Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বন্যার্তদের খাদ্য পুষ্টি ও স্বাস্থ্য

| প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০২২, ১২:৩২ এএম

সিলেটে সুরমা ও কুশিয়ারাসহ কয়েকটি নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। সুরমা ও কুশিয়ারার পানি ইতোমধ্যেই বিপদসীমার একশো সেন্টিমিটারের বেশি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমার উপচে ওঠা পানিতে তলিয়ে গেছে সিলেট নগরীর নিম্নাঞ্চল। বেশ কিছুদিন ধরে পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণের কারণে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চল ছাড়াও দেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য নদীর পানিও বাড়ছে। ভারী বর্ষণের পাশাপাশি উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে কেবল যে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে তা নয়, জান-মালেরও ক্ষতি হচ্ছে। বাড়িতে হঠাৎ বন্যার পানি উঠে পড়লে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে বাসিন্দাদের। তবে আগে থেকে এই অঞ্চলের মানুষের জন্য বন্যার টেকসই পূর্বাভাস দিয়ে সতর্ক করতে পারলে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব বলে আবহাওয়াবিদরা বলছেন।

বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের উপরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ভারী বর্ষণের পানি পাহাড়ি এলাকা থেকে প্রবল গতিতে নিচে নেমে আসার কারণে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সামনে আরো কয়েকদিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। তাই আমরা বন্যাদুর্গতরা সচেতন হলে এবং কৌশল অবলম্বন করলে বিভিন্ন রকম রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা- বন্যার সময় সবচেয়ে বেশি পানিবাহিত রোগজীবাণুতে ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশি থাকে। এজন্য যে ব্যবস্থা নিতে হবে-
* পানি কমপক্ষে ২০ মিনিট ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে পান করতে হবে।
* পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি পানিতে কমপক্ষে ৩০ মিনিট রেখে দিলে পানি পান করার উপযোগী হয়।
* ১০ লিটার (এক কলসী) পানিতে এক চা চামচ ফিটকিরির গুঁড়ো দিয়ে পানি ভাল করে নেড়ে ৬ ঘন্টা রাখার পর খাওয়ার উপযোগী হবে।

* এক লিটার পানিতে এক চিমটি ব্লিচিং পাউডার দিয়ে এক ঘন্টা রেখে দিলে পানি বিশুদ্ধ হয়।
* বন্যার পানিতে টিউবওয়েলের গোড়া ডুবে গেলে কমপক্ষে ৩০ মিনিট চেপে পানি ফেলে দিয়ে সংগ্রহ করবেন। এই পানিতে জীবাণু থাকার সম্ভাবনা মনে করলে ফুটয়ে পান করবেন।
* বিশুদ্ধ পানি দিয়ে থালাবাসন, গ্লাস, হাঁড়িপাতিল, শাকসবজি পরিষ্কার করতে হবে।
* কুয়া, ওয়াসা বা সাপ্লাইয়ের পানিও বিশুদ্ধ করে পান করতে হবে।

* কোন অবস্থাতেই পানি বিশুদ্ধ না করে পান করা, ধোয়া এবং রান্নার কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
* গোসলও পরিষ্কার বিশুদ্ধ পানি দিয়ে করবেন।
* টিউবওয়েলের পাশে কখনও মল ও আবর্জনা ফেলবেন না।
* শিশুদের পায়খানায় মলত্যাগ করাবেন। কেউ পানিতে বা যেখানে সেখানে মলত্যাগ করবেন না। এতে রোগজীবাণু বেশি ছড়ায়।

* পশুপাখি মারা গেলে মাটিতে পুুঁতে রাখবেন।
*বাসি, পচা, দুর্গন্ধ, ঠাণ্ডা, খোলা ও সন্দেহজনক খাবার খাবেন না।
* হাত-পায়ের নখ নিয়মিত কাটবেন যাতে নখের ভিতর ময়লা না জমে।
* খালি পায়ে না থেকে স্যান্ডেল পায়ে থাকবেন। অন্যথায় কৃমি হবার সম্ভাবনা আছে।
* বন্যার পানিতে প্রচুর জীবাণু থাকে। তাই অকারণে বন্যার পানি স্পর্শ করবেন না। বন্যার পানি বেশি সময় স্পর্শের প্রয়োজন হলে হাতে ও পায়ে সরিষার তেল মেখে নেবেন। অন্যথায় ঘা হবার সম্ভাবনা আছে। ঘা হলে দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে।

* মাঝে মধ্যে নিম বা নিশিন্দার পাতি ভিজানো পানি ফুটিয়ে গোসল করলে খোসপাঁচড়া সেরে যাবো।
* মলত্যাগের পর ছাই, বালু বা সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করবেন।
* খাবার সব সময় ঢেকে রাখবেন।

* ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে স্যালাইন খাওয়াবেন এবং ঘন ঘন খেতে দেবেন। আতপ চাল গুঁড়ো করে লবণ মিশিয়ে জাউ তৈরি করে খাওয়াবেন। লবণ ও চিনি-গুড় দিয়ে স্যালাইন তৈরি করে খাওয়াতে পারেন। শিশুদের যথারীতি মায়ের দুধ খাওয়াবেন।
* শিশু বমি করলে ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ৪-৫ মিনিট পর পর স্যালাইন খাওয়াবেন।

খাদ্য ও পুষ্টি- বন্যার্তদের এমন খাবার খাওয়া উচিত যা অল্প খেলেই বেশি শক্তি পাওয়া যায় এবং মলত্যাগ কম হয়। কারণ রান্না করাও কষ্ট এবং মলত্যাগের স্থান পাওয়াও মুশকিল। দেহে বেশি খাদ্যশক্তি সরবরাহকৃত খাদ্যগুলো (প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যোপযোগী) হলো বাদাম ভাজা-৬৫৯, কাঁচা বাদাম ৬৬৫, খেজুর ৩২৪, ছোলা- ৩৭১, নারকেল- ৩৭৬, মুড়ি-৩২৫, চিড়া-৩৪৬, আখের গুড়-৩৮৩, চিনি-৩৯৪, মসুরডাল-৩৪৩, মুগডাল-৩৪৮, চাল-৩৪৬, আটা-৩৪১ ও শিমের বীচি-৩৪৭ কিলোক্যালরি। জাতিসংঘের তথ্য মোতাবেক বাংলাদেশের একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক ২৩১০ ক্যালরি গ্রহণ করা প্রয়োজন।

পচা খাবার এবং দূষিত পানি খেয়ে অসুস্থ হওয়ার চেয়ে না খাওয়া অনেক ভাল। বন্যার সময়ের পুষ্টি ঘাটতি পূরণের জন্য বন্যার পরে প্রচুর পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। বন্যার পানি নেমে যাবার সময় এবং পর পরই বিভিন্ন রকম অসুখবিসুখ হবার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে। তখনও খুব সচেতন থাকতে হবে।

মো: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক ও কলামিস্ট, মোবা: ০১৭১৬২৭০১২০।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যার্তদের খাদ্য পুষ্টি ও স্বাস্থ্য
আরও পড়ুন