Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী প্রস্তাব

| প্রকাশের সময় : ২২ মে, ২০২২, ১২:০২ এএম

জাতিসংঘের মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেসের আমন্ত্রণে প্রথমবারের মতো ‘চ্যাম্পিয়ন্স গ্রুপ অফ গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স ফর ফুড, এনার্জি অ্যান্ড ফাইন্যান্স’-এর বৈঠকে গত শুক্রবার রাতে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে তিনি মহামারি করোনা থেকে বের হয়ে আসার প্রচেষ্টার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রেক্ষিতে সৃষ্ট বিশ্ব সংকট মোকাবেলায় চারটি প্রস্তাব তুলে ধরেন। প্রস্তাবে তিনি নিত্যপণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা নির্বঘ্নি করার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, সংকট মোকাবেলায় প্রয়োজন বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা নির্বিঘ্ন করা। এটা পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে। এছাড়া উন্নত অর্থনীতি ও বহুপক্ষীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। স্বল্পোন্নত ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর শুল্কমুক্ত-কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার দেয়ার পাশাপাশি সহযোগিতা দিতে হবে। বিশ্বে খাদ্য সংকট ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে কি করতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে সুচিন্তিত ও সুচারুভাবে তুলে ধরেছেন। তাঁর এ বক্তব্য শুধু সময়োপযোগী নয়, জরুরি পরিস্থিতিতে কি করা উচিৎ, তা সুনির্দিষ্টভাবে তাতে বিধৃত হয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর এমন প্রস্তাবকে স্বাগত জানাই।

বিগত প্রায় তিন বছর করোনা মাহামারি বিশ্বকে পর্যুদস্ত করে তুলেছে। লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু এবং সাটডাউন, লকডাউনের কারণে পুরো বিশ্ব অচল হয়ে পড়ায় অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো চরম অর্থনৈতিক সংকটে নিপতিত হয়েছে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো তাদের অর্থনীতি সচল রাখতে ব্যাপক প্রণোদনা ও ভর্তুকি কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। করোনা মহামারির প্রকোপ কমে আসার সাথে সাথে অনাকাক্সিক্ষতভাবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের সূত্রপাত হয়েছে। পুরো বিশ্ব যখন মহামারি কাটিয়ে অর্থনীতিকে পুনরায় দাঁড় করানোর প্রচেষ্টারত, ঠিক সে সময়ে এ যুদ্ধ যেন গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে উন্নত বিশ্বের ক্ষতি কম হলেও, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রার জন্য এ যুদ্ধ ‘বিনা মেঘে বজ্রপাতে’র মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘœ ঘটায় হু হু করে দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিতে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় জীবনযাপন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে গবেষকরা বলেছেন, এ যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দুর্ভিক্ষ অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। শ্রীলঙ্কার মতো দেশ অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। পাকিস্তানের পরিস্থিতিও ভালো নয়। আফ্রিকার অনেক দেশ অত্যন্ত নাজুক পরিস্থিতিতে রয়েছে। সেখানে প্রায় ২০০ কোটি মানুষ দুর্ভিক্ষের শিকার হতে পারে বলে শঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশ কৃচ্ছসাধন এবং অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি বন্ধ করাসহ সরকারি ব্যয় সংকোচননীতি অবলম্বন করছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনা থেকে বের হয়ে আসার এই সময়ে এমন একটি যুদ্ধকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররাই বস্তুত আহ্বান জানিয়েছে। তাদের ক্ষুদ্র স্বার্থসিদ্ধির জন্য পুরো বিশ্বের ওপর এই যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে। অস্ত্র বিক্রির স্বার্থে এ যুদ্ধ বাঁধানো হয়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা ইতোমধ্যে মতামত ব্যক্ত করেছেন। অনেকে এ কথাও বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার ক্ষমতা ধরে রাখা এবং পোক্ত করার জন্য এ যুদ্ধে ইন্ধন দিয়েছেন। অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলনস্কির অদূরদর্শী ও অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্তও এ যুদ্ধ বাঁধানোর পেছনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। এ যুদ্ধের পরিণতি হিসেবে কিছু মানুষের স্বার্থ রক্ষা হলেও পুরো বিশ্ব ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় সবকিছুর ওপর তার ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে। গম ও ভোজ্যতেলের অন্যতম উৎস ইউক্রেন হওয়ায় সেখান থেকে তা সরবরাহ করা যাচ্ছে না। তেল-গ্যাস সরবরাহেও বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। রাশিয়ার সাথে বিভিন্ন দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য থাকায় তাতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য এবং পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার জেরে বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নাজুক অবস্থার দিকে ধাবিত।

বিশ্ব অর্থনীতিকে স্থিতিশীল ও চাঙ্গা করতে এবং দুর্ভিক্ষবস্থা ঠেকাতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের কোনো বিকল্প নেই। বিশ্বকে এমন এক অস্থিতিশীল ও মানবজাতিকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররাই দায়ী। তাদের অবিমৃষ্যকারী সিদ্ধান্ত এবং যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়ার কারণে যদি বিশ্বে দুর্ভিক্ষ শুরু হয় এবং তাতে মানুষের মৃত্যু হয়, তবে এর জন্য তারাই দায়ী হবে। তাদেরকে বিশ্বের এই নাজুক পরিস্থিতি উপলব্ধি করে এখনই এই ‘যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা’ বন্ধ করতে হবে। যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। কেবল লিপ সার্ভিস দিলে হবে না। বিশ্বের এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে জাতিসংঘকে যুক্তরাষ্ট্রের লেজুড়বৃত্তি থেকে বেরিয়ে নিজ দায়িত্ব পালনে যথাযথ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। মনে রাখতে হবে, জাতিসংঘ সৃষ্টি হয়েছে মানবজাতির কল্যাণ এবং যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে পরিত্রাণের জন্য। আমরা দেখছি, অনাকাক্সিক্ষত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে জাতিসংঘের যে ভূমিকা রাখা অপরিহার্য, তা সে রাখতে পারছে না। জাতিসংঘ যদি এ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়, তাহলে যুদ্ধের দায় এবং বিশ্বের মানুষের দুর্দশার দায়ভার তার ওপরও বর্তাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী প্রস্তাব
আরও পড়ুন