Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের পর কমনওয়েলথের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ মে, ২০২২, ৮:২৪ পিএম

ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ সিংহাসনে আরোহণের ৭০তম বছর উদযাপন করছেন। কমনওয়েলথ অব নেশনসের সৃষ্টিতে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। এই সংগঠনটি তার অন্যতম গর্বের এক অর্জনও। কিন্তু তার রাজত্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পর এই সংগঠনটির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।-রয়টার্স

ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে কমনওয়েলথের সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯৫২ সালে ব্রিটিশ রানির আসনে বসার সাথে সাথে তিনি কমনওয়েলথেরও প্রধান হন। এর তিন বছর পর লন্ডন ঘোষণার মাধ্যমে এই সংগঠনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বর্তমান আকারে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে গঠন করা হয়। এখন বিশ্বের বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর একটি কমনওয়েলথ। এর সদস্য সংখ্যা ৫৪; যার বেশিরভাগই ব্রিটেনের সাবেক উপনিবেশ। সংস্থাটির সদস্য দেশগুলোতে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ প্রায় ২৫০ কোটি মানুষ বসবাস করেন।

৯৬ বছর বয়সী রানি এখনও এই সংস্থার প্রধান। তবে সংস্থাটি ইতোমধ্যে সেকেলে এবং অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে বলে অনেকে মন্তব্য করছেন। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের ব্রিটিশ এবং কমনওয়েলথ ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ফিলিপ মারফি বলেন, আমি মনে করি সম্ভবত কমনওয়েলথ ঐতিহাসিকভাবে তার গতিপথ পেরিয়ে এসেছে। এবং আপনি এখন আসলে যা দেখছেন তা হল একটি সংস্থার ভূত। কমনওয়েলথ সদস্যদের মধ্যে ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং কানাডার মতো ধনী দেশ থেকে শুরু করে জনবহুল ভারত, সেই সাথে নাউরুর মতো ক্ষুদ্র প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্রজাতন্ত্রও রয়েছে। যারা এখনও তাদের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রানিকে রেখেছেন।

সমর্থকরা বলেছেন, গণতন্ত্র, উন্নয়নের প্রচার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সমস্যা মোকাবিলায় গুরুত্বারোপসহ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং বাণিজ্য সংযোগ বৃদ্ধির নেটওয়ার্ক হিসেবে কাজ করছে সংস্থাটি। যে কারণে বার্বাডোজ গত বছর যখন ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে ক্যারিবীয় প্রজাতন্ত্র হয়ে ওঠে, তখনও কমনওয়েলথের সাথে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। বার্বাডোজ-ভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা ক্যারিবিয়ান মুভমেন্ট ফর পিস অ্যান্ড ইন্টিগ্রেশনের সাধারণ সম্পাদক ডেভিড ডেনি বলেন, আফ্রিকার অনেক দেশের পাশাপাশি ক্যারিবীয় অনেক দেশের জন্যও কমনওয়েলথ একটি সুবিধাপ্রদানকারী সংস্থা। কারণ এই সংস্থাটি আমাদেরকে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং কানাডার মতো দেশের সাথে সংযুক্ত করে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবৈষম্যের অবসান ঘটাতে সংস্থাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। মারফি বলেছেন, ক্ষুদ্র এবং কম শক্তিশালী সদস্যরা এটির ব্যবহার করতে পারে। তবে সংস্থাটির ব্যাপক সুবিধার ব্যাপারে তার অবিশ্বাস রয়েছে। রয়টার্সকে তিনি বলেন, গণতন্ত্র এগিয়ে নেওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন এবং লিঙ্গ বৈষম্য মোকাবিলার গুরুত্ব সম্পর্কে কথা বলে কমনওয়েলথ। কিন্তু কমনওয়েলথের আন্তর্জাতিকভাবে যৌক্তিক কোনও কাঠামো নেই, যাতে এসব সমস্যার যেকোনো একটির সমাধান করা যায়।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এবং ঔপনিবেশিকতার উত্তরাধিকারের সাথে পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের বিষয়গুলোর মতো নতুন উদ্দেশ্য নিয়ে সংস্থাটি কাজ করতে পারতো বলে মনে করেন মারফি।

গণহত্যা ও দায়

ডেভিড ডেনি বলেন, ব্রিটেনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আমাদের গণহত্যা ও হত্যা করা হয়েছিল। কমনওয়েলথের সদস্য দেশগুলোকে রাজপরিবার থেকে, ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে, সব ব্রিটিশ কোম্পানির কাছ থেকে সেই ভোগান্তির জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করা উচিত। কারণ তারা কমনওয়েলথ দেশগুলোতে আফ্রিকান জনগণের দাসত্ব এবং শোষণের মাধ্যমে লাভবান হয়েছে। সংস্থাটিকে আরও একটি প্রশ্নের জবাব দিতে হবে, ব্রিটিশ রানির পর এর নেতৃত্ব দেবেন কে? ডেনির যুক্তি, কমনওয়েলথের নেতৃত্ব ব্রিটিশ রাজপরিবার থেকে আর হওয়া উচিত নয়। তবে ২০১৮ সালে কমনওয়েলথের নেতারা রানির ছেলে এবং উত্তরাধিকারী প্রিন্স চার্লসকে এলিজাবেথের উত্তরসূরি হওয়া উচিত বলে ঐক্যমত পোষণ করেছিলেন। যদিও এই দায়িত্ব বংশগত নয়।


প্রিন্স চার্লসের বড় ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম চলতি বছরের শুরুর দিকে ক্যারিবীয় কয়েকটি দেশ সফর করেন। সেই সময় তিনি ব্যাপক প্রতিবাদের মুখোমুখি হন। প্রতিবাদকারীরা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সময় শোষণ এবং বঞ্চনার শিকার হওয়ায় এখন ক্ষতিপূরণের দাবি এবং দাসত্বের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানান। সেই সময় ব্রিটিশ এই প্রিন্স কমনওয়েলথের দায়িত্ব নেবেন না বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

উইলিয়াম বলেছিলেন, ভবিষ্যতে কমনওয়েলথ নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তার পরিবার থেকে কাকে বেছে নেবে তা আমার মাথায় নেই। আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল কমনওয়েলথ পরিবার— যারা জনগণের ভালো ভবিষ্যৎ তৈরির সম্ভাবনা এবং সেবা ও সহায়তার জন্য এটি প্রতিষ্ঠা করেছিল। তবে সংগঠনটির বর্তমান প্রধানের কাছে এর গুরুত্ব নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই।

গত মার্চে কমনওয়েলথের বার্ষিক বার্তায় রানি এলিজাবেথ বলেছিলেন, আজ একটি আধুনিক, প্রাণবন্ত এবং সংযুক্ত কমনওয়েলথ পর্যবেক্ষণ করতে পারাও অত্যন্ত সাফল্যের। যা আমাদের সময়ের মহৎ সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সাথে ইতিহাস এবং ঐতিহ্যগত সম্পদকে একত্রিত করেছে। কমনওয়েলথ অনন্য উচ্চতায় দাঁড়িয়ে আছে। আর এই কৃতিত্ব এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবার। মারফি বলেন, এই সংস্থাটি বেঁচে থাকবে কিনা সেটি নিয়ে তার সংশয় আছে। এটি এখন মানুষের মনযোগ তেমন আকর্ষণ করে না।

তিনি বলেন, আমি মনে করি এই সংস্থাটি থমকে যাবে। আমি এটাতে শেষ রেখা টানার ইচ্ছে দেখতে পাচ্ছি না। আর এটি করার ক্ষমতা কার আছে, আমি সেটিও দেখতে পাচ্ছি না। আমার মতে, বিপদ হল সংস্থাটি ধীরে ধীরে নাগরিকদের কাছে ক্ষমতাহীন, গুরুত্বহীন এবং জৌলুসহীন হয়ে উঠবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ