Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্রথম বামপন্থী প্রেসিডেন্ট ও কৃষ্ণাঙ্গ নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট পেল কলম্বিয়া

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০২২, ১২:০০ এএম

কলম্বিয়ার বোগোটা শহরের সাবেক মেয়র এবং সাবেক গেরিলা নেতা গুস্তাভো পেত্রো দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। স্থানীয় সময় গতকাল রোববার দ্বিতীয় দফার ভোটেও জয় পেয়েছেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে কলম্বিয়ায় প্রথমবারের মতো কোনো বামপন্থী নেতা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন। তার রানিংমেট ফ্রান্সা মার্কেজ হচ্ছেন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট।
গত ২৯ মে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে গুস্তাভো পেত্রো জয়ী হলেও কোনো প্রার্থীই প্রয়োজনীয় ৫০ শতাংশ ভোট নিশ্চিত করতে না পারায় গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় দফার নির্বাচন। এ নির্বাচনে পেত্রোর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ৭৭ বছর বয়সী ব্যবসায়ী রোদোলফো এরনান্দেজ। দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন পেত্রো। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এরনান্দেজের চেয়ে সাত লাখের বেশি ভোট পেয়েছেন তিনি। এ জয়কে ‘ঈশ্বর ও জনগণের জয়’ বলে উল্লেখ করেছেন পেত্রো। টুইটারে তিনি লিখেছেন, মাতৃভূমির হৃদয়ে আজ যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে, তা দিয়ে সকল ভোগান্তি ধুয়ে যাক।
ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে পেত্রোর রানিংমেট ছিলেন ফ্রান্সা মার্কেজ। কলম্বিয়ার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন তিনি। ইতিমধ্যে নির্বাচনে পরাজয় মেনে নিয়েছেন এরনান্দেজ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা এক ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘আজ কলম্বিয়ার বেশির ভাগ নাগরিক অপর প্রার্থীকে বেছে নিয়েছেন। প্রচারণার সময় আমি বলেছিলাম, নির্বাচনের ফল মেনে নেব। আশা করি কীভাবে দেশ পরিচালনা করতে হবে, তা পেত্রো জানেন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান বজায় রাখবেন তিনি।’ বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ইভান দুকু টুইটার পোস্টে লিখেছেন, তিনি পেত্রোকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। একটি সর্বসম্মত, প্রাতিষ্ঠানিক ও স্বচ্ছ ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করতে আগামী দিনগুলোতে বৈঠকে বসার ব্যাপারে সম্মত হওয়ার কথাও উল্লেখ করেছেন দুকু।
একসময় এম-১৯ গেরিলার সদস্য ছিলেন পেত্রো। কয়েক দশক আগে এ বিদ্রোহী গোষ্ঠী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। নির্বাচনী প্রচারণায় অসাম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পেত্রো। বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিনা মূল্যে পড়াশোনার ব্যবস্থা, পেনশন ব্যবস্থায় সংস্কার আনা এবং অনুৎপাদনশীল জমির ওপর উচ্চ কর আরোপ করবেন। ২০১৬ সালে যে চুক্তির কারণে কমিউনিস্ট গেরিলা গোষ্ঠী ফার্কের সঙ্গে সরকারের ৫০ বছরের দীর্ঘ সংঘাতের অবসান হয়েছিল, তা বাস্তবায়নেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
গুস্তাভো পেত্রোর সমালোচকেরা বলেছিলেন, তিনি যে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন, তা দেশকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত পেত্রোর দারিদ্র্য দূর করার প্রতিশ্রুতি অত্যন্ত অসাম্যের দেশটির জনগণকে টানতে পেরেছে। বাস্তুচ্যুত আফ্রো-কলম্বিয়ান নারী ইফোর আনা বিয়াত্রিজ আচেভেদো মনে করেন, এ নির্বাচন দেশের জন্য বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসবে। বিয়াত্রিজ আচেভেদো বলেন, ‘নারীরা কৃষ্ণাঙ্গ ও আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোতে অসমতার বিষয়টিকে এ দেশের একটি সমস্যা বলে বিবেচনা করেন। আর তারা (পেত্রো ও মার্কেজ) সে বৈষম্যের শিকার মানুষদেরই প্রতিনিধিত্ব করছেন। একজন মিশ্র বর্ণের আর অন্যজন কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। আর এ দুজনই সমতায় বিশ্বাসী।’
এদিকে বোগোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আরলিন টিকনার মনে করেন, কলম্বিয়ায় বর্তমান মেরুকরণের মাত্রা এবং বিদ্যমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক সঙ্কট পেত্রো সরকারকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ