Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

এক্সেস রোডে কমবে দুর্ভোগ

১০ তলা ভবন জটিলতার অবসান : চার বছর পর শুরু চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া এক্সেস রোডের নির্মাণকাজ

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১৬ জুন, ২০২২, ১২:০১ এএম

অবশেষে গতি এসেছে চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া এক্সেস রোডে। দীর্ঘ চার বছর পর ফের শুরু হয়েছে সড়ক নির্মাণ। একটি ১০ তলা ভবন নিয়ে জটিলতার কারণে কাজ বন্ধ থাকায় নতুন এ সড়ক নির্মাণ থমকে যায়। শুরুতে ভবনটি ভেঙ্গে সড়ক এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও পরে ব্যয় কমাতে প্রকল্পের নকশা বদল করা হয়। নতুন নকশায় ভবনটিকে অক্ষত রেখেই বিকল্প সড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
এতে ভবনটিও রক্ষা পেয়েছে, সরকারের ১৫ কোটি টাকা সাশ্রয়ও হয়েছে। সড়কের ওই অংশে মাটি ভরাট চলছে। আগামী বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হলেও ডিসেম্বরের মধ্যে একশ’ মিটার জায়গার জন্য আটকে থাকা বাকলিয়া এক্সেস রোড যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া যাবে। সড়কটি চালু হলে বৃহত্তর বাকলিয়াসহ নগরীর বিশাল এলাকা যানজটমুক্ত হবে আশা করা হচ্ছে। তাতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাথে নগরীর যোগাযোগ আরো সহজ হবে।

নগরীর ঘনবসতিপূর্ণ চন্দনপুরা থেকে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত ১৬শ’ মিটার দীর্ঘ বাকলিয়া এক্সেস রোড নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ। মহানগরীর যানজট কমাতে এবং মহানগরীর সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগ সহজতর করতে ওই এলাকায় একটি এক্সেস রোড নির্মাণের বিষয়টি সিডিএর মাস্টারপ্ল্যানেও ছিল। তা ছাড়া বহদ্দারহাট থেকে কর্ণফুলী সেতু পর্যন্ত ছয়লেনের সংযোগ সড়ক নির্মাণের পর সংযোগ সড়ক না থাকায় তার সুফলও মিলছিল না। বাকলিয়া এক্সেস রোড নির্মাণ করা হলে ওই সড়কের সুফল মিলবে।

সিরাজুদ্দৌলাহ রোড থেকে বাকলিয়া থানা পর্যন্ত সড়কটি ৬০ ফুট প্রস্থ করে নির্মাণ করা হচ্ছে। সড়কটি সিরাজউদ্দৌলা রোডের চন্দনপুরা মসজিদের বিপরীত পাশে আয়েশা খাতুন লেন দিয়ে বাকলিয়া থানার পাশ দিয়ে কর্ণফুলী সেতুর সংযোগ সড়কে যুক্ত হয়েছে। ২০৫ কোটি ৪৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে। দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সড়কটির কাজ ২০২০ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু বাকলিয়া ডিসি রোডে মৌসুমী আবাসিক এলাকায় সিডিএর অনুমোদন নিয়ে গড়ে ওঠা ১০ তলা একটি ভবনের কারণে নির্ধারিত সময়ে এটির কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। সড়কে দুই অংশের কাজ প্রায় শেষ হলে মাঝখানে ওই ভবনের কারণে কাজ থেমে যায়। সিডিএ প্রথমে ভবনটি অপসারণ করে সোজা পথে সড়কটি এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তাতে ভবনের ক্ষতিপূরণ বাবত ১১ কোটি টাকা এবং ভবনটি অপসারণ কাজে আরো চার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়।

প্রায় ১৫ কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয় বাড়াতে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চায় সিডিএ। তবে মন্ত্রণালয় ওই প্রকল্প অনুমোদন না দিয়ে বিকল্প বের করতে বলে। এর প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সুপারিশে গঠন করা হয় একটি টেকনিক্যাল কমিটি। টেকনিক্যাল কমিটি ভবনটি না ভেঙ্গে সড়কের নকশা পরিবর্তনের পরামর্শ দেয়। সম্প্রতি একনেক সভায় নকশা পরিবর্তন করে দেয়া প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এরপর শুরু হয়েছে সড়কের বাকি অংশের নির্মাণ কাজ।

সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক কাজি কাদের নেওয়াজ গতকাল সোমবার ইনকিলাবকে বলেন, পরিবর্তিত নকশা অনুমোদন পাওয়ার পর পরই সড়কের বাকি অংশের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এখন চলছে মাটি ভরাট। দ্রুত কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ আগামী জুন পর্যন্ত বাড়ানো হলেও তার আগেই কাজ শেষ করা যাবে। প্রকল্পের কাজ শেষ করতে এখন আর কোন জটিলতা নেই।

বাকলিয়ার বাসিন্দা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম দুলাল ইনকিলাবকে বলেন, এক্সেস রোডটি চালু হলে নগরীর চকবাজার, ডিসি রোড, কেবি আমান আলী রোড, সৈয়দ শাহ রোডসহ বৃহত্তর বাকলিয়া যানজট মুক্ত হবে। নতুন সড়কটি কর্ণফুলী সংযোগ সড়কের সাথে যুক্ত হলে নগরীর উত্তর ও দক্ষিণ অংশের সাথে যোগাযোগ আরো সহজতর হবে।

কর্ণফুলী সেতু হয়ে নগরমুখী যানবাহন বর্তমানে রাহাত্তারপুল থেকে কেবি আমান আলী সড়ক হয়ে নগরীতে প্রবেশ করছে। সড়কটি সরু হওয়ায় সেখানে প্রায় যানজট হয়। এতে স্থানীয়দের দুর্ভোগের শেষ নেই। একই অবস্থা নগরীর চাক্তাই রাজাখালী এলাকায়ও। মেরিনার্স রোড হয়ে কোতোয়ালীর মোড় হয়ে যানবাহন আসা-যাওয়া করছে। তাতে ওই সড়কটিতেও যানজট হয়।

নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক-দক্ষিণ) মো. নাসির উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, বাকলিয়া এক্সেস রোড যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলে ওই এলাকায় যানজট কমে যাবে। বৃহত্তর বাকলিয়া ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। পাশেই আছে চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জের মতো বাণিজ্যিক এলাকা। এতে ওই এলাকার প্রায় সব সড়কেই যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ। নতুন সড়ক হলে জনদুর্ভোগ যেমন কমবে তেমনটি ব্যবসা বাণিজ্যেও আরো গতি আসবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ