়তায় ফজলুল হক মানিকদিপা উত্তরপাড়া থেকে খড়না কলমাচাপড়গামী কাঁচা রাস্তার পাশের লাউয়ের জমিতে শিশু সামিউলকে নিয়ে গলায় সুতার রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। শিশুর লাশ গোপন করার জন্য ফজলুল হক লাউ ক্ষেতের উত্তর/পশ্চিম কোনায় মাচার ঘুটির সাথে বেঁধে রেখে চলে যায়।

পরদিন ১৭ মে সকাল ৮টার দিকে পুলিশ সামিউলের লাশ উদ্ধার করে। এরপর ফেসবুকের মাধ্যমে শিশু সামিউলের লাশের বিষয়ে লোকমুখে শুনে সালেহা ও তার আত্মীয়-স্বজন ঘটনাস্থলে গিয়ে ছেলের লাশ শনাক্ত করে। ওই দিনই পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৬ ঘণ্টার মধ্যেই আসামিদের গ্রেফতার করে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুন

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ