Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দিরাইয়ের সুরঞ্জিতের সভায় গ্রেনেড বিস্ফোরণ মামলায় আরিফ-গৌছ আসামি কারাগারে প্রেরণ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৮ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আজিজুল ইসলাম চৌধুরী, সুনাগঞ্জ থেকে : সিলেট সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্তকৃত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও হবিগঞ্জ পৌরসভার সাময়িক বরখাস্তকৃত মেয়র গোলাম কিবরিয়া গৌছ এবার আসামি হলেন সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের জনসভায় গ্রেনেড বিস্ফোরণ মামলায়। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলার আসামিও তারা। প্রায় এক যুগ আগের এ মামলায় তাদেরকে আসামি করা হয়েছে। তাদের এ মামলায় গ্রেফতার দেখাতে (শোন এরেস্ট) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সুনামগঞ্জের আমলগ্রহণকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (দিরাই) আদালতে আবেদন করলে গতকাল রবিবার আসামিদের উপস্থিতিতে শুনানির পর আদালত আবেদন মঞ্জুর করে তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ জুলাই সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসপি বসু দত্ত চাকমা সুনামগঞ্জের আমলগ্রহণকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (দিরাই) আদালতে আরিফুল হক চৌধুরী ও জি কে গৌছকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসমাবেশে বিস্ফারণ মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেন। গত ২৮ জুলাই সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাদের সুনামগঞ্জের আদালতে আনার কথা ছিল। কিন্তু ওই দিন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এস এম কিবরিয়া হত্যা মামলায় সিলেটের দ্রæত বিচার ট্রাইব্যুনালে এ দু’জনকে হাজির করার কারণ দেখিয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার কতৃপক্ষ দিরাইর আদালতে হাজির করেননি। জেল কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ৭ আগষ্ট এ শুনানির তারিখ নির্ধারণ করলেও সে দিন তাদেরকে উক্ত আদালতে আনা হয়নি। গতকাল রবিবার সুনামগঞ্জের দিরাই জোন আদালতে কড়া নিরাপত্তায় আরিফুল হক ও গৌছকে সিলেট কারাগার থেকে একটি বিশেষ মাইক্রোবাসে সুনামগঞ্জ আদালতে আনা হয়। আরিফ অসুস্থ থাকায় তাকে একটি ট্রলিতে করে আদালতে হাজির করা হয়।
সূত্র মতে জানা যায়, হবিগঞ্জ জোনের সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বসু দত্ত চাকমা গ্রেফতার দেখানোর আবেদনে উল্লেখ করেন, সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভার বিস্ফেরণ ঘটনার মামলায় আরিফুল হক চৌধুরী ও গোলাম কিবরিয়া গৌছের সম্পৃক্ততা রয়েছে মর্মে প্রাথমিকভাবে সাক্ষপ্রমাণ পাওয়া যায়। তাই তাদেরকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানোর প্রয়োজন রয়েছে। ২০১০ সালের ৭ অক্টোবর সিলেটের দ্রত বিচার ট্রাইবুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর আদালতে এ মামলার অধিকতর তদন্তের জন্য এক আবদেন করেন। ট্রাইবুনালের বিচারক এ আবেদন মঞ্জুর করে সুনামগঞ্জের স্পেশাল ট্রাইবুনালে পাঠান। স্পেশাল ট্রাইবুনালের বিচারক এ মামলাটি সিআইডির একজন সিনিয়র দক্ষ কমকতা দ্বারা অধিকতর তদন্তের জন্য আতিরিক্ত পুলিশ পরিদর্শক সিআইডি ঢাকাকে নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বসু দত্ত চাকমা হবিগঞ্জ জোন তদন্তের দায়িত্ব পান। এ কর্মকর্তা আরিফুল হক চৌধুরী ও জি কে গৌছ কে দিরাইয়ের বিস্ফারণ মামলায় শোন এরেস্টের আবেদন করেন। তাদেরকে এ মামলায় সম্পৃক্ত করে ইতোমধ্যে সাপ্লিমেন্টারি অভিযোগপত্রও দাখিল করা হয়েছে। মামলার এজাহার মতে জানা যায়, ২০০৪ সালের ২১ জুন সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের জনসভা হয়। সভা শেষ হওয়ার ৫ মিনিট পর সভামঞ্চের নিচে বিকট শব্দে একটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে প্রায় ৩০/৩২ জন লোক আহত হয়। এর মধ্যে আব্দুল ওয়াহিদ মিয়াকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল হাসপাতালে নেয়া হলে সে মারা যায়। পরদিন ২০০৪ সালের ২২ জুন সুনামগঞ্জের দিরাই থানার এসআই হেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে দিরাই থানায় খুনের মামলাসহ বিস্ফোরণ দ্রব্য আইনে এজাহার দাখিল করেন। তদন্তভার গ্রহণ করেন তৎকালীন দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। পরবর্তীতে এ মামলার র্দীঘতদন্ত হয়। তদন্তকালীন সময়ে অনেকবার তদন্তকারী কর্মকর্তা বদলি হন। প্রায় সাড়ে চার বছর পর ২০০৮ সালের ১৪ ডিসেম্ভর মুফতি আব্দুল হান্নান মুন্সি, হাফিজ সৈয়দ নাঈম আহমদ ওরফে আরিফ, শরিফ সাহেদুল আলম ওরফে বিপুল, মফিজুল ইসলাম মফিজ ওরফে অভি, দেলোয়ার হোসেন রিপন, মুফতি মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল ও নাজিউর রহমান নাজু ওরফে নাজমুল হক নাজু কে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। নাজুমল হক নাজু কে পলাতক দেখানো হয়। আনোয়ার হোসেন ওরফে আনোয়ার, শামছুল হক, আব্দুল আজিজ ওরফে হানিফ কে অভিযোগ পত্রে অব্যাহতির প্রার্থনা করা হয়।
আসামি পক্ষের আইনজীবী জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ এডভোকেট ফজলুল হক আসপিয়া তার প্রতিক্রিয়ায় ইনকিলাবকে বলেন, সিলেট সিটি কপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র গোলাম কিবরিয়া গৌছ কে শুধমাত্র রাজনৈতিকভাবে হয়রানী করার উদ্দেশ্যেই দীর্ঘদিন আগের এ মামলায় জড়িত করা হলো। তাদেরকে জড়িত করার কোনো উপাদান এ মামলায় নাই। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে এপিপি নজরুল ইসলাম সেপু বলেন এটি একটি চাঞ্চল্যকর মামলা। আসামিদের গ্রেফতার দেখানোর যথেষ্ট যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ