Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

এবার মধ্য এশিয়ায় আইএস

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

 সিরিয়া ও ইরাক প্রশাসনের তুমুল প্রতিরোধে মধ্যপ্রাচ্যের মূল ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত দেশ দুটিতে এখন কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়া আইএসের পরবর্তী লক্ষ্য উজবেকিস্তান। সাম্প্রতিক কিছু গোয়েন্দা রিপোর্টে জানা গেছে, এক সময় সোভিয়েত শাসনে থাকা এই দেশটিতে শক্তি বাড়াতে মরিয়া আইএস। সেখানে চলছে তাদের নতুন কার্যক্রম। উজবেকিস্তানের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার মাটিতেও শক্তিশালী সংগঠন গড়তে চাইছে এই গোষ্ঠীটি। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, উজবেকিস্তানের পাশাপাশি আফগানিস্তানের মাটিও অন্যতম লক্ষ্য তাদের। বিশেষজ্ঞদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে প্রথমবারের মতো বড় উদ্দেশ্য নিয়ে এগোচ্ছে তারা। উজবেকিস্তান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং ভারতকে কেন্দ্র করে ইসলামিক স্টেট ইন খোরাসান গঠনের পরিকল্পনা আঁটছে। এতে শঙ্কা প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তালেবান ও আল-কায়েদার কর্মকা-ে এমনিতেই পর্যুদস্ত আফগান জনজীবন। এর সঙ্গে গত কয়েক বছর ধরে দেশটিতে নিয়মিত শক্তি সঞ্চারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আইএস। দেশটিতে আইএস শক্তিশালী হলে চরম নাশকতার আশঙ্কা থাকছে পাকিস্তান ও ভারতে। সম্প্রতি পাকিস্তানে বেশ বড় ধরনের জঙ্গি হামলায় গোষ্ঠীটির জড়িত থাকার খবর পাওয়া গেছে। সাম্প্রতিক কয়েকটি প্রতিবেদনে জানা যায়, তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান ও অন্যান্য সংগঠন থেকে সরাসরি আইএসে যোগ দিচ্ছে অনেক জঙ্গি। তাদের মধ্যে নারীও রয়েছে। পাকিস্তানে শক্তি বৃদ্ধির জন্য আইএস বেছে নিয়েছে আফগানিস্তানের পূর্ব প্রান্তের নানগারহার প্রদেশ। কৌশলগত কারণে সেখান থেকেই দেশটিতে নাশকতা চালানো সহজ। মধ্যপ্রাচ্যে অব্যাহত প্রতিরোধে যোদ্ধা সংকটে পড়েছে আইএস। আর সেই অভাব পূরণ করতে নতুন করে পাকিস্তান থেকে সদস্য সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিছুদিন আগে দক্ষিণ-পশ্চিম পাকিস্তানে সুফিসাধকদের ওপর হামলা চালিয়ে আবারও দেশটিতে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেয় জঙ্গি সংগঠনটি। মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়া এক করে খোরাসান রাজ্য গঠন আইএসের অনেক পুরনো এজেন্ডা হলেও এবার নতুন কর্মতৎপরতার খবর মিলেছে। মধ্যপ্রাচ্যে ভূমি হারিয়ে আরও পূর্বমুখী হচ্ছে তারা। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরাক ও সিরিয়ার ক্রমেই জমি হারাতে বসা আইএস এখন পূর্ব দিকের ফ্রন্ট চালু করতে চাইছে। এ কারণে শঙ্কায় রয়েছে ভারতও। উজবেকিস্তান থেকে আফগানিস্তান হয়ে পাকিস্তান পর্যন্ত যে আইএসের নেটওয়ার্ক শক্তিশালী হচ্ছে, এতে নিশ্চিত দেশটির গোয়েন্দা বিভাগ। আবার ভারত থেকেও আইএসে যোগ দেয়ার সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। গোয়েন্দা দপ্তর আশঙ্কা করছে, পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠনগুলোকে পক্ষে টেনে দেশটিতে জঙ্গি ক্যাম্প তৈরি করবে আইএস। বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনকে মদদ দেয়ার অভিযোগে পাকিস্তান ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচিত। আবার সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপড়েনের কারণে জঙ্গি দমনে দেশ দুটি কোনো ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপে যাবে, এরও ইঙ্গিত নেই। সমালোচকদের দাবি, ভারতকে চাপে রাখতে সন্ত্রাসকে উসকানিও দিতে পারে পাকিস্তান। এদিকে, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন মোকাবেলা-বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত আন্ডার সেক্রেটারি অ্যাডাম সুবিন ওয়াশিংটনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এমন অভিযোগ করেন। তিনি পাকিস্তানকে সতর্ক করে বলেন, প্রয়োজন হলে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই পাকিস্তানে গেড়ে বসা সন্ত্রাসের নেটওয়ার্ক ধ্বংস করতে পদক্ষেপ নেবে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে ২০০২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১১ হাজার ৮৩০ কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে। এমন তথ্য জানিয়েছে দেশটির স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত খরচ করতে গিয়ে দেশটির উন্নয়নে বাজেটের বরাদ্দ কমে যাচ্ছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় ব্যাংকটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের কারণে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হিসাব অনুযায়ী, পাকিস্তানের মোট জিডিপির এক-তৃতীয়াংশের বেশি অর্থ সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে ব্যয় হয়েছে। লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার অনুমোদিত কোয়ালিশন সাপোর্ট ফান্ড (সিএসএফ) থেকে পাকিস্তান এখন পর্যন্ত এক হাজার ৪০০ কোটি ডলার পেয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এরপরও বিশ্বে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি দেশটি। আর এই সুযোগটিই কাজে লাগাচ্ছে আইএস। সূত্র : ডেকান ক্রনিকাল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ