Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আর্থিক সংকটে খুমেক হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধের মুখোমুখি

বৃহত্তর আন্দোলনের আহ্বান বিএমএ’র

| প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ.টি.এম. রফিক, খুলনা থেকে : খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আর্থিক সংকটের কারণে চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে। নানা সমস্যার কারণে রোগী ও চিকিৎসকদের মধ্যে প্রায়শ বাঁধছে বচসা। জনস্বার্থ ব্যাহত হচ্ছে। জ্বালানি সরবরাহের জটিলতার কারণে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস বন্ধ। পদ্মার এ পাড়ের সর্ববৃহৎ এ হাসপাতালটির সংকট-সমস্যা সৃষ্টির জন্য জটিল আমলাতন্ত্রকে দায়ী করেন চিকিৎসক নেতারা। তাই এসব সমস্যা-সংকট নিরসনে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন খুলনার নেতৃবৃন্দ।
সূত্র মতে, গেল বছরের মার্চে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ও বার্ন ইউনিট পরিদর্শন করেন। এর ১০ মাস আগেও খুলনা সফরে এসে তিনি দিয়েছিলেন চাহিদার চেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি। আড়াইশ’ বেডের জনবল দিয়ে চলমান ৫০০ শয্যার খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে (খুমেক) এক হাজার বেডে উন্নীত করা হবে এমন কথাও বলেছিলেন। খুমেক হাসপাতালের এমএসআর সামগ্রী কেনার জন্য ৫ কোটি টাকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। ওইসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন তো দূরের কথা; হাসপাতালের সংকট-সমস্যায় আন্দোলনে নেমেছেন চিকিৎসকরা। গত ২ মার্চ (স্মারক নং-০৫.০০.০০০০.১৫৯.০০.০১৮.০২ (অংশ-২)-১১৯) খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৫০০ শয্যার জনবল নিয়োগে সম্মতি দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সম্মতি দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন খুলনার চিকিৎসক নেতারা। হাসপাতালের আর্থিক সংকটের কারণে চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ হবার উপক্রমে রাস্তায় নেমেছেন তারাই।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পেট্রোলপাম্পে ১৭ লাখ টাকা বকেয়া থাকায় খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সসহ সব ধরনের যানবাহন বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালটির বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে দেড় কোটি টাকারও বেশি। আর ৫০০ শয্যার হাসপাতালটিতে ওষুধ ও খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে ২৫০ শয্যার হিসাব ধরে। ফলে পদ্মার এ পাড়ের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাধারণ মানুষ খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আমলাদের হীন চক্রান্তে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জনবল দিয়ে চলছে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল। আর তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রবল আর্থিক সংকট। উভয় সংকটের শিকার হচ্ছে নিরীহ রোগী আর চিকিৎসকদের পড়তে হচ্ছে রোষানলে। দুর্ভোগ নিরসনে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে বৃহত্তর আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন খুলনার নেতৃবৃন্দ। খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আর্থিক সংকট দ্রুত সমাধানের দাবিতে গত সোমবার দুপুরে মহানগরীর সাতরাস্তার মোড়স্থ শহীদ ডা. মিলন চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিএমএ খুলনা।
খুলনা বিএমএ’র সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএমএ’র সহ-সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, অবিলম্বে খুমেক হাসপাতালের আর্থিক সংকটসহ সকল সংকট-সমস্যা দূর করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। আমলারা সুকৌশলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করছেন। তাদের হীন চক্রান্তের ফলে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জনবল দিয়ে চালাতে হচ্ছে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল যার ফলে তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদি সংকট। তার সাথে যুক্ত হয়েছে প্রবল আর্থিক সংকট। উভয় সংকটের শিকার হচ্ছে নিরীহ রোগী আর চিকিৎসকদের পড়তে হচ্ছে রোষানলে। অতিরিক্ত চাপে রোগীদের অবস্থান হচ্ছে বারান্দায় আর এই বিপুলসংখ্যক রোগীর চিকিৎসা দেয়া চিকিৎসকদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এই জটিলতা নিরসনে বারবার আবেদন করে ও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এই দুর্ভোগ নিরসনের জন্য সকল শ্রেণি-পেশার মানুষদের ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনীহার কারণে প্রায়ই অর্থ সংকট সমাধানে সরকারের ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান। তিনি বলেন, খুলনা বিভাগের সর্ববৃহৎ এ হাসপাতালটি দীর্ঘদিন ধরে আড়াইশ’ বেডের জনবল দিয়ে চলছে। যদিও বলা হচ্ছে এটি ৫শ’ বেডের হাসপাতাল। দাবি এখন হাজার শয্যায় উন্নীত করে কলেজ মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার। কিন্তু তীব্র আর্থিক ও জনবল সংকটের কারণে সরকারের সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটি আজ বন্ধ হতে বসেছে। এ সমস্যা-সংকট দূর করার পাশাপাশি অর্থ বরাদ্দে দ্রুত ব্যবস্থার দাবি জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আর্থিক

২৩ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ