Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নারায়ণগঞ্জে হবে কন্টেইনার-বাল্ক টার্মিনাল নদীপথে ব্যবসা-বাণিজ্য হবে সমৃদ্ধশালী

মো. হাফিজুর রহমান মিন্টু , নারায়ণগঞ্জ থেকে | প্রকাশের সময় : ২২ মে, ২০২২, ১২:০১ এএম

অভ্যন্তরীণ নৌ-পথে চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা বন্দর থেকে কন্টেইনার আসা-যাওয়ার সুবিধায় বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জের খানপুরে নির্মিত হবে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ও বাল্ক টার্মিনাল। এতে নদীপথে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক ব্যবসা-বাণিজ্য হবে সমৃদ্ধশালী। ৩৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি ২০২৩ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম, মোংলা ও অন্যান্য বন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ নৌ-পথের মাধ্যমে বহন করা কন্টেইনার ওঠানামা, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্যের সক্ষমতা উন্নয়ন, কার্গো ট্রাফিকের চাহিদা পূরণে ট্রানজিট ও বহুমুখী আরসিসি জেটি সুবিধা থাকবে নতুন এ প্রকল্পে। দুই লাখ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন, সাধারণ অবকাঠামো, ১৩ হাজার ২৫০ মিটার পোর্টওয়ার্ক নির্মাণ, ৪৭ হাজার ৮২০ বর্গমিটার কার্গো টার্মিনাল অবকাঠামো, কন্টেইনার, কার্গো হ্যান্ডেলিং যন্ত্রপাতি ও দুটি যানবাহন কেনা হবে। এছাড়া থাকবে অভ্যন্তরীণ বিদ্যুৎ লাইটিং ও গ্যাসলাইনের কাজ।

নারায়ণগঞ্জ বাংলাদেশের অত্যন্ত প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ অঞ্চল, যা মধ্যাঞ্চল তথা ঢাকা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চলও। সোনালি আঁশ পাটের জন্য প্রাচ্যের ড্যান্ডি নামে পরিচিত শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত একটি বিখ্যাত নদীবন্দর, যা প্রায় শতাধিক বছরের পুরোনো। বর্তমানে গার্মেন্টস, সিমেন্ট, হোসিয়ারি শিল্পসহ বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিজের জন্য সুপরিচিত। ফতুল্লার এনায়েতনগর এলাকায় অবস্থিত বিসিক শিল্পনগরীতে প্রায় ১২ থেকে ১৫শ গার্মেন্টস আছে। এগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ গার্মেন্টসই নিট গার্মেন্টস।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাটকল আদমজী নারায়ণগঞ্জে ছিল, যা বন্ধ করে বর্তমানে আদমজী ইপিজেড গড়ে তোলা হয়েছে। সবচেয়ে বড় সারের পাইকারি বাজার নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত। দেশের প্রধানতম লবণ কারখানা ও নির্মাণসামগ্রীর পাইকারি বাজারের জন্য ফতুল্লা বিখ্যাত। দেশের প্রধান সিমেন্ট কারখানাগুলো নারায়ণগঞ্জ সদর ও সোনারগাঁ উপজেলার শীতলক্ষ্যা নদীর তীরজুড়ে গড়ে উঠেছে। রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁ অঞ্চলের জামদানি এবং মসলিনের কাপড় তৈরির ইতিহাস প্রায় সাড়ে চারশ’ বছরের পুরোনো।

নারায়ণগঞ্জের খানপুরে ‘অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে রাজধানী ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় কন্টেইনার, বাল্ক পরিবহন ব্যবস্থা বেগবান হবে। উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দেবে ভবিষ্যতে নতুন শিল্প স্থাপনে। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুর, সাভার, মানিকগঞ্জ, নরসিংদীসহ উত্তরবঙ্গের কতিপয় জেলায়ও কন্টেইনার পরিবহন চালু করা যাবে।

এছাড়া আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধিসহ ঢাকা, গাজীপুর, সাভার, মানিকগঞ্জ, নরসিংদীসহ উত্তরবঙ্গের জেলায়ও ক্রমবর্ধমান শিল্পায়নসহ অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার জাহাজ চলাচলের মাধ্যমে কন্টেইনার পরিবহন ব্যবস্থা সুগম হবে। এতে নতুন উদ্যোক্তারা উৎসাহিত হবে শিল্প স্থাপনে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিবেচনায় স্থলপথের চেয়ে নৌ-পথে পণ্য পরিবহন সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হবে। ব্যবসা কেন্দ্র, স্থানীয় জনসংখ্যার আয়ের স্তর, ক্রয়ক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক ইতিবাচক প্রভাব থাকবে। জলপথে মালবাহী পরিবহন স্থানান্তরের কারণে প্রত্যাশিত উন্নতি হবে বায়ুমানের।

ভারতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ফিজিবিলিটিতে উল্লেখ করে, নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের মাধ্যমে কন্টেইনার ও বাল্ক পণ্য পরিবহনের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। নারায়ণগঞ্জের খানপুরে ‘অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ও বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ’ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে স্ট্যাডি রিপোর্ট অনুযায়ী প্রথম পর্যায়ে বছরে ৪৮ হাজার টিইউস কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের উপযোগী হবে। প্রকল্পের জন্য ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ে সড়কের সঙ্গে খানপুরের সংযোগ স্থাপনে নির্মাণ করা হবে একটি ফ্লাইওভার ও লুপ।

এ প্রকল্পের বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ-এর পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন বিভাগ) বলেন, ‘ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জ ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এখানে নানা পণ্যের কন্টেইনার বাড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জের খানপুরে কন্টেইনার ও বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। আমরা প্রথমে নিজেরাই (বিআইডব্লিউটিএ), পরে সরকারি অর্থায়নে এটা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

এখান থেকে কন্টেইনার সরাসরি বিদেশে যেতে পারবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা পানির ড্রাফটের ওপর নির্ভর করে। কারণ পানির গভীরতা কম থাকলে তো বড় বড় জাহাজ চলাচল করতে পারবে না। তবে ছোট ছোট জাহাজ যাতে সহজেই চট্টগ্রাম থেকে যাতায়াত করতে পারে সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে নারায়ণগঞ্জ থেকে সরাসরি কন্টেইনার বিদেশে নেওয়ার একটা পরিকল্পনা সামনে থাকবে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ