Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নির্মাণের ৩ মাসেই উল্টে গেছে সেতু

তিন বছরেও মিলছে না সমাধান

কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ২১ মে, ২০২২, ১২:০১ এএম

নির্মাণের তিন মাসের মধ্যেই উল্টে গেছে ৩৩ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে নির্মামাণাধীন সেতু। গত তিন বছরে প্রশাসন থেকে একাধিকবার ঘটনাস্থলে পরির্দশন, প্রশাসন ও দুদুক থেকে তদন্তের কথা বলা হলেও গ্রামের মানুষের ভোগান্তির সমাধান হয়নি। মেলেনি প্রতিকার। ফলে নিজেরা অর্থ সংগ্রহ করে ড্রামের ভেলায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছে মানুষ। প্রশাসন বলছে বড় বাজেট না থাকায় নতুন করে সেতু নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না।
সরেজমিনে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্ব ধনীরামপুর গ্রামে দেখা যায় স্থানীয় সব বয়সী মানুষজনের ভোগান্তির চিত্র। দড়ি দিয়ে ড্রামের ভেলা টেনে খাল পারাপার করছে তারা। এখন পানি কম থাকায় পারাপারে সমস্যা কম হলেও বর্ষা মৌসুমে ভীষণ ঝুঁকি হয়ে দাঁড়ায়। খালে প্রচন্ড গ্রোত থাকায় ড্রামের ভেলা ভেসে যাওয়ার মত অবস্থা হয়। তখন স্কুল-কলেজগামি শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির মধ্যে পারাপার করতে হয়। অনেক সময় পানিতে পরে যায় তারা। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষিকাজে জড়িত মানুষ এবং গুরুতর রোগীদের এসময় ভীষণ সমস্যায় পরতে হয়। নির্মাণের তিন মাসের মধ্যেই সেতুটি ডেবে যাওয়ায় এর সুফল থেকে বঞ্চিত হয় গ্রামবাসী। বড় ধরণের অনিয়ম হলেও তদন্ত প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করা করা হয়নি। সাজা হয়নি দায়ী ব্যক্তিদের। ফলে হতাশ এই এলাকার মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে খালের ওপর দিয়ে আবাসনে যাওয়ার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধীনে ৩০ লাখ ৭৭ হাজার ৬৫৬ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ৪০ ফুট দৈর্ঘের সেতুটি। ফুলবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কাজটির তদারকি করেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এটিএম দেলোয়ার হোসেন টিটু সেতুটি নির্মাণ করেন। কিন্তু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার মাত্র দুই/তিন মাসের মধ্যে সেতুটি দেবে গিয়ে উল্টে যায়। পরে বন্যার পানির চাপে সেতুর সংযোগ সড়কও বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে। ফলে স্বপ্নের সেতুর এমন পরিণতিতে পূর্বের ভোগান্তিতে পরেছে এলাকার মানুষ। প্রতিদিন এই খালের ওপর দিয়ে পারাপার করা শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, চাষাবাদকারী, অসুস্থ্য রোগী ও সাধারণ মানুষ পরেছে চরম বিপাকে। গত তিন বছর ধরে দেনদরবার করেও মেলেনি সমাধান। ফলে নিজেদের উদ্যোগে ড্রামের ভেলা করে ঝুঁকির মধ্যে পারাপার করছে তারা। এই খালে টেকসই সেতু নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর।

স্থানীয় অধিবাসী কামরুল, হাসান আলী ও মজিবর রহমান জানান, নিম্নমানের কাজের ফলে সেতুটি ভেঙে ডেবে গেছে। অথচ অফিস বলছে বন্যায় ভেঙে গেছে।

ওই এলাকার শিক্ষার্থী নুশরাত, হামিদা ও জান্নাতী জানায়, ঈদের আগের দিন সেতুটি ভেঙে যায়। আমরা অনেক আশা নিয়ে সেতুটি দিয়ে পরাপার করবো বলে ভেবেছি কিন্তু সব আনন্দ মøান হয়ে গেল। এখন আবার আমাদেরকে কষ্ট করে খাল পারাপার করতে হচ্ছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বাররাও গ্রামবাসীর কষ্ট দূর করার জন্য কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।

এ ব্যাপারে দায় এড়িয়ে ফুলবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সবুজ কুমার গুপ্ত জানান, বন্যার কারণে সেতুটি ভেঙে গেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও দুদক থেকে তদন্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আপনারা খোঁজখবর নিতে পারেন। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে পরবর্তীতে বড় ধরণের কোন প্রকল্প প্রস্তাবনা নেয়া হলে আমরা উক্ত নির্দশনা অনুযায়ী সেখানে পদক্ষেপ নিবো।

ভোগান্তির বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বিষয়টি আমার নজরে এসেছে।
এ ব্যাপারে তাৎক্ষনিকভাবে স্থানীয় প্রশাসনকে অস্থায়ী ভিত্তিতে বাঁশের সেতু নির্মাণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে সেতু নির্মাণের বিষয়টি আমরা খেতিয়ে দেখছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ