Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পালিয়ে আসা নির্যাতিতা রোহিঙ্গা ‘মুহসিনা’র মানবেতর জীবন

| প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, টেকনাফ : টেকনাফের  লেদা  রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ধর্ষিতা রোহিঙ্গা তরুণী মুহসিনা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন বলে খবর পাওয়া  গেছে। মা, বাবা, স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি  কেউ  নেই। ৫ জনই মিয়ানমার  সেনার হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন। মাথা  গোঁজার ঠাঁই বসতবাড়িটিও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সব হারিয়েও সৌভাগ্যক্রমে  বেঁচে যাওয়া সহোদর ভাই খাইর আহমদের সাথে অন্তত জীবনটা বাঁচানোর তাগিদে ও ‘আরকান’ নামে পাঁচ মাস বয়সী শিশু পুত্রের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে সর্বহারা অনাথ ২১ জনের সঙ্গে গত ২৭ নভেম্বর  ভোর রাতে  টেকনাফ উপজেলার  হোয়াইক্যং ইউনিয়নের তুলাতলী পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে লেদা ক্যাম্পে চলে এসেছে। ৩০ নভেম্বর বিকালে সরেজমিন  লেদা  রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে তার সাথে কথা বলে জানা গেছে এ তথ্য।
মুহসিনা জানান, মিয়ানমারের আরকান রাজ্যের মংডু টাউনশীপের আওতাধীন উত্তর জামবইন্যা  গ্রামের বাসিন্দা আবদুস শুক্কুরের স্ত্রী। আবদুস শুক্কুরের বাবার নাম ছৈয়দ আহমদ ও মায়ের নাম নুরজাহান  বেগম। প্রায় ৩ সপ্তাহ আগে মিয়ানমার সেনা তাদের গ্রামে অভিযান চালায়। এসময় ৭ জন  সেনার হাতে পালাক্রমে ধর্ষণের শিকার হন। গ্রামের দুই শতাধিক বাড়ি জ্বালিয়ে  দেয়া হয়। মা, বাবা, স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি সকলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, পালাক্রমে ধর্ষণের পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সেনা চলে যাবার পর স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করানো হয়েছে। সামান্য সুস্থ হলে জীবিত থাকা আত্মীয়দের সহযোগিতায় বাংলাদেশে পাড়ি জমান। এখানে এসেও চিকিৎসা করা হয়েছে এবং এখনও অব্যাহত আছে। বাংলাদেশে এসে স্বস্তি বোধ করলেও তিনি খাবার, বাসস্থান, পোশাক, শীত কাপড়ের সংকটে রয়েছেন বলে জানান।
লেদা  রোহিঙ্গা ক্যাম্পের  রোহিঙ্গা  নেতা ডা. দুদু মিয়া জানান, মুহসিনা ছাড়াও মিয়ানমার  সেনার হাতে ধর্ষণের শিকার আরও কয়েকজন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা নারী প্রথমে  লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিলেও পরবর্তীতে শামলাপুর এবং কুতুপালং চলে গিয়েছে। তাদের নাম-ঠিকানা সংরক্ষণ করা হয়নি। তিনি আরও জানান, লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরকারি বা বেসরকারিভাবে  কোনো  রেশন ব্যবস্থা  নেই। এমনিতেই নিজেদের  বেহাল অবস্থা। উপরন্তু নতুন করে আরও প্রায় ২ হাজার অনুপ্রবেশকারী  রোহিঙ্গাদের চাপে বিশেষত খাবার সংকটে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। তাছাড়া প্রতিদিনই ঢুকছে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা। এক দিনে শুধু  লেদা  রোহিঙ্গা ক্যাম্পেই আরও শতাধিক অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা ঢুকেছে। এদের জন্য সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা আসেনি।
তবে সরেজমিন পরিদর্শনকালে  দেখা  গেছে, ধর্ষিতা মুহসিনাসহ আরও কিছু অনুপ্রবেশকারী  রোহিঙ্গা নারী-শিশু-পুরুষ  লেদা  রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ‘এ’ ব্লকে ডাঃ কবিরের আশ্রয়ে রয়েছেন। ডাঃ কবির জানান, এরা তার আত্মীয় এমনকি পরিচিতও নন। মানবিক কারণে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। মানুষের সাহায্য নিয়ে এদের জন্য  কোনো রকম খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারের কুমিরখালী, শীলখালী, ঝিমংখালী, শনখলা পাড়া, নাকফুরা ইত্যাদি মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামে নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। এতদিন গ্রামগুলো অক্ষত ছিল। নাকফুরা গ্রামের প্রসিদ্ধ আলেম মাওঃ নুরুল আলমের পুত্র হাফেজ মাওঃ আনাসকে (১৯) মিয়ানমার  সেনারা প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেছে। তাছাড়া বসতঘরে এখনও অগ্নিসংযোগ না করলেও মুসলমানদের চাষাবাদের ধানের স্তূপ এবং ফিশারি ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে।



 

Show all comments
  • Nibir ১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১:২৫ এএম says : 0
    Asun amra sobi ader pase darai
    Total Reply(0) Reply
  • MD Kuddus Mondol ১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১:১৩ পিএম says : 0
    Allah tahader sohai houk.
    Total Reply(0) Reply
  • NASIM ১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ২:০৮ পিএম says : 0
    ওআইসির মজলুমানের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন।
    Total Reply(0) Reply
  • kasem ১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ২:১০ পিএম says : 2
    কোথায় জাতিসংঘ? কোথায় ওআইসি? রাজনৈতিক নেতৃত্ব? শান্তির নামে বড় বড় বুলি আউড়িয়ে যারা সমস্ত অশান্তির ধারক-বাহক তারা কোথায়?
    Total Reply(0) Reply
  • Munna ১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ২:১৩ পিএম says : 1
    রোহিঙ্গা নির্যাতন সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে
    Total Reply(0) Reply
  • Kamal Uddin ১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ২:৪৩ পিএম says : 0
    আল্লাহ!আল্লাহ!আল্লাহ!
    Total Reply(0) Reply
  • ziaulhoq ১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ৩:৪৫ পিএম says : 0
    মুসলিম জনগোষ্ঠি বলে কি এই পরিণতি? হায়!!! কোথায় আজ বিশ্ব্য মানবতা।
    Total Reply(0) Reply
  • nazrulislam ১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ৩:৫১ পিএম says : 1
    Allah taderkehefazot korun ameen
    Total Reply(0) Reply
  • Zahirul I Slam ১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ৫:১২ পিএম says : 0
    Allah help everyone ameen
    Total Reply(0) Reply
  • মুহিববুল্লাহ জামী ১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ৭:৪৬ পিএম says : 0
    বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদেরকে অর্থ-সাহায্য করার কোন নির্ভরযোগ্য সূত্র আছে কি? আমরা যৎসামান্য সহযোগিতা করার সুযোগ খুঁজছি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ