Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শরণার্থী ও অভিবাসনের নতুন ঢলের জন্য ইউরোপ প্রস্তুত নয়

দ্য গার্ডিয়ান | প্রকাশের সময় : ২৬ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

রাশিয়াকে পরাস্ত করতে যেয়ে ইউরোপ জুড়ে গ্যাস ঘাটতির পাশাপাশি বেড়েছে মুদ্রাস্ফীতি এবং কোভিড। সেইসাথে ইউরোপ এখন অনথিভুক্ত শরণার্থীদের দ্রুত ক্রমবর্ধমান ঢলের মুখোমুখি। তবে, ২০১৫ সালে ইউরোপের উপকূলে দিয়ে ১০ লাখ শরণার্থী (বেশিরভাগই সিরিয়ান) আসার পর যে আর্থ-রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়েছিল, তার প্রেক্ষিতে, ইইউ এবং যুক্তরাজ্য এই সময় শরণার্থী ও অভিবাসন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে আরও ভালভাবে প্রস্তুত নয় বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশেষজ্ঞরা।

শুক্রবার ইস্তাম্বুলে যদিও ওডেসা এবং অন্য দুটি ইউক্রেনীয় বন্দর থেকে শস্যের জন্য নিরাপদ সমুদ্র রুট তৈরি করার উদ্দেশ্যে একটি অনিশ্চিত চুক্তি হয়েছে, যা পর্যন্ত আমদানি নির্ভর উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপর চাপ কমাতে পারে, তবে চুক্তিটি বজায় থাকলেও, পুনরায় বাণিজ্য শুরু হতে সময় লাগবে। সংঘর্ষ চলতে থাকলে রফতানি যুদ্ধ-পূর্ব পর্যায়ে পৌঁছাতে পারবে না। অবরোধগুলো প্রত্যাহার করা হলেও, ২০২৩ সালেও ইউরোপে অনিয়ন্ত্রিত অভিবাসন বাড়তে থাকবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

ইউ সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্সের প্রকাশিত পরিসংখ্যান বলছে যে, ২০২২ সালের প্রথমার্ধে অঞ্চলটিতে অবৈধ প্রবেশ বেড়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৭শ’ ২০টি, যা গত বছরের তুলনায় ৮৪ শতাংশ বেশি। পশ্চিম বলকান অঞ্চলে অনুপ্রবেশের চেষ্টার সংখ্যা প্রায় ২শ’ শতাংশ বেড়েছে। এবছর প্রায় ৬০ হাজার শরণার্থী নৌ পথে অনুপ্রবেশ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা ২০২১ সালের মোট দ্বিগুণ। আশ্চর্যজনকভাবে, এই পরিসংখ্যানগুলোতে ফেব্রুয়ারি থেকে ইইউতে আশ্রয় চাওয়া লাখ লাখ ইউক্রেনীয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বেশিরভাগ অ-ইউক্রেনীয় উদ্বাস্তু এবং অনিয়মিত হিসাবে শ্রেণীবদ্ধরা সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক, তুরস্ক, বেলারুশ, বাংলাদেশ, মিসর এবং সাহারার কাছের আফ্রিকা থেকে এসেছে। বহু অভিবাসী এখনো সনাক্তকরণের বাইরে রয়ে গেছে।

গত বছর পশ্চিমারা আফগানিস্তান পরিত্যাগ করার পর শরণার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। ইদলিবসহ সিরিয়ায় অব্যাহত সংঘর্ষ, কুর্দি এলাকায় আরো আন্তঃসীমান্ত তুর্কি সামরিক অনুপ্রবেশের হুমকি, বিভিন্ন মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকান সঙ্ঘাত, এবং ইরাক যুদ্ধের ফলাফল বৈশি^ক অস্থিতিশীলতাকে ক্রমেই উস্কে দিচ্ছে। এরমধ্যে, জলবায়ূর জরুরি অবস্থার ক্রমবর্ধমান প্রভাব ইউরোপের সামগ্রিক অভিবাসন চিত্রকে জটিল করে তুলেছে। কিন্তু এই মুহূর্তে কৃষ্ণ সাগর অবরোধের ফলে খাদ্য সরবরাহ ও ঘাটতির হুমকি, মূল্যস্ফীতি এবং সামরিক অস্থিরতা এর বড় ও নতুন কারণ।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ১ কোটিরও বেশি এবং ইউক্রেন যুদ্ধ চলতে থাকলে এই রেকর্ড ভেঙে যাবে। বিশ্লেষক এলিজাবেথ ব্রাও ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, ‘পরোক্ষ যুদ্ধের শিকারদের প্রথম ঢেউ ইউরোপের দিকে ধাবিত হচ্ছে এবং প্রায় নিশ্চিতভাবেই আরও বড় ঢেউ এটি অনুসরণ করবে।’ ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক কমিশনার ইলভা জোহানসন বলেন, ‘ইউরোপ একটি বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। সংযুক্ত খাদ্য ও জ¦ালানী সঙ্কট দেশগুলোকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে, সংগঠিত অপরাধী গোষ্ঠীগুলো শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। তার মানে মানুষ তাদের দেশে থাকতে নিরাপদ বোধ করবে না।’

ইইউর ২০২০ সালের অভিবাসন চুক্তির সর্বশেষ পুনর্নবায়ন একটি ‘স্বেচ্ছাসেবী সংহতি প্রক্রিয়া’তে সীমিত, যা অস্পষ্ট শব্দযুক্ত এবং ঐক্যমতের অভাব রয়েছে। যেমন, ২০১৫ সাল থেকেই অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড এবং অন্যান্যরা মূলত এখনও গ্রীস, ইতালি, মাল্টা, সাইপ্রাস এবং স্পেনের মতো দেশগুলোকে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য অর্থ প্রদান এবং পুনর্বাসন জন্য আরও সহায়তা দিতে অস্বীকার করে আসছে। অক্সফামের স্টেফানি পোপ বলেন, ‘ফলাফল হবে নিয়ন্ত্রনহীন প্রবেশ ও উপচে পড়া আশ্রয় ব্যবস্থা, শিবিরে মানুষের নারকীয় অবস্থা এবং ইউরোপের সীমান্তগুলো থেকে আরও ফেরত পাঠানো এবং আরো মৃত্যু।

সমালোচকরা আরো বলেছেন যে, ইউক্রেনীয়দের সাথে অ-ইউক্রেনীয়দের তুলনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের কথিত উদার আচরণের একটি উজ্জ্বল দ্বৈত নীতি এবং বর্ণবাদী বৈষম্যের উদাহরণ। ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র সচিব প্রীতি প্যাটেলকে তাই কেউ অভিযুক্ত করতে পারেনি। ইউক্রেন প্রকল্পের জন্য তার একাগ্র, জাতিবিদ্বেষী আমলাতান্ত্রিক প্রচারণা বরিস জনসনের মিথ্যা দাবিকে পোক্ত করেছে যে, ইউক্রেনকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য বিশ্বের নেতৃত্ব দিচ্ছে। ইউরোপে অবৈধ অভিবাসন আরো বাড়ার সাথে সাথে ইউরোপ জুড়ে রাজনৈতিক পতনের ঝুঁকি বাড়ছে। যেমন, সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে ইতালি উগ্র ডানপন্থী রাজনীতিবিদরা এএফডি’র (জার্মানির বিকল্প) মতো রাজনৈতিক সাফল্যের আশা করছেন।



 

Show all comments
  • Mohmmed Dolilur ২৬ জুলাই, ২০২২, ৬:৩৯ এএম says : 0
    অস্রে যোগান বন্ধ না হলে যুদ্ধ বন্ধ হবে না,ইউক্রেন এর উচিত রাশিয়ার সাথে আপসে করে পৃথিবীর শান্তি ফিরিয়ে দেওয়া,আমি মনে করি ইউক্রেন ইউরোপের আমেরিকার কারনেই পৃথিবীর এই ভয়ানক অবস্থা,তাহারা যেটা মনে করে রাশিয়াকে দমনে সম্ভব,সে আশা করতে গেলে পৃথিবীর মান চিত্র বদলে যাবে,যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাশিয়ার সাথে আপস না করবে ততই ধবংসের দিকে যাবে,পরবর্তীতে পূরা পৃথিবীতে যুদ্ধ পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে,মানুষের মাঝে বিবাদ সৃষ্টি হবে,গরিব দেশ গুলি যখন ধবংসের দিকে যাবে সমস্ত পৃথিবীতে কাটা কাটি মারা মারি আরম্ভ হবে,সেটিই হবে যার নাম হবে কেয়ামতের,এখনও সময় আছে সমাধান করার।অন্যথায় পৃথিবীতে দুর্ভিক্ষ আরম্ভ হবে মানুষে মানুষে রক্ত পাত হতে থাকবে,কেয়ামতের শেষ পান্থে এসে গেছে ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অভিবাসন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ