Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সাধারণ মানুষের সুরক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সামাল দিতে স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য গত মার্চ-এপ্রিলে টিসিবি ১ কোটি পরিবারকে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেয়। এই শ্রেণীর মানুষের মধ্যে করোনাকোলে আড়াই হাজার টাকা নগদ সহায়তা পাওয়া সাড়ে ৩৮ লাখ এবং নতুন সাড়ে ৬১ লাখ পরিবার রয়েছে। অস্বচ্ছল পরিবারকে সহায়তামূলক সরকারের এই উদ্যোগটি এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। তালিকাভুক্ত অনেকে পরিবারই এই উদ্যোগের সুফল পাচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অফ বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর এক জরিপে বলা হয়েছে, ফ্যামিলি কার্ড সম্পর্কে তথ্য না থাকা, তালিকা তৈরিতে অস্বচ্ছতা, সচ্ছল ব্যক্তিদের কার্ড দেয়া, তদবির না থাকা এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় কার্ড দেয়া। বলার অপেক্ষা রাখে না, সরকারের এই ভালো উদ্যোগ উল্লেখিত কারণগুলো অনেকটাই ব্যর্থ করে দিচ্ছে। এতে সরকারের বদনাম হচ্ছে।

সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনির আওতায় নেয়া সরকারি আর্থিক প্রণোদনা, ন্যায্যমূল্যে পণ্য সরবরাহ ও অন্যান্য সুবিধার ক্ষেত্রে অনিয়মের বিষয়টি নতুন নয়। দীর্ঘকাল ধরেই এই অনিয়ম চলে আসছে। এর প্রতিকার হয়নি। স্থানীয় প্রভাবশালী, জনপ্রতিনিধি, সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের স্বজন ও দলপ্রীতির কারণে উদ্যোগের আওতাধীন প্রকৃত মানুষ বঞ্চিত হয়েছে এবং হচ্ছে। করোনা মহামারিতে স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষের দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাওয়া এবং বিগত কয়েক মাস ধরে চলমান নিত্যপণ্যের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধিতে শুধু স্বল্প আয়ের মানুষই নয়, অসংখ্য মধ্যবিত্ত পরিবার নিম্ন মধ্যবিত্তে এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার দরিদ্র হয়ে গেছে। এসব মানুষকে কিছুটা সুরক্ষা দেয়ার জন্য সরকার তার সামর্থ্যরে মধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে নগদ অর্থ প্রদান, কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া, স্বল্পমূল্যে পণ্য বিক্রি এবং সর্বশেষ ১ কোটি পরিবারকে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে সহায়তা দেয়া। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, এসব কর্মসূচির প্রত্যেকটিই বিতর্কের মুখে পড়েছে। বহু কৃষক প্রণোদনার অর্থ পায়নি, মোবাইলে আড়াই হাজার টাকা করে নগদ অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিসহ সরকারি দলের অনেক লোক একাধিক মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা নিয়ে গেছে। ফ্যামিলি কার্ড বিতরণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছল লোকজন, সরকারি দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকরাই বেশি সুবিধা পাচ্ছে। সাধারণ মানুষ কিংবা দলের অন্যকোনো দলের লোকজন এ কর্মসূচির আওতায় পড়েনি বললেই চলে। এই যে ১ কোটি মানুষকে ফ্যামিলি কার্ড দেয়ার কর্মসূচি, তা যদি প্রকৃত অসচ্ছল মানুষ পেত, তাহলে এই দুর্মূল্যের বাজারে কিছুটা হলেও তারা স্বস্তি পেত। সবাই না হলেও কিছু মানুষ অন্তত সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য পেত। সরকারেরও সুনাম হতো। তা না হয়ে, স্বচ্ছল ও রাজনৈতিক বিবেচনায় সুবিধাভোগী তালিকা করায় প্রকৃতরা বাদ পড়ে গেছে এবং উদ্যোগটি প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে। এতে এমন ধারণার সৃষ্টি হয়েছে, সরকারি দলের লোকজন সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ায় না। সরকারি সুবিধা লাভের অধিকার কেবল তাদেরই। কঠিন এক পরিস্থিতিতে নিত্যপণ্যের মূল্য প্রতিদিনই বাড়ছে। সাধারণ থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর নাভিশ্বাস উঠেছে। তারা খরচ কমিয়ে, একবেলা না খেয়ে ও কৃচ্ছ্রসাধন করেও কুলিয়ে উঠতে পারছে না। দিন আনে দিন খায় কিংবা নিম্ন আয়ের মানুষ চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছে। মধ্যবিত্তদের পরিস্থিতি সবচেয়ে করুণ। তারা না পারে কারো কাছে কিছু চাইতে, না পারে সইতে। এই রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতির অবসান কবে হবে, তা অনিশ্চিত।

এ পরিস্থিতি বেশি দিন থাকবে না, শিঘ্রই কেটে যাবে, অল্প কিছু দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হবে, সরকারের মন্ত্রী ও নেতৃবন্দের মুখে এখন এমন আশ্বাসের কথা অহরহ শোনা যাচ্ছে। তারা এটা ভাবছে না, বর্তমানে মানুষের ত্রাহি অবস্থা চলছে, তাদের বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়েছে, ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা করার মতো পরিস্থিতি তাদের নেই। অতি শোচনীয় এই পরিস্থিতি যদি সামাল না দেয়া যায়, তাহলে ভবিষ্যতে কী দাঁড়াবে সেটা সহজেই অনুমেয়। ভবিষ্যতে কি হবে, সরকারের মন্ত্রীদের এমন বক্তব্য-বিবৃতি ও আশ্বাস শুনতে চায় না। মানুষ চায় অবিলম্বে সরকার তাদেরকে এই অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করুক। আমরা মনে করি, সাধারণ মানুষের জীবনযাপন স্বস্তিদায়ক করতে যা করার এখনই করতে হবে। সরকারকে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। কিভাবে মানুষ বেঁচে থাকবে সে ব্যবস্থা ও উদ্যোগ নিতে হবে। সরকার যেসব সামাজিক সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা এবং প্রকৃত লোকজন সুবিধা পাচ্ছে কিনা, এ ব্যাপারে কার্যকর তদারকি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। যারা অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি করেছে এবং করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

 



 

Show all comments
  • jack ali ১৪ আগস্ট, ২০২২, ৬:০৫ পিএম says : 0
    আমাদের মোমেন সাহেব তো বলেই দিয়েছে যে বাংলাদেশের মানুষ বেহেশতে আছে হ্যাঁ অবশ্যই তারা বেহেস্তে আছে তবে যারা আওয়ামী লীগ করেন প্রধানমন্ত্রী থেকে সবাই যারা আওয়ামী লীগ করে তারা তো বেহেশতী আছে| এদেশ তো আমাদের মত সাধারন জনগনের না আমরা হচ্ছে পরগাছা এদেশে মুজিব পরিবারের এবং আওয়ামী লীগের
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সাধারণ মানুষের সুরক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে
আরও পড়ুন