Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আগামী মাসে পদ্মা সেতু চালু হলেও ফরিদপুর-কুয়াকাটা ৬ লেন মহাসড়ক এখনো সুদূর পরাহত!

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০২২, ৮:০৮ পিএম

আগামী মাসেই দেশের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষে যান চলাচলে জন্য খুলে দেয়া হলেও এ সেতুর সাথে সংযুক্ত পায়রা বন্দর সহ দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার জাতীয় মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত করার প্রকল্পটি এখনো চরম অনিশ্চয়তার কবলে। ফলে পদ্মা সেতুর সুফল পেতে দক্ষিণাঞ্চলবাসী হয়ত আরো বহু বছর অপেক্ষা করতে হতে পারে। সম্পূর্ণ দেশীয় তহবিলে ইতিহাসের সর্বাধিক ব্যয়বহুল ৩১ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু ও সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে ‘ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেস ওয়ে’ নির্মিত হলেও ভাংগা-বরিশাল-পায়রা-কুয়াকাটা এবং ভাংগা-ফরিদপুর জাতীয় মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীত করণ প্রকল্পটির ‘উন্নয়ন প্রকল্প সারপত্র-ডিপিপি’ পর্যন্ত তৈরি হয়নি।

অথচ ফরিদপুর থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত ২১১ কিলোমিটার বিদ্যমান মহাসড়কের দুপাশে আরো প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমি অধিগ্রহণে ২০১৮ সালে সম্পূর্ণ দেশীয় তহবিলে ১৮শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদনের পরে ৪ বছরেরও বেশী সময়ে তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। এমনকি সর্বশেষ চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে এ ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা থাকলেও আগামী বছরের জুনের আগে তা সম্পন্ন হওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। এমনকি প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা ব্যায় সাপেক্ষ প্রকল্পটির জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত থাকলেও সর্বশেষ তারা এ লক্ষ্যে পুনরায় সম্ভবতা সমীক্ষা সহ এলাইনমেন্ট চূড়ান্ত করে সংশোধিত নকশা প্রণয়নের কথা বলেছে।

ফলে আগামী মাসে পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের সব জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ বাড়তি বিড়ম্বনার সৃষ্টি করবে বলেই মনে করছে পরিবহন বিশেষজ্ঞগন। ফলে দুর্ঘটনার সংখ্যাও বহুগুণ বৃদ্ধির আশংকা করছেন তারা। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু অতিক্রম করে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৬ লেনের এক্সপ্রেসয়ে পৌছলেও সেখান থেকে ৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে বরিশাল, আর ৩০ কিলোমিটার উত্তরে ফরিদপুর শহর এবং ১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে পায়রা ও ২০৩ কিলোমিটার দক্ষিণে কুয়াকাটায় পৌছার সড়ক-মহাসড়কের কোনটিই মানসম্মত নয়। এসব মহাসড়ক এখনো মাত্র ১৮ থেকে ২৪ ফুট প্রস্থ।

ফরিদপুর-বরিশাল-পায়রা-কুয়াকাটা ৬ লেন মহাসড়ক নির্মাণে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ১৮শ কোটি টাকা ব্যায় সম্বলিত ভূমি অধিগ্রহণে একটি প্রকল্প একনেক-এর অনুমোদন লাভ করে। ২০২০-এর জুনে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ করার কথা থাকলেও তা ২০২৩-এর জুনেও তার বাস্তবায়নের খুব একটা লক্ষণ নেই।

এমনকি এ প্রকল্পটির জন্য ২০১৫ সালে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের পরে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন করলেও বরিশাল মহানগরীকে এড়িয়ে বাইপাস নির্মাণের বিষয়টি তাতে অন্তর্ভুক্ত ছিলনা। নগরবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে বাইপাস নির্মাণের সিদ্ধান্ত হলেও তার এলাইনমেন্ট করতে প্রস্তাবিত রেল পথের সাথে কিছুস্থানে সাংঘর্ষিক হবার পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় পথ নকশা নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছে।

ইতোমধ্যে বিদ্যমান জাতীয় মহাসড়কটি বাদ দিয়ে নতুন ৬ লেন মহাসড়ক নির্মাণেরও চিন্তা করেছিল সড়ক অধিদপ্তর। কিন্তু মন্ত্রণালয় বিষয়টিতে সায় না দেয়ায় বিদ্যমান মহাসড়কটিই ৬ লেনে উন্নয়নের সিদ্ধান্ত হলেও কবে এ মহাসড়কের বাস্তব কাজ শুরু হবে, তা বলতে পারছেন না কেউ। আগের প্রকল্প পরিচালক অবসরে যাবার পারে নতুন পিডি’র সাথে বৈঠক করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক পূর্বের সমীক্ষা প্রতিবেদনের ওপর ডিপিপি তৈরিতে তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছে বলে জানা গেছে।

সম্পূর্ণ দেশীয় তহবিলে নতুন সমীক্ষা সহ চূড়ান্ত এলাইনমেন্ট এবং প্রস্তাবিত মহাসড়ক সহ সেতু ও কালভার্ট সমূহের পরিপূর্ণ নকশা প্রণয়নের কথাও বলেছে এডিবি।

খোদ প্রধানমন্ত্রী সহ সড়ক ও সেতু মন্ত্রীও বারবারই দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মহাসড়কগুলো ৬ লেনে উন্নীত করার তাগিদ দিয়ে আসছেন। এসব মহাসড়কগুলোর গুরুত্ব বিবেচনায় ২০১৫ সালে ফরিদপুর-বরিশাল-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়কের জন্য পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হলেও তাদের ত্রুটিপূর্ণ নকশা সহ নানা গলদে ডিপিপি প্রস্তুত হয়নি গত ৭ বছরেও। অপরদিকে ৪ বছর আগে ভূমি অধিগ্রহণের অর্থ দেয়া হলেও সড়ক অধিদপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তার উদাসীনতা ও অবহেলায় তারও কোন অগ্রগতি নেই। বাস্তব অবকাঠামো নির্মাণ শুরু আরো এখনো বহু যোজন দূরে।

এসব বিষয়ে বরিশাল ও গোপালগঞ্জ সড়ক জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সহ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করা হলে সকলেই নানামুখী জটিলতায় কাজের অগ্রগতি ব্যাহত হবার কথা জানা। প্রকল্পটির নতুন পরিচালক নতুন অর্থ বছরে বরাদ্দ পেলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে সম্ভবতা সমীক্ষা সহ বিস্তারিত নকশা তৈরির আশাবাদ ব্যক্ত করে ২০২৩-এর ডিসেম্বরের মধ্যে ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ সম্ভব হবে বলেও জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ