Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

গারো পাহাড়ে দেশীয় মাছের তীব্র আকাল

বংশবিস্তারে প্রতিকূল পরিবেশ

এস. কে. সাত্তার, ঝিনাইগাতী (শেরপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০২২, ১২:০০ এএম

শেরপুরের গারো পাহাড়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় নদী-নালা, খাল-বিল ও জলাশয় শুকিয়ে প্রাকৃতিক দেশি মাছের চলছে তীব্র আকাল। বংশবিস্তারে ঘটেছে মারাত্মক বিপর্যয়। জলবায়ু পরিবর্তণের প্রভাবে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না থাকায় নদী-নালা-খাল-বিল শুকিয়ে যেমন প্রাকৃতিক মৎস্য সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে। তেমনি ঘটেছে পরিবেশ বিপর্যয়। শত শত জেলেও বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
সাধারণত মে-জুনে প্রাকৃতিক দেশিয় মাছ ডিম ছাড়ে। ডিম ফুটে জুলাই-আগস্টে। পোনা মাছ আকারে এই সময়টায় বড় হয়। কিন্ত গত বছর জলবায়ু পরিবর্তণের প্রভাবে মে-জুন-জুলাই পর্যন্ত বলতে গেলে বৃষ্টিই হয়নি। উচ্চ তাপমাত্রায় অনেক মাছের ডিম শুকিয়ে গেছে মাছের পেটেই। জুলাইয়ের শেষে সামান্য বৃষ্টিতে পানি এলেও কৈ, মাগুর, সিং, টেংড়া, পুটি, দারকিনা, মলা, চেলা, ঢেলা, চিংড়ি ইত্যাদি ছোট মাছ ছাড়াও প্রাকৃতিক বড় বড় মাছ পাওয়া যেত। কিন্ত বর্তমানে চলছে দেশিয় প্রজাতির মাছের তীব্র আকাল। এখনো কিছু প্রকৃতিক মাছ পাওয়া যায়। কিন্ত এবার সে মাছ দেখাই যাচ্ছেনা। মাছের পোনা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছেনা। যাও সামান্য কিছু দেখা যায়, তাও জেলেরা ধরে বিক্রি করছে। ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ি উপজেলা মৎস্য অফিসারগণও উদাসিন, দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলায় দেশিয় মাছ বিলুপ্তির পথে। উপজেলা পর্যায়ে বলতে গেলে মৎস্য বিভাগে চলছে চরম নৈরাজ্য। সেই আদিকাল থেকেই উপজেলা সমূহের নদী-নালা, খাল-বিলে পর্যাপ্ত প্রকৃতিক মাছ পাওয়া যেত। যা চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানে চলে যেত।
কিন্ত গত বছর টানা অনাবৃষ্টি এবং উচ্চ তাপমাত্রায় প্রাকৃতিক মাছ ডিম ছাড়তে না পারায় উপজেলা সমূহে প্রাকৃতিক দেশিয় মাছের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। সংকট দূর করতে সরকার দেশব্যাপী মৎস্য বিভাগের মাধ্যমে প্লাবণ ভূমিতে পোনা অবমুক্ত করে মাছ চাষ সম্প্রসারণের যে কর্মসূচি তাও ভেস্তে গেছে। এ ক্ষেত্রে মৎস্য বিভাগের গাফিলতিকে দায়ী করেছেন পর্যবেক্ষক মহল। প্লাবণভূমিতে মৎস্য চাষ, দিন বদলের সুবাতাস শ্লোগান কাগজপত্রেই সীমাবদ্ধ, সেদিকে সুদৃষ্টি দেয়া জরুরি সরকারের। তবে সুস্থ বিবেক সম্পন্ন চিন্তাশীল ব্যক্তিদের আশংকাÑআগামী বছর প্রাকৃতিক মাছের সংকট আরো তীব্রতর হবে। রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহারও প্রাকৃতিক মাছ ধ্বংসের কারণ বলে সচেতন মহলের ধারণা।
স্থানীয় মৎস্য বিভাগের গাফিলতি, কারেন্ট জালের ব্যাপকতায় খাল-বিল-নদীতে মাছের রেণু ধরায় প্রাকৃতিক প্রজনন প্রচন্ডভাবে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। ঝিনাইগাতীর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাদশা, নলকুড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী ফরসা প্রমুখ জানান, মাত্র ১০/১৫ বছর আগেও ধলী, গজারমারী, নিশ্চিন্দা ইত্যাদি বিলে ১০/১৫ কেজি ওজনের শোল, গজার, বোয়াল, আইর, চিতল ইত্যাদি মাছ পাওয়া যেত। পাওয়া যেত প্রচুর ছোট মাছ। এমন কোন মাছ ছিল না যা নদী-নালা, খাল-বিলে না পাওয়া যেত। অথচ এসব কথা নতুন প্রজন্মের কাছে এখন মনে হবে কল্পকাহিনী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ