Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নির্বাচন কমিশনার আড়াই ঘণ্টা পর ছাড়া পেলেন

বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে রাজপথে পোশাক শ্রমিক : পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া : রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজট

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ জুন, ২০২২, ১২:০১ এএম

কয়েক দফা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু পোশাক শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হয়নি। এ কারণে রাজপথে আন্দোলন শুরু করেছে শ্রমিকরা। গত শনিবার রাজধানীর মিরপুর এলাকায় কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিক সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে। গতকালও দিনভর মিরপুর এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে তারা। এক পর্যায়ে নির্বাচন কমিশনারের মো. আলমগীর হোসেনের গাড়ি আটকে দেন আন্দোলনরত শ্রমিকরা। পরে প্রায় ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট পর পুলিশের সাহায্যে শ্রমিকদের হাত থেকে ছাড়া পান তিনি। এছাড়া মিরপুর এলাকায় পুলিশের সাথে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এমনকি তাদের আন্দোলনে পুরো রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হতে দেখা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ইসি মো. আলমগীর হোসেনের গাড়ি আটক করে শ্রমিকরা। পরে তিনি গাড়ি থেকে নেমে পুলিশি নিরাপত্তায় মিরপুর-১০ নম্বরের গোলচত্বরে পুলিশ বক্সে অবস্থান নেন। পরে দুপুর ১টায় শ্রমিকদের কাছ থেকে নির্বাচন কমিশনারের গাড়ি ছাড়ায় পুলিশ। পরে তিনি গাড়িতে উঠে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
ডিএমপির মিরপুর বিভাগের এডিসি মো. মাহবুব বলেন, নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর হোসেনের গাড়ি শ্রমিকদের হাত থেকে আমরা উদ্ধার করেছি। পরে উনি গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছেন। নির্বাচন কমিশনার স্যারের গাড়ি নিয়ে অনেক ঝামেলা করেছে শ্রমিকরা।
এদিকে, নির্বাচন কমিশনারের গাড়ি উদ্ধারের পর রাস্তা থেকে শ্রমিকদের সরানোর চেষ্টা করে পুলিশ। এ সময় আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।
জানা যায়, আন্দোলনরত শ্রমিকরা ইট-পাটকেল ছুড়ে গাড়ি ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে মিরপুর।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মিরপুর ১০, ১১, ১৩ ও ১৪ নম্বরে শ্রমিক সকাল থেকে অবস্থান করছিল। কিন্তু দুপুরের আগ পর্যন্ত পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও ১টার পর থেকে শ্রমিকরা রাস্তায় ভাঙচুর শুরু করে। আরও জানা যায়, মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের আশপাশে থাকা বেশ কয়েকটি বহুতল ভবনের কাঁচ ভাঙচুর করেছে শ্রমিকরা।
অপরদিকে, শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন পুরো রাজধানীবাসী।
জানা যায়, বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে গতকাল সকাল থেকে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকার বিভিন্ন পোশাক কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। ফলে মিরপুরের প্রধান সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর এই যানবাহনের চাপ ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে আশপাশের সড়কগুলোতে। এর প্রভাবে বেলার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। রাজধানীর মিরপুর থেকে শেওরাপাড়া, বিজয় সরণি, তেজগাঁও, মহাখালী, বনানী, বিমানবন্দর সড়ক, কালশি, উত্তরা, কচুক্ষেত এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এর বাইরেও প্রায় সকল সড়কেই যানবাহনের দীর্ঘ জটলা সৃষ্টি হতে দেখা গেছে।
ঢাকার অন্যতম প্রবেশপথ গাবতলী-আমিনবাজারেও গাড়ি স্থবির হয়ে যায়। এর ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই স্থানে দাঁড়িয়ে থাকে যানবাহনগুলো। ওমায়ের নামে একজন জানান, বিমানবন্দর থেকে খিলক্ষেত আসতে দেড় ঘণ্টা সময় লেগেছে। পরে বাস থেকে নেমে গন্তব্যে যাই। নাফি হাসান নামে আরেকজন বলেন, বনানী ওভারপাসের ওপর এক ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এরপর গাড়ি সামান্যতম সামনে এগোগুচ্ছে না। এক পর্যায়ে হেঁটে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাই।
ডিএমপির মিরপুর জোনের এডিসি মো. মাহবুব বলেন, শ্রমিকদের মূল আন্দোলন মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর কেন্দ্রিক। এর আশেপাশেও কিছু সড়ক অবরোধ করে রেখেছিল শ্রমিকরা। তিনি বলেন, বিষয়টি সমাধানে শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে শ্রমিক প্রতিনিধিদের বৈঠকে ডাকে। কিন্তু তারা আলোচনা করতে যায়নি। আমরা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি।
তিনি আরো বলেন, শ্রমিকরা প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে দুপুরের দিকে বিভিন্ন স্থাপনা ও গাড়িতে ভাঙচুরের করলে আমরা প্রতিহত করার চেষ্টা করি। শেষে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। এরপর শ্রমিকরা রাস্তা থেকে সরে যায়।
এর আগে গত শনিবার বিকেলে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে চলা বিক্ষোভে মিরপুরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একটি গাড়ি ভাঙচুর করেছেন বিক্ষুব্ধ পোশাক শ্রমিকরা। এ সময় পুলিশের দুটি মোটরসাইকেলেও আগুন দেয়া হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যানজট

১৯ জানুয়ারি, ২০২৩
৯ জানুয়ারি, ২০২৩
১৯ ডিসেম্বর, ২০২২
২৭ নভেম্বর, ২০২২
২৯ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ