Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ডলারের দাম রেকর্ড ১১৫ টাকা, আরো ৩০ পয়সা কমলো টাকার মান

আগস্টের চারদিনে রেমিট্যান্সে ৫৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

নানা পদক্ষেপ নিয়েও মার্কিন ডলারের সঙ্কট কাটাতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দিন দিন বাড়ছে দাম। খোলাবাজারে ডলারের দাম ১১৫ টাকা পেরিয়েছে। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম ডলারের দাম এত বেড়েছে। অপরদিকে ডলারের বিপরীতে কমছে টাকার মান। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে গতকাল ডলার বিক্রি করেছে ৯৫ টাকা দরে। এদিন আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কিনতে খরচ করতে হয়েছে ৯৫ টাকা। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারি আমদানি বিল মেটাতে এ দরে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করেছে। নিয়ম অনুযায়ী এটিই ডলারের আনুষ্ঠানিক দর। একদিন আগেও এ দাম ছিল ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা। মে মাসের শুরুর দিকে এ দর ছিল ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সায়। সেই হিসাবে দেড় মাসের ব্যবধানে টাকার মান কমেছে ৮ টাকা ৫৫ পয়সা। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন দামে ১৩৯ মিলিয়ন ডলার বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বিক্রি করেছে। এদিন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩৯ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলারে। তবে কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে নগদ কিনতে গ্রাহককে গুনতে হচ্ছে ১১৫ টাকা ৫০/৬০ পয়সা। গতকাল বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতেও ১০৭ থেকে ১০৮ টাকা পর্যন্ত দামে নগদ ডলার বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে গতকাল কার্ব মার্কেটে প্রতি ডলার রেকর্ড ১১৫ টাকা ৬০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে। তারপরও চাহিদা অনুযায়ী ডলার মিলছে না। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম ডলারের দাম এত বেড়েছে। এর আগে, গত ২৬ জুলাই ডলারের দাম বেড়ে ১১২ টাকা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপে কয়েকদিন স্থিমিত থাকার পর গতকাল ডলারের দাম রেকর্ড ছাড়ায়। খোলা বাজারে ডলারের সরবরাহ কম থাকায় খোলাবাজারে ডলারের দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন মতিঝিল এলাকায় খোলা বাজারের একাধিক ডলার বিক্রেতা। সূত্র মতে, দেশে মুদ্রাবাজারের ইতিহাসে এক দিনে ডলারের বিপরীতে টাকার মানের এতটা অবমূল্যায়ন হয়নি। এর আগে ২৬ জুলাই খোলাবাজারে ডলারের সর্বোচ্চ দর উঠেছিল ১১২ টাকা। প্রতি ডলার ১০৮ থেকে ১১০ টাকা দরে গতকাল সোমবার খোলাবাজারে বেচাকেনা শুরু হয়। সেখান থেকে বাড়তে বাড়তে তা ১১৫ টাকা ছাড়িয়ে যায়। খোলাবাজারের সঙ্গে ব্যাংকের আমদানি, রফতানি ও রেমিট্যান্সেও ডলারের দর অনেক বেড়েছে।

খোলাবাজার থেকে যে কেউ ডলার কিনতে পারেন। ব্যাংক থেকে কিনতে পাসপোর্ট এনডোর্সমেন্ট করতে হয়। যে কারণে অনেকে এখন খোলাবাজার থেকে ডলার কিনে শেয়ারবাজারের মতো বিনিয়োগ করছেন, যা অবৈধ। আবার অনেকে ঘুষ লেনদেনে অল্প নোটে অধিক টাকা নেয়া যায় বলে মাধ্যম হিসেবে ডলারে লেনদেন করছেন।
রাজধানীর মতিঝিলে যমুনা মানি এক্সচেঞ্জের স্বত্বাধিকারী আনিসুজ্জামান বলেন, বাজারে ডলারের সঙ্কট। চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ডলার নেই। অনেকে ডলার কিনে ধরে রাখতে চাইছে। এ জন্য লাগামহীন দর বাড়ছে। কার্ব মার্কেটের ব্যবসায়ী আবুল বাশার বলছেন, ব্যাংকের মতো খোলাবাজারেও ডলারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। প্রবাসীদের দেশে আসা কমেছে, বিদেশি পর্যটকও কম আসছেন। এ কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহ কমে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার মান বেশ কিছুদিন ধরেই টানা কমছে। বর্তমানে প্রতি ডলার ৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ব্যাংকগুলো এই দরে ডলার কিনেছে।

অবশ্য ডলারের কারসাজি রোধে খোলা বাজার ও এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোতে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত সপ্তাহ পর্যন্ত কারসাজির অপরাধে পাঁচ মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি ৪২টিকে শোকজ করা হয়েছে। এছাড়া লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করায় ৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলা হয়েছে।

এদিকে বিশ্বজুড়ে অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তার মধ্যে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বেড়েই চলেছে। জুলাই মাসের পর আগস্ট মাসেও বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের পালে জোর হাওয়া লেগেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট সূত্রে জানা গেছে, আগস্ট মাসের প্রথম ৪ দিনেই ৩৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এ হিসাবে প্রতিদিন দেশে আসছে ৮৬৯ কোটি টাকা। যা গত বছরের আগস্টের একই সময়ের চেয়ে ৫৬ শতাংশ বেশি। বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ৯৫ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে ৪ দিনের এই রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৩ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকার বেশি।

বাজারে ডলারের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ব্যাংকগুলো ১১০ টাকা দরেও রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে। সে হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ আরও বেশি। গত বছরের জুলাই মাসের ৪ দিনে (১ থেকে ৪ জুলাই) ২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত (১ মাস ৪ দিনে) ২৪৬ কোটি ৪০ লাখ (২ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত ২১০ কোটি ৭০ লাখ (২ দশমিক ১০ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

নতুন অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২০৯ কোটি ৬৯ লাখ ১০ হাজার (২ দশমিক ১ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিলগত ১৪ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে বেশি ১২ শতাংশ। প্রতি ডলার ৯৫ টাকা হিসাবে টাকার অঙ্কে ওই অর্থের পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।

করোনা মহামারির পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ধাক্কায় ওলোটপালট হয়ে যাওয়া অর্থনীতিতে জ্বালনি তেলের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধিতে যখন দেশজুড়ে ক্ষোভ ও হতাশার তথ্য, তখন স্বস্তির ইঙ্গিত দিচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের প্রবাহ। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্সের বিস্ময়কর উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। চলতি জুলাইয়ের প্রবণতা অব্যাহত থাকলে এই অর্থবছরে তৈরি হবে নতুন রেকর্ড। এতে অনেকটাই চাপমুক্ত হবে দেশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক মাসে ডলারের দর বেশ খানিকটা বেড়েছে। প্রণোদনার পরিমাণ দুই শতাংশ থেকে আড়াই শতাংশ করা হয়েছে। এসব কারণে প্রবাসীরা এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। সে কারণেই বাড়ছে রেমিট্যান্স। তিনি বলেন, নানা পদক্ষেপের কারণে আমদানি ব্যয় কমতে শুরু করেছে। রফতানির পাশাপাশি রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণে আশা করছি এখন মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতি চাঙা হয়েছে। সেখানে কর্মরত আমাদের প্রবাসীরা বেশি আয় করছেন। দেশেও বেশি টাকা পাঠাতে পারছেন। দেশে ডলারের সঙ্কট চলছে। মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা চলছে। রিজার্ভ কমছে। এই মুহূর্তে রেমিট্যান্স বাড়া অর্থনীতির জন্য খুবই ভালো হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ও তেমন পূর্বাভাস দিয়েছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অর্থবছরজুড়ে (২০২১-২২) ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিতে থাকা প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে নতুন অর্থবছরে ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক গত ৩০ জুন ২০২২-২৩ অর্থবছরের নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। এতে বলা হয়, রেমিট্যান্স ঊর্ধ্বমুখী হবে এবং চলতি অর্থবছরে গত বছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি আসবে।##



 

Show all comments
  • Hossain Ahmed Numan ৯ আগস্ট, ২০২২, ৫:৩২ এএম says : 0
    · রেমিটেন্স না আসলে ভালো হতো দেশে ডাকাতি শুরু করে দিয়েছে
    Total Reply(0) Reply
  • Manjurul Sagar ৯ আগস্ট, ২০২২, ৫:৩৩ এএম says : 0
    আলু আর চালের বাজার উত্তপ্ত হবে। কারণ ইউরিয়া ও পটাশিয়াম এর বস্তাপ্রতি 400 থেকে 300 টাকা বৃদ্ধি বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে আলুর কেজি হয়তোবা 100 থেকে 200 লাগতে পারে
    Total Reply(0) Reply
  • MD Sujon Mahamud ৯ আগস্ট, ২০২২, ৫:৩২ এএম says : 0
    এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, উন্নায়ন হেই ও উন্নায়ন হেই ও,,,,,,,, কোনও বাধা দেওয়া যাবে না চলতে তো চলবেই,
    Total Reply(0) Reply
  • জে এম গোলাম আহাদ ৯ আগস্ট, ২০২২, ৫:৩৩ এএম says : 0
    প্রতিমাসে ডলার অাসে চিন্তা নেই
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মার্কিন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ