Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বানভাসীদের নেই ঈদ আনন্দ

সিলেটে ভারি বৃষ্টি বেড়েছে নদ-নদীর পানি বন্যায় মোট মৃত্যু ১১০ জন বানভাসীদের পুনর্বাসনের নেই কোন উদ্যোগ নেত্রকোণায় এখনো অনেকেই রয়েছেন আশ্রয় কেন্দ্রে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ জুলাই, ২০২২, ১২:০০ এএম

সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণাসহ বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের মনে নেই ঈদের আনন্দ। বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও অনেক এলাকা এখনো তলিয়ে আছে। মাঝে মাঝে ভারি বৃষ্টি হওয়ায় নদ-নদীর পানি আবার বেড়ে যায়। এর ফলে বানভাসীদের মধ্যে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। দুই দফা বন্যার পর আবার তৃতীয় দফায় পানি বাড়বে কি না এমন শঙ্কায় তাদের দিন কাটছে। বাড়ি ফিরলেও অনেকেই এখনো ঘরের বিভিন্ন আসবাব উঁচু জায়গাতই তুলে রেখেছেন। আবার অনেকে বৃষ্টি দেখে বাড়িঘর গুছানোও আপাতত বন্ধ রেখেছেন। সব মিলিয়ে ভয়াল বন্যার চরম দুর্ভোগের মধ্যেই তাদের তাদের সামনে ঈদে এসেছে। যাদের বাড়ি ঘর বানের স্রোতে ভেসে গেছে তারাতো চরম বিপাকে আছেন। এ অবস্থায়ও বানভাসীদের দ্রুত পুনর্বাসনের কোন উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে না। বন্যায় সিলেট জেলার ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩৮৩টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। মোট ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪০ হাজার ৯১টি। বন্যায় নেত্রকোণা জেলায় সরকারি হিসাবে ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৫৫০ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি।
নেত্রকোণার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এখনো তলিয়ে আছে বিভিন্ন এলাকার ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। এ কারণে অনেক পরিবার এখনো আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে পারেনি। মদন, খালিয়াজুরি, মোহনগঞ্জ, বারহাট্টা, আটপাড়া ও কলমাকান্দা উপজেলার নিচু এলাকায় বাড়িঘর ও রাস্তাঘাটে বন্যার পানি আছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৬১টি ইউনিয়নে ২২ হাজার ৫১৫টি পরিবার এখনো পানিবন্দি। বিভিন্ন উপজেলার ২৪৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৮ হাজার ৭১০ জন রয়েছে।
এদিকে বন্যায় সারাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১০ জন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে সিলেট বিভাগে। ১৭ মে থেকে বুধবার (৬ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত মৃত্যুর এই সংখ্যা দাঁড়ালো। বন্যার শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন আট হাজার ৭৯৪ জন। আরটিআই (চোখের রোগ) রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৮৫ জন।
এদিকে সিলেটে গত মঙ্গলবার রাতভর বৃষ্টি হওয়ায় নদ-নদীর পানি কিছুটা বেড়েছে। সিলেট দিয়ে প্রবাহিত হওয়া সুরমা নদীর দুটি পয়েন্টে এবং লুভা ও সারী নদীর পানি বেড়েছে। তবে কুশিয়ারা নদীর কয়েকটি পয়েন্টে এবং ধলাই নদের পানি কিছুটা কমেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার তুলনায় আজ সকাল নয়টায় দশমিক শূন্য ৯ সেন্টিমিটার বেড়ে ১৩ দশমিক শূন্য ৯ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট পয়েন্টে পানি দশমিক শূন্য ২ সেন্টিমিটার বেড়ে ১০ দশমিক ৪২ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হচ্ছে। লুভা নদীর লুভাছড়া পয়েন্টে পানি গতকালের তুলনায় দশমিক শূন্য ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে ১০ দশমিক ৩১ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র কিছুটা আশার বাণী শুনিয়েছে। সংস্থাটির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী দু’তিন দিনের মধ্যে দেশের হাওর এলাকার বন্যার পানি নেমে যাবে। ফলে ঈদের আগে দেশের বেশির ভাগ জায়গায় আর বন্যার পানি থাকছে না বলে মনে করছে সংস্থাটি। তবে এর মধ্যে তিস্তা অববাহিকার পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে। ওই নদীর উজানে ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ অংশে হঠাৎ ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা আছে। এতে দু’এক দিনের জন্য উত্তরের তিন জেলা লালমনিরহাট, নীলফামারী ও রংপুরে বন্যার ঢল আসতে পারে। ওই পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদেরা।
সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেটে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ও গতকাল (বুধবার) সকালে ভারী বৃষ্টি হওয়ার ফলে সুরমা নদীর দুটি পয়েন্টে এবং লুভা ও সারী নদীতে বেড়েছে পানি। পাশাপাশি কিছুটা পানি বেড়েছে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে। তবে কুশিয়ারা নদীর কয়েকটি পয়েন্টে এবং ধলাই নদের পানি কমেছে কিছুটা। উৎকন্ঠার এ বৃষ্টি ঈদুল আযহার দিন (রোববার) পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে জানায় আবহাওয়া অধিদফতর। এদিকে, সিলেটের পাঁচ উপজেলার বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রগুলো এখন ফাঁকা। একজন বানভাসীও নেই এসব কেন্দ্রে। অথচ ক’দিন আগেও উদ্বেগ উৎকন্ঠা আর রাজ্যের হতাশা নিয়ে এসব কেন্দ্রে বাস করেছেন শ’শ’ মানুষ। ফাঁকা সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকার আশ্রয়কেন্দ্র।
এবারের ঈদ আনন্দে ভাটা লেগেছে। কারণ কারো মন ভালো নেই। ভয়াল বন্যায় স্বপ্ন সাধ সব মলিন করে দিয়েছে। ঈদের প্রস্তুতির পরিবর্তে বানভাসী মানুষ এখন ব্যস্ত নিজদের কোনমতে সামলাতে। কিন্তু তাও সম্ভব হচ্ছে না অকল্পনীয় বন্যার তান্ডবে। সিলেট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ ইনকিবলাবকে জানান, বৃষ্টির প্রভাবে পানি কিছুটা বেড়েছে। তবে এতে আতংকের কিছুু নেই, বৃষ্টি কমে এলে পানি কমে যাবে। তিনি আরো জানান, আবহাওয়া চিরায়িত বার্তার বিপরীতে নতুন এক পরিবেশে প্রতিবেশে সৃষ্টি করে যাচ্ছে। কখন কি হয় বলা মুসকিল। বৃষ্টি হলে বন্যার শংকা দেখা দেয়, তেমনি বৃষ্টি কমলে প্রচণ্ড গরমে তাপদাহের সৃষ্টি হচ্ছে। সবকিছু যেন এক অসহনীয় পর্যায়ে।
এদিকে গত মঙ্গলবার বিশ্বনাথ, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, সিলেট সদর এবং সিলেট সিটি করপোরেশনের সব আশ্রয়কেন্দ্র এখন শূণ্য। তবে এখনো ৮ উপজেলার অবস্থা কেবল খারাপ নয়, খুব খারাপ। সিলেট জেলা ত্রাণ ও পূণর্বাসন কার্যালয়ের তথ্য মতে, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত বালাগঞ্জের ৬৯ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছিলেন ৪৬৩১, বিয়ানীবাজারের ৬৮ আশ্রয়কেন্দ্রে ৫৮৮৬, দক্ষিণ সুরমার ৫৬ আশ্রয়কেন্দ্রে ৪১১৬, ফেঞ্চুগঞ্জের ১৯ আশ্রয়কেন্দ্রে ২৪৬৯, গোলাপগঞ্জের ৩৭ আশ্রয়কেন্দ্রে ২২৮৮, জৈন্তাপুরের ৪ আশ্রয়কেন্দ্রে ১৯৬, জকিগঞ্জের ৩৫ আশ্রয়কেন্দ্রে ২০২১ ও ওসমানীনগরের ২৯ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন ৩৯৭২ জন বানভাসী। তারা অপেক্ষায়, বানের পানি নামলেই ছুটবেন নিজের ঘরবাড়ি। কিন্তু সেই পানি কবে নামবে সেই দিন ক্ষণ কারো জানা নেই। কিন্তু ঈদুল আযহা একেবারেই দোরগোড়ায়। ঈদ উৎসব হয়তো আশ্রয়কেন্দ্রের বানভাসীদের কাটাতে হবে আশ্রয়কেন্দ্রেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ