Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অবিলম্বে গ্যাসের প্রিপেইড মিটার বসাতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৩১ মে, ২০২২, ১২:০৭ এএম

রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় রোধে গ্যাস-বিদ্যুতে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে সরকার। চলমান রাজস্ব ঘাটতি ও অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় দেশবাসিকে সর্বক্ষেত্রে মিতব্যয়িতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশে গ্যাসের সরবরাহ লাইনে চাপ কম বা অপর্যাপ্ত হওয়ায় গত একদশক ধরে নতুন গ্যাস সংযোগে এক প্রকার নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকার কারণে দেশের আবাসনখাতে বড় ধরনের সংকট চলছে।

হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে না। এমনকি রফতানিমুখী শিল্পখাতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় শিল্পবিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এহেন বাস্তবতাকে সামনে রেখেই ১১ বছর আগে ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসলাইনে প্রিপেইড মিটার বসানোর উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। কিন্তু প্রেপেইড মিটার বসানোর কাজে তিতাসগ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানিসহ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিগুলো এ পর্যন্ত ১০ভাগ গ্রাহককেও প্রিপেইড মিটার দিতে পারেনি। দেশে সর্বমোট প্রায় ৪৩লাখ আবাসিক গ্যাস গ্রাহকের মধ্যে মাত্র ৪ লাখ গ্রাহক প্রিপেইড মিটার পেয়েছে। উল্লেখ্য, দেশে আবাসিক গ্যাস গ্রাহকের সংখ্যা ৪৩ লাগের বেশি। এর প্রায় ৭০ভাগই তিতাস গ্যাসের আওতাধীন। প্রিপেইড মিটার পাওয়া গ্রাহকরা গ্যাসের খরচ ও অপচয় কমিয়ে নিজেদের অর্থের সাশ্রয় এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় বন্ধ করতে ভ’মিকা রাখলেও গ্যাস কোম্পানিগুলোর কাছে তা হয়তো পছন্দ নয়। ডাবল বার্নারে ৯৭৫ টাকা বিল পরিশোধকারী গ্রাহক প্রিপেইড মিটার পাওয়ার পর প্রায় খরচ অর্ধেক কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে বলে এক রিপোর্টে জানা যায়।

প্রিপেইড মিটার বসানো হলে প্রায় ৪০ ভাগ রাজস্ব কমে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। মিটার বসানোর কারণে খরচ কমানো এবং অপচয় রোধের মাধ্যমে নতুন লাখ লাখ গ্রাহককে গ্যাস সংযোগ দিয়ে রাজস্ব বাড়ানোর কথা তাদের মাথায় আসেনি কেন, সেটাই প্রশ্ন। লাখ লাখ অবৈধ সংযোগ, ছিদ্র ও ত্রুটিযুক্ত পাইপলাইনের মাধ্যমে বছরে কোটি কোটি ঘনমিটার গ্যাসের অপচয়-দুর্নীতিকে সিস্টেম লস হিসেবে দেখানো হচ্ছে। অথচ অবৈধ সংযোগ দিয়ে তিতাস গ্যাস কোম্পানির লাইনম্যান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোটি কোটি টাকা নিজেদের একাউন্টে জমা করছে। বার বার গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়ে এসব অপচয়-দুর্নীতির খেসারত গুণতে বাধ্য করা হচ্ছে সাধারণ ভোক্তাদের। গ্যাসের নতুন সংযোগ বন্ধ রেখে হাজার হাজার অবৈধ সংযোগ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার তথ্য ইতিমধ্যে দুদকের অনুসন্ধানেও বেরিয়ে এসেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তিতাস গ্যাসের অডিট রিপোর্টে অনুমিত গ্যাস সরবরাহ ১০ হাজার ৩১৭ কোটি৬৯ লাখ ঘনফুট হলেও বাস্তবে প্রায় ১ হাজার ৪৭৭কোটি ৯৪ লাখ ঘনফুট কম সরবরাহ হয়েছিল। তথাপি কোটি কোটি ঘনফুট সিস্টেম লস দেখানো হয়েছে। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর ধরে।

করোনাকালীন মন্দা ও ইউক্রেন যুদ্ধের আগে থেকেই দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে মন্দা চলছিল। পরিবর্তিত বাস্তবতায় আয় কমে যাওয়া এবং পণ্যমূল্য বৃদ্ধির খড়গ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। এহেন বাস্তবতায় আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে আবারো জ্বালানিসহ গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কথা শোনা যাচ্ছে। বিশেষত আবাসিক খাতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। দুর্নীতি-অপচয় ও কথিত সিস্টেমলস কমিয়ে সংযোগবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে রাজস্ব বৃদ্ধি করা সম্ভব। গ্রাহকদের প্রি-পেইড মিটার সরবরাহ দ্রতায়িত করার মাধ্যমে অপচয়-দুনীতি রোধ ও সংযোগ বৃদ্ধির কৌশল বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রায় অর্ধকোটি আবাসিক ও শিল্পকারখানার গ্রাহক অপচয় রোধ করার পাশাপাশি পাইপলাইনের ত্রুটিবিচ্যুতি মেরামত ও সকল পর্যায়ে মিতব্যয়ী হলে লাখ লাখ নতুন গ্যাস সংযোগ দেয়া সম্ভব। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বে খাদ্য ও সরবরাহ ও উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বড় ধরণের পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। দেশের সার কারখানাগুলোতে নিরববিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করে দেশের কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আবাসিক ও শিল্পখাতে গ্যাস-বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার সরবরাহ ত্বরান্বিত করা অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বৈধ সংযোগের দরজা উন্মুক্ত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। পুরনো গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উন্নয়ন এবং সমুদ্রে সম্ভাব্য গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে গ্যাস উত্তোলন শুরুর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দুর্নীতি ও অপচয়ের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লোপাটের সাথে জড়িত ব্যক্তিরাই প্রি-পেইড মিটার বসানোর ক্ষেত্রে ধীরগতির খোড়াযুক্তি দেখিয়ে দুর্নীতি অব্যাহত রাখার কৌশল গ্রহণ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকারের শীর্ষ মহল থেকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্যাসের প্রিপেইড মিটার
আরও পড়ুন