Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মারিউপোল কেন গুরুত্বপূর্ণ?

বন্দী আজভ সেনা নিয়ে সঙ্কটে জেলেনস্কি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ মে, ২০২২, ১২:০২ এএম

স্থানীয় কর্মকর্তাদের মতে, ইউক্রেনীয় শহর মারিউপোল এখন রাশিয়ার হাতে। দুই মাসেরও বেশি তিক্ত লড়াই এবং ক্রমাগত গোলাবর্ষণের পরে এটি রাশিয়ার হাতে এসেছে যা শহরের বিশাল অংশ ধ্বংস করেছে এবং হাজার হাজার বেসামরিক লোককে হত্যা করেছে। এদিকে, মারিউপোলের যোদ্ধারা আত্মসমর্পণ করায় বিতর্কের মুখে পড়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

সোমবার গভীর রাতে ইউক্রেন আনুষ্ঠানিকভাবে মারিউপোলে তাদের যুদ্ধ অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেছে। ইউক্রেনের শেষ সামরিক হোল্ডআউট আজভস্টাল স্টিল প্ল্যান্ট থেকে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের সরিয়ে নেয়া শুরু হয়েছিল সেদিনের শুরুতে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, তখন থেকে প্রায় ১ হাজার সৈন্য আত্মসমর্পণ করেছে, যার মধ্যে কয়েক ডজন আহত সৈন্য রয়েছে যারা রুশ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চলের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মারিউপোল নিয়ন্ত্রণ করে, রাশিয়া ক্রিমিয়াতে তার স্থল সেতুকে মজবুত করেছে এবং এখন আজভ সাগরের সমগ্র উত্তর তীরে নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্বে রাশিয়ান-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোকে সংযুক্ত করেছে। এটি ইউক্রেনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্র ছিল কারণ একটি বন্দর শহর হিসাবে এর মর্যাদা ছিল। শান্তির সময়ে, এটি ইউক্রেনীয় ইস্পাত এবং শস্য রপ্তানির জন্য একটি প্রধান সাইট। যদি রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে মারিউপোলকে ধরে রাখে, আজভ সাগরে ইউক্রেনের প্রবেশাধিকার রোধ করে, তাহলে এটি ইউক্রেনের আর্থিক এবং অর্থনৈতিক স্থায়িত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, দেশটির পণ্য বিক্রি ও জাহাজীকরণের ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করবে। এটি কার্যকরভাবে ইউক্রেনকে সমুদ্রের প্রবেশাধিকার থেকে বিচ্ছিন্ন করার একটি বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ, যা ইউক্রেনের অর্থনীতি এবং বাণিজ্যের সত্যিই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

এটি ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলে রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার অধিগ্রহণ করা ক্রাইমিয়াকে সংযোগকারী স্থল পথের ওপর অবস্থিত হওয়ায় সামরিক কৌশলগতভাবে শহরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মারিউপোলের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ায় স্থলপথে ক্রাইমিয়া যেতে রাশিয়াকে আর কোনো ধরনের বাধার মুখেই পড়তে হবে না। কৃষ্ণসাগরের উপদ্বীপটিতে থাকা রুশ সেনারাও এখন ডনবাস বা ওডেসার দিকে অভিযানে যুক্ত হতে পারবে। এর মাধ্যমে ইউক্রেনের কৃষ্ণসাগর উপক‚লরেখার ৮০ শতাংশ রাশিয়ার হস্তগত হয়েছে।

মারিউপোল দখলের মাধ্যমে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় যে লাভ হয়েছে তা হচ্ছে নৈতিক বিজয়। এতিদিন পশ্চিমারা যে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে আসছিল, এটি ছিল তার একটি উপযুক্ত জবাব। রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা কিংবা ইউক্রেনকে অর্থ ও অস্ত্র সাহায্য দিয়েও তারা এর পতন ঠেকাতে পারেননি। পুতিন কখনোই কিয়েভ দখল করতে চাননি, বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে তা সম্ভবও নয়। তিনি সমৃদ্ধ ডনবাস এলাকা মুক্ত করতে চেয়েছিলেন এবং ইউক্রেনকে সমুদ্রপথে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিলেন। মারিউপোল বিজয়ের মাধ্যমে তার সেই পরিকল্পনাই সম্প‚র্ণ সফল হয়েছে।

সঙ্কটে জেলেনস্কি : এদিকে, রাশিয়ানদের কাছে আত্মসমর্পণের আগে কয়েক মাস ধরে মারিউপোলের পাল্ভারাইজড স্টিল প্ল্যান্টের ভিতরে ইউক্রেনের কুখ্যাত আজভ রেজিমেন্টের প্রায় ১ হাজার সেনা লুকিয়ে ছিলেন। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তাদের মধ্যে অনেকেই খারাপভাবে আহত। তাদেরকে বন্দী করার রাশিয়ান বাহিনী তাদের তল্লাশি করে এবং পাহারার মধ্যে রেখেছিল।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে যে, রেড ক্রসকে অবিলম্বে যোদ্ধাদের কাছে প্রবেশাধিকার দেয়া উচিত। এই অঞ্চলের জন্য এর উপ-পরিচালক ডেনিস ক্রিভোশেভ ইউক্রেনে রাশিয়ান বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত মৃত্যুদÐের উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন যে আজভস্টাল ডিফেন্ডারদের ‘একই ভাগ্য পূরণ করা উচিত নয়।’ ইউক্রেনের জন্য, যোদ্ধাদের আত্মসমর্পণের আদেশ দিয়ে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সমালোচনার মধ্যে পড়েছেন। তিনি প্রথম থেকেই ভুল তথ্য দিয়ে আসার জন্য অভিযুক্ত হচ্ছেন।

‘জেলেনস্কি অপ্রীতিকর প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারেন,’ বলেছেন ভলোদিমির ফেসেনকো, যিনি কিয়েভের স্বাধীন পেন্টা থিঙ্ক ট্যাঙ্কের প্রধান। ‘অসন্তোষের কণ্ঠস্বর এবং ইউক্রেনীয় সৈন্যদের বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ উঠেছে।’ রাশিয়ার প্রধান কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা বলেছে যে, তারা আত্মসমর্পণকারী সৈন্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় ‘জাতীয়তাবাদীদের চিহ্নিত করতে’ এবং তারা বেসামরিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের সাথে জড়িত কিনা তা নির্ধারণ করতে।

এছাড়াও, রাশিয়ার শীর্ষ প্রসিকিউটর দেশটির সুপ্রিম কোর্টকে ইউক্রেনের আজভ রেজিমেন্টকে নিয়ে তদন্ত করতে বলছে। কারণ, তাদের মধ্যে অনেকেই ডানপন্থী সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে যুক্ত। প্ল্যান্টের টানেল এবং বাঙ্কারের গোলকধাঁধায় কতজন যোদ্ধা রয়ে গেছে তা অস্পষ্ট ছিল, যেখানে ২ হাজার জনকে এক পর্যায়ে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল বলে বিশ্বাস করা হয়েছিল এবং এই অঞ্চলের একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা বলেছেন যে, স্টিলওয়ার্ক থেকে কোনও শীর্ষ কমান্ডার আবির্ভ‚ত হয়নি।

প্ল্যান্টটিই একমাত্র জিনিস যা রাশিয়ার মারিউপোলের সম্প‚র্ণ দখল ঘোষণার পথে দাঁড়িয়েছিল এবং যুদ্ধটি রাশিয়ান আক্রমণের মুখে ইউক্রেনের দুর্ভোগ এবং অবাধ্যতার বিশ্বব্যাপী প্রতীক হয়ে ওঠে। এর পতন মারিউপোলকে মস্কোর বাহিনী দ্বারা দখল করা সবচেয়ে বড় ইউক্রেনীয় শহর করে তুলবে, পুতিনকে এমন একটি যুদ্ধে উৎসাহিত করবে যেখানে তার অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। সূত্র : ইভনিং স্ট্যান্ডাড, এনপিআর।



 

Show all comments
  • হরেশ্বর বাবু ২০ মে, ২০২২, ১১:০৬ এএম says : 0
    যুদ্ধ কখনো শান্তির পথ হয়ে আসে না। যুদ্ধ আসে নিরপরাধ নিরীহ মানুষকে হত্যা আর দেশ সুন্দর পৃথিবী কি ধ্বংস করার জন্য। তাই আমি যুদ্ধ চাইনা যুদ্ধ বন্ধ করে সকলে মিলেমিশে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে মিলেমিশে থাকতে পারলেই পৃথিবী হবে সুন্দর ও মধুময় আনন্দময়।
    Total Reply(0) Reply
  • Tawsif ২০ মে, ২০২২, ১১:০৬ এএম says : 0
    আল্লাহ না করুক" বিশ্বের পরাশক্তিরা যা শুরু করেছে ৩য় বিশ্বযুদ্ধ না শুরু হয়ে যায়
    Total Reply(0) Reply
  • Ismail Sagar ২০ মে, ২০২২, ১১:০৬ এএম says : 0
    ইউক্রেন এর দুইশাতাধিক সৈনিক " রাশিয়ার সৈন্যদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে, তাদের বন্দি করা হয়েছে"
    Total Reply(0) Reply
  • Bahar Uddin ২০ মে, ২০২২, ১১:০৭ এএম says : 0
    ইউক্রেনীয়রা মিথ্যাচার করছে- মারীয়পোল আজভ স্টীল কারখানার আত্মসমর্পণকারী সৈন্যরা রাশিয়ার হেফাজতে রয়েছে। কারণ তারা রাশিয়ার কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। কিন্তু ইউক্রেনীয় সরকার বলছে তাদের উদ্ধার করেছে তারা। তারা উদ্ধার করলে তাদের সৈন্য রাশিয়ার হেফাজতে, এটাতেই প্রমাণ হয় তারা মিথ্যাচার করছে।
    Total Reply(0) Reply
  • ম নাছিরউদ্দীন শাহ ২০ মে, ২০২২, ৯:৫৯ এএম says : 0
    এই যুদ্ধ পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ নৈতিক বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে। ন‍্যাটোর পশ্চিমাদের বিপুল অস্ত্র অর্থ আমেরিকার বিলিয়ন ডলারের সাহায্যকিছুই ইউক্রেনের পরাজয় জেলেনস্কি কে কোমরে দড়ি লাগানো থেকে বিরত করতে পারবেনা। এই যুদ্ধে পশ্চিমাদের একের এক জঘন্যতম মিথ্যাচারের কৌশল কিছুই হচ্ছে না। পুতিনের রাশিয়ার বিজয় অনিবার্য নিশ্চিত। এখন চুড়ান্ত বিজয়ের অভিযান হবে। সমগ্র পৃথিবীর মানুষের বিরাট অংশ মার্কিন সামরাজ্ব‍্যবাদের বিরুদ্ধে রাশিয়ার বিজয় দেখতে অধির আগ্রে দেখছেন। ন‍্যাটো আমেরিকার পরাজয়। চলবে।
    Total Reply(0) Reply
  • হাসান ২০ মে, ২০২২, ১১:৩১ এএম says : 0
    এমরিকা আর তার পালিত বা বংশবদ বৃটেন এর মিথ্যাচার কোনোভাবেই রাশিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবেনা। রাশিয়ার১০টাকার ক্ষতি হলে ওদের হচ্ছে ১৫টাকার ক্ষতি। বিশ্ব এই দুই উম্মাদ দেশের খপ্পর থেকে মুক্তি চায়
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ