Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কক্সবাজারে মন্ত্রী পরিষদ সচিব : আলাদা পরিচয়পত্র পাবে রোহিঙ্গারা

প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কক্সবাজার অফিস : চলমান অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শুমারী দেশের জন্য বিরাট মাইলফলক বলে মন্তব্য করেছেন সরকারের মন্ত্রীপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের একটি জটিল বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক সমাধানের লক্ষে সরকার শুমারী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। শুমারী শেষে কোন মিয়ানমার নাগরিককে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর কোন চিন্তা আপতত সরকারের নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশে অবস্থানরত অনিবন্ধিত মিয়ানমারের নাগরিক শুমারি-২০১৬ বিষয়ক পরামর্শ কর্মশালায় গত শনিবার তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন। এতে তিনি আরো বলেন, শুধুমাত্র একটি ডাটাবেজ এর আওতায় আনার জন্য একাজ চলছে। শুমারীকে সফল ও স্বার্থক করতে সকলের সহযোগিতা দরকার। এই শুমারীর মাধ্যমে বেশী কিছু না হলেও অন্তত দুই দেশের নাগরিক আলাদা পরিচয় করতে ঝামেলায় পড়তে হবে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের আওতাধীন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর উদ্যোগে এই কর্মশালায় পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা সচিব কানিজ ফাতেমা, অতিরিক্ত সচিব মো. সফিকুল হক, চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনার মো. রুহুল আমীন, পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের পরিচালক (জাতিসংঘ উইং) মো. মোস্তাফিজুর রহমান, পরিসংখ্যান ব্যুরোর শুমারী প্রকল্প পরিচালক মো. আলমগীল হোসেন এবং আন্তর্জাতিক অভিভাসন সংস্থা (আইওএম)’র প্রতিনিধি শরৎ দাশ প্রমুখ।
পরিসংখ্যান ব্যুরো মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ আবদুল ওয়াজেদ এর সভাপতিত্বে সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিসংখ্যান ব্যুরোর সেন্সাস উইং-এর পরিচালক মো. জাহিদুল হক সরকার। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন। সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক এএফএম আলাউদ্দিন খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ড. অনুপম সাহা, আনোয়ারুল নাসের, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুস সোবহানসহ বিভিন্ন স্থরের মান্যগণ্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর একই স্থানে প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুর রহমান, আন্তর্জাতিক অভিভাসন সংস্থা (আইওএম)’র ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার আসিফ মুনীরসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
এ দিকে উখিয়া কুতুপালং এলাকায় অবস্থিত অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের জীবন প্রণালীর খোঁজ-খবর নিয়েছেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা সচিব কানিজ ফাতেমাসহ প্রতিনিধিদল। ১৩ ফেব্রুয়ারী শনিবার সরেজমিন ক্যাম্প পরিদর্শনে যান তারা। এ সময় চলমান শুমারীর গুরুত্ব উপস্থাপন করে এতে সকলকে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান সচিব কানিজ ফাতেমা।
পরিদর্শনকালে পরিসংখ্যান সচিব রোহিঙ্গাদের আয়-রোজগার, খাওয়া-দাওয়া, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাদীক্ষাসহ মৌলিক অধিকারের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন। আর সচিবকে কাছে পেয়ে অভাব অভিযোগের কথা মন ভরে তুলে ধরে রোহিঙ্গারা। এসব কথা মনোযোগ সহকারে শুনেন এবং সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও সরকারের পদক্ষেপের কথা রোহিঙ্গাদের অবগত করেন পরিসংখ্যান সচিব কানিজ ফাতেমা।
পরিদর্শনকালে সাথে ছিলেন অতিরিক্ত সচিব মো. সফিকুল ইসলাম, জেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুর রহমান, উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা নুরুল কবির, আরাকানী রোহিঙ্গা শরণার্থী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি এডভোকেট নুরুল আমিন, সহ-সভাপতি মাস্টার আব্দুর রহিম, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার শাহ, যুগ্ম-সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, নেজাম উদ্দিন প্রমুখ।
সূত্র মতে, কক্সবাজারে অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা নাগরিকদের শুমারীর কাজ চলছে। ১২ ফেব্রুয়ারী থেকে শুরু হওয়া তালিকা প্রণয়নের কাজ শেষ হবে ১৭ ফেব্রুয়ারী। এই পাঁচ দিনে সংগ্রীহিত তালিকা যাচাই-বাছাই করে মার্চের শেষ সপ্তাহেই চূড়ান্ত হবে। শেষে তাদেরকে একটি আলাদা পরিচয়পত্র দেয়া হবে। তবে পরিচয়পত্রে কি ‘মিয়ানমার নাগরিক’ লেখা থাকবে নাকি শুধু ‘রোহিঙ্গা’ লেখা হবে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
শুমারীর জন্য ১ হাজার ৮১ জন কর্মী (গণনাকারী), ১০৮ জন সুপারভাইজার এবং ৪৯ জোনাল অফিসার নিয়োগ দিয়েছে জেলা পরিসংখ্যান অফিস।
পরিসংখ্যান অফিসের তথ্য মতে, রোহিঙ্গা নাগকিরদের এদেশে অনুপ্রবেশের কারণ চিহ্নিত করতে অনিবন্ধিত নাগরিকদের একটি সমন্বিত ডাটাবেজ তৈরি, তাদের ছবি ও দলিলাদি সংগ্রহ, বর্তমান অবস্থান, এদেশে অনুপ্রবেশের আগে মিয়ানমারের স্থায়ী বাসস্থান নিরূপণ এবং আর্থসামাজিক পরিসংখ্যানই শুমারির প্রধান লক্ষ্য। চলমান শুমারি কার্যক্রমের ফলে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। পাশাপাশি রোহিঙ্গারাও এ শুমারির কারণে উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তথ্য সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৬ সালের মার্চ নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। রোহিঙ্গা শুমারি প্রকল্পে অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক। মায়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হিসাবে চিহ্নিত কক্সবাজার, তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও উপকূলীয় পটুয়াখালীতে এই শুমারি পরিচালিত হচ্ছে।
এদিকে আরাকানী রোহিঙ্গা শরণার্থী কল্যাণ পরিষদ এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ রাখতে তারা সহায়তা ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রচলিত নিয়মকানুন মেনে চলার তাগিদ, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি যথাযথ সম্মানপ্রদর্শনের মনোভাব সৃষ্টি, মৌলবাদ জঙ্গিবাদ অসম্প্রদায়িক উজ্জীবিত একটি নিরাপদ রোহিঙ্গা সমাজ বিনির্মাণে কাজ করছে বলে সংগঠনটির সভাপতি এডভোকেট নুরুল আমিন জানান।
বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে নির্যাতিত হয়ে বিভিন্ন সময় লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করে। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে উখিয়া ও টেকনাফের দুটি নিবন্ধিত ক্যাম্পে প্রায় অর্ধলাখ রোহিঙ্গা বসবাস করলেও সীমান্তবর্তী জেলাগুলোসহ কয়েকটি অনিবন্ধিত ক্যাম্পেও বসবাস করে আসছে। এর সংখ্যা ৫/৭ লাখের কম নয় বলেই সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা। বারবার বাংলাদেশ পক্ষের যোগাযোগের পরেও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাদের দেশের নাগরিক রোহিঙ্গা মুসলমানদের ফিরিয়ে নিচ্ছে না।
সম্প্রতি মিয়ানমারে নির্বাচনে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হলেও রোহিঙ্গা মুসলমানদের ভাগ্য বদলানোর কোন লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে। মনে করা হয়েছিল অঙসান সুচি ক্ষমতায় এলে এর একটা সমাধান হতে পারে। কিন্তু না এখনো কোন আশার আলো দেখা যাচ্ছে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজারে মন্ত্রী পরিষদ সচিব : আলাদা পরিচয়পত্র পাবে রোহিঙ্গারা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ