Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

২১ জেলার সংক্ষিপ্ত সড়ক পথের মাওয়া ফেরি সেক্টরে শুনশান নিরবতা, পাটুরিয়াতেও গাড়ীর জন্য ফেরির অপেক্ষা

দীর্ঘ দিনেও বিআইডব্লিউটিসি বিকল্প ফেরি রুট চালুর উদ্যোগ না নেয়ায় চরম আর্থিক বিপর্যয় আসন্ন

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৭ জুন, ২০২২, ১:৩৯ পিএম

দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় রাজধানী সহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সাথে সংযুক্ত দেশের প্রধান দুটি ফেরি সেক্টরে ইতোমধ্যে বিষাদের সুর বেজে উঠেছে। ফলে রাষ্ট্রীয় নৌ বানিজ্য প্রতিষ্ঠান, বিআইডব্লিউটিসি’র আর্থিক ভীত যথেষ্ঠ নাজুক হতে যাচ্ছে। অথচ গত অর্থ বছরেও প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১৫ কোটি টাকা নীট মুনফা অর্জন করেছিল। রোববার সকালে পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার পরে মাওয়া সেক্টরে পদ্মার দু পাড়ের ঘাটগুলোতে শুনশান নিরবতা। সোমবার সকাল পর্যন্ত ঐ সেক্টরে একটি যানবাহনও পারাপার হয়নি। ফলে ইতোমধ্যে দুটি ফেরি অন্যত্র পাঠান হয়েছে। পদ্মায় থেমে গেছে স্পীড বোটের ভো ভো শব্দের সাথে যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোর হুইসালও। অলস পড়ে আছে বিআইডবিøউটিসি’র ৭টি ফেরি।

পাটুরিয়া সেক্টরেও যানবাহনের লম্বা লাইন এখন অতীত। এতদিন ফেরিতে উঠতে যেখানে যানবাহনগুলোকে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়েছে, সেখানে এখন গাড়ীর জন্য অপেক্ষায় একাধীক ফেরি। রোববার সকাল থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত দৌলতদিয়াÑপাটুরিয়া সেক্টরে মাত্র সাড়ে ৫ হাজারের মত যানবাহন পারাপার হয়েছে। অপক্ষেমান শূণ্য। অথচ রোববার সকালের পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায়ও এ সেক্টরে প্রায় ৭ হাজার যানবাহন পারপারের পরেও অপেক্ষমান ছিল প্রায় ৭শ।

গত ৬০ বছরেরও বেশী সময় ধরে দৌলতদিয়া-আরিচা/ পাটুরিয়া এবং ১৯৮৩ সাল থেকে মাওয়া সেক্টরের মাওয়া-চরজানাজাত, পরবর্তিতে কাঠালবাড়ী-শিমুলিয়া রুটে কয়েক কোটি যানবাহন ফেরি পারাপারের পরে এখন নিরব শূণ্যতা। রোববার সকালে পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়ায় মাওয়ার দুপাড়ের সব কর্ম ব্যস্তাতা থেমে আছে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের আনন্দের বণ্যার সাথে পদ্মার দু পাড়ে ফেরিঘাটকে কেন্দ্র করে ছোট বড় সব ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততা থেমে যাবার সাথে চলছে নিরব হাহাকার।
রাষ্ট্রীয় নৌ বানিজ্য প্রতিষ্ঠান, বিআইডব্লিউটিসি এতদিন ফেরির অভাবে মাওয়া সেক্টরে যানবাহন পারাপারে হিমশীম খেলেও রোবাবার সকাল থেকে আর কেউ ফেরিঘাট মুখি হচ্ছেনা। ফলে দেশের বৃহত্বম মাওয়া ও আরিচা ফেরি সেক্টরে সংস্থাটির মনোপলি ব্যাবসা বন্ধের সাথে জনগনের দূর্ভোগ আর হয়রানীও বন্ধ হয়েছে। ফেরিঘাটগুলোতে অনেকটাই হীমঘরের নিরবতা নেমে এসেছে।

অপরদিকে ২১ জেলার সাথে রাজধানীর সংক্ষিপ্ত সড়ক পথের মাওয়া সেক্টরে পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে আগের তিনদিন বন্ধ থাকলেও রোববার সকাল থেকে শুধুমাত্র পণ্যবাহী যানবাহনের জন্য ফেরি চালু থাকলেও একটি যানবাহনও ফেরিঘাট মুখি হয়নি। অথচ অন্য সময়ে এ সেক্টরে পারপারের জন্য অপক্ষোর দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ত। এমনকি একটি লাশবাহী এ্যম্বুলেন্সকেও পদ্মা পাড়ি দিতে ঘন্টার পর ঘন্টা ফেরি ঘাটে অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে। এখন যানবাহনের অপক্ষোয় গত দু দিন ফেরি দাড়িয়ে আছে। পদ্মা সেতুতে অতিরিক্ত টোল ধার্য করায় অনেকেই আশা করেছিলেন পণ্যবাহী ট্রাক মাওয়া সেক্টরে ফেরি পার হবে। কিন্তু বিআইডবøউটিসি পদ্মা সেতুর টোল-এর সাথে ফেরি ভাড়াও প্রায় দ্বিগুন বৃদ্ধির ফলে পন্যবাহী ট্রাক আর ফেরিঘাটমুখি হচ্ছে না।

ফলে মাওয়া সেক্টরে সংস্থাটি বছরে যে ১শ কোটি টাকার মত আয় করত, তা শূণ্যের কোঠায় নামতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন ওয়াকিবাহাল মহল। এমনকি দেশের প্রধান দুটি ফেরি সেক্টরে এ বিপর্যয় রাষ্ট্রীয় নৌ বানিজ্য প্রতিষ্ঠানটিকে খুব শিঘ্রই যথেষ্ঠ আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলবে বলেও মনে করছেন মহলটি। তবে ‘অদুর ভবিষ্যতেই সংস্থার পক্ষ থেকে নতুন কয়েকটি রুটে ফেরি সার্ভিস চালুর চেষ্টা চলছে’ বলে জানান হয়েছে। কিন্তু গত প্রায় ৬ বছরেরও বেশী সময় ধরে পদ্মায় সেতু নির্মান কাজ চললেও এতদিনেও কেন রাষ্ট্রীয় এ সংস্থাটি বিকল্প নতুন ফেরি পথের সন্ধান করে তা চালু করতে পারল না, তা বলতে পারেন নি কেউ।

এব্যাপারে বিঅইডব্লিউটিসি’র পরিচালক-বানিজ্য আশিকুজ্জামান জানান, ‘আমরা দক্ষিণাঞ্চলে নতুন ফেরি পথের সন্ধান করছি’। পাশাপাশি বিদ্যমান চাঁদপুরÑশরিয়তপুর ও ভোলা-লক্ষ্ণীপুর সেক্টরেও ফেরির সংখ্যা বৃদ্ধি করে বাড়তি যানবাহন পারাপারের কথা জানান তিনি। তবে পদ্মা সেতু চালু করার চুড়ান্ত প্রস্তুতির মধ্যেও বিআইডব্লিউটিসি এতদিনে তার বহরের ৫৪টি ফেরির জন্য বিকল্প নৌপথে যানবাহন পারাপার চালুর মাধ্যমে আয় বৃদ্ধির ব্যাবস্থা কেন করেনি, সে ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে পারেন নি। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলের সাথে উত্তরবঙ্গের সংক্ষিপ্ত সড়ক পথের রাজবাড়ী ও পাবনার মধ্যবর্তি পদ্মায় নাজিরগঞ্জ-জৌকুড়া রুটে ফেরি সার্ভিস চালু করতে আন্তঃ মন্ত্রনালয়ের সভায় আরো ৫ বছর আগে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হলেও বিআইডব্লিউটিসি নুন্যতম কোন পদক্ষপ গ্রহন করেনি। এখন সংস্থাটিকে প্রায় অর্ধেক ফেরি বসিয়ে রেখে প্রশাসনিক ব্যায় মেটাতে হবে। ফলে লোকশানের বোঝা ভারি হবে বলে ক্ষুদ্ধ সাধারন কর্মকর্তা-কর্মচারীগনও।

অথচ ফেরি সেক্টরই বিআইডব্লিউটিসি’র আয়ের মূল উৎস। গত অর্থ বছরে সংস্থাটির সর্বমোট ৩৯৫ কোটি টাকা আয়ের মধ্যে ফেরি সেক্টরেরই অবদান ছিল প্রায় ৩৯০ কোটি। যার সিংহভাগই আয় হয়েছে মাওয়া ও আরিচা সেক্টর থেকে। এমনকি চলতি অর্থ বছরের গত মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে সংস্থাটির ৩০৯ কোটি টাকা আয়ের ২৮৫ কোটি এসেছে ফেরি সেক্টর থেকে।

পদ্মা সেতু চালু হবার পড়ে দেশের প্রধান এ দুটি ফেরি সেক্টরের আয় অন্তত ৯০ভাগ পর্যন্ত হ্রাস পাবার আশংকার কথা জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংস্থাটির দায়িত্বশীল মহল। ফলে বিশাল জনবলের এ সংস্থাটির আয়ের প্রায় ৯৫ ভাগ উৎসই বন্ধ হয়ে গেছে বলেও মনে করছেন একাধীক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। কিন্তু এর পরেও রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানটি এতদিনেও বিকল্প কোন আয়ের পথ নিশ্চিত করতে পারেনি ।

এ ব্যাপারে রোবববার বিআইডব্লিউটসি’র চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত সচিব আহমদ শামীম আল রাজী’র সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, আমরা বিকল্প কয়েকটি ফেরি রুট চালুর লক্ষে ইতোমধ্যে সম্ভব্যতা সমিক্ষা করেছি। পাশাপাশি ভোলা-লক্ষ্ণীপুর এবং চাঁদপুর-শরিয়তপুর সেক্টরেও ফেরির সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে যানবাহন পারপার বৃদ্ধি সহ সংস্থার আয় বৃদ্ধির উদ্যোগের কথা জানান তিনি। তবে দীর্ঘদিন ধরে পদ্মা সেতু নির্মানকালীন সময়ে সংস্থাটি বিকল্প আয়ের উৎস্য সন্ধন না করার বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেন নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ