Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রফতানি আয়ে রেকর্ড

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কমলেও রফতানি আয়ে রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ে শেষ হলো ২০২১-২২ অর্থবছর। সদ্য সমাপ্ত এই অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে ৫ হাজার ২০৮ কোটি ২৬ লাখ (৫২ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক আগের বছরের (২০২০-২১) চেয়ে ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক বছরে পণ্য রফতানি থেকে এতো বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে আসেনি। গতকাল রোববার রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) রফতানি আয়ের হালনাগাদে এ তথ্য উঠে এসেছে। একইসঙ্গে একক মাসের হিসাবে বিদায়ী অর্থবছরের শেষ মাস জুনেও পণ্য রফতানিতে রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। এই মাসে ৪৯০ কোটি ৮০ লাখ ৩০ হাজার (৪ দশমিক ৯১ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রফতানি করেছেন রফতানিকারকরা। যা গত বছরের জুন মাসের চেয়ে ৩৭ দশমিক ১৯ শতাংশ বেশি। আর নির্ধারিত লক্ষ্যের চেয়ে ৩৫ শতাংশ। এই মাসে পণ্য রফতানি থেকে ৩৬৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার আয় হবে বলে লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল সরকার। গত বছরের জুন মাসে ৩৫৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলার আয় হয়েছিল।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও জুন মাসে রফতানিতে এই উল্লম্ফন অর্থনীতিবিদ ও রফতানিকারকদের অবাক করে দিয়েছে। এই ইতিবাচক ধারা আগামী দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন তারা।
একক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রফতানি আয় এসেছিল গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ৪৯০ কোটি ৭৭ লাখ (৪ দশমিক ৯০ বিলিয়ন) ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এসেছিল চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ৪৮৫ কোটি ৩ লাখ ৭০ হাজার (৪ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন) ডলার। মার্চে এসেছিল ৪৭৬ কোটি ২২ লাখ ডলার। ফেব্রæয়ারিতে এসেছিল ৪২৯ কোটি ৪৫ লাখ (৪ দশমিক ২৯ বিলিয়ন) ডলার।
ইপিবি হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, ৩০ জুন শেষ হওয়া বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫ হাজার ২০৮ কোটি ২৬ লাখ ৬০ হাজার (৫২ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছেন দেশের বিভিন্ন খাতের রফতারিকারকরা। লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৪৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য রফতানি থেকে ৩৮ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ।
এ হিসাবেই প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। বাংলাদেশে এর আগে কখনই কোনো অর্থবছরে রফতানি খাতে এতো বেশি প্রবৃদ্ধি হয়নি। লক্ষ্যের চেয়ে এতো বেশি আয়ও কখনও দেশে আসেনি।
দেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ চেম্বারের বর্তমান সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, মে মাসে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি কমায় দেশের অর্থনীতিবিদ-রফতানিকারকদের মধ্যে অনেকই হতাশ হয়েছিলেন। তারা বলতে শুরু করেছিলেন, এই তো রফতানি কমা শুরু হলো। কিন্তু আমি ওই সময় বলেছিলাম ভিন্ন কথা। আমি বলেছিলাম মে মাসে রোজার ঈদের কারণে ৮/১০ দিন সব পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল; চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমও বন্ধ ছিল। সেই কয়দিন আসলে কোনো রফতানি হয়নি। সে কারণেই মে মাসে রফতানি কম হয়েছিল। জুন মাসে ঠিকই আবার বেড়েছে। শুধু বাড়েনি। এক মাসের হিসাবে রেকর্ড হয়েছে। তিনি বলেন, যুদ্ধের মধ্যেও এই উল্লম্ফন আমাদের সাহস জুগিয়েছে। আশা করছি এই ইতিবাচক ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।
আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ আরও বলেন, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে আমেরিকান ক্রেতারা চীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বাংলাদেশে আসছেন। ভিয়েতনাম থেকেও অনেক অর্ডার বাংলাদেশে আসছে। তাই আগামী দিনগুলোতে আমাদের রফতানি বাড়বে বলেই আমার কাছে মনে হচ্ছে।
গত মে মাসে পণ্য রফতানি করে ৩৮৩ কোটি (৩ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছিল। যা ছিল আগের ৯ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কম এসেছিল ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। আগের মাসগুলোতে ৫০ শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন বলেন, যুদ্ধের প্রভাব রফতানি আয়ে পড়বে। তবে আমার মনে হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের রফতানি খুব একটা কমবে না। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও দেশটির অর্থনীতিতে কোনো সংকট নেই। সে কারণে ওই দেশের লোকজন পোশাক কেনা কমিয়ে দেবেএমনটা আমার কাছে মনে হয়।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রফতানি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ