Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বরিশাল মহানগরীর বেশীরভাগ এলাকা ৪দিন ধরে পানির তলায়

ভঙ্গুর পয়ঃ নিস্কাশন ব্যবস্থা নিরশনে অন্তরায় মহানগরীর জলাবদ্ধতা স্থায়ী হচ্ছে

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৫ আগস্ট, ২০২২, ৫:২০ পিএম

গত চার দিন ধরে বরিশাল মহানগরীর বেশীরভাগ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো পানির তলায়। শ্রাবনের পূর্ণিমার ভরা কাটালে নগরীর পাশে বহমান কির্তনখোলার পানি নগরীতে প্রবেসের সাথে গত কয়েকদিনের মাঝারী বর্ষণে এ নগরীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরম বিপর্যয়ের কবলে। রাস্তাঘাট প্লাবিত হওয়ায় অনেক এলাকার মানুষ ঘর থেকে বের হতেই পারছেন না। অথচ গত ১০ আগষ্ট সকাল ৬টা থেকে ১৫ আগষ্ট সকাল ৬টা পর্যন্ত এ নগরীতে সর্বমোট বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল ১৪০ মিলিমিটারের মত। দৈনিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমান ৩০ মিলির কম হলেও নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কেও এখন ঢেউ খেলছে পানি।

এদিকে গত দুই দশকে বরিশাল বন্দরের নাব্যতা উন্নয়নের নামে কির্তনখোলা থেকে অপাসারিত বালু অবার নদীতেই ফেলায় বন্দরের ভাটিতে নদীর তলদেশ ক্রমশ উচু হয়ে যাচ্ছে। এমনকি আত্মঘাতি এ কর্মকান্ডে নগরীর মধ্যে প্রবাহমান খালগুলো যেখানে কির্তনখোলায় মিসেছে, সেসব মোহনা উচু হয়ে নগরীর অনেক ড্রেন ও খালগুরোতে জলাবদ্ধতা দীর্ঘতর হচ্ছে। সাথে যোগ হয়েছে সিটি করপোরেশনের ভঙ্গুর পয়ঃনিস্কাশন ব্যাবস্থা এবং খাল ও ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিচ্ছন্ন রাখা সহ রক্ষনাবেক্ষনের উদাশীনতা।
ফলে গত কয়েক বছর ধরে অমাবশ্যা ও পূর্ণিমার ভরা কাটালের জোয়ারের সাথে মাঝারী বর্ষনেই এ নগরীর বেশীরভাগ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো দিনের পর দিন জলবদ্ধতার কবলে থাকছে। নগরবাসীর দূর্ভোগও সব সীমার বাইরে। এ নগরীর শতাধিক কিলোমিটার খাল ও ড্রেনের এখনো অধিকাংশই কাঁচা। যেসব খাল বুজিয়ে আরসিসি ড্রেন সহ ফুটপাত নির্মান করা হয়েছে, তার প্রায় কোনটাই নিয়মিত পরিস্কার না করায় এ নগরীর পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ছে। পাশাপাশি নবগ্রাম রোড খাল, জেলা খাল, সাগরদী খাল সহ যেসব খালগুলো এখনো অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে, সেগুলোও নিয়মিত পরিস্কার হচ্ছে না। ফলে ঐসব খালে সংযুক্ত ড্রেনগুলোর পানি ড্রেনেই আটকে থাকার পাশাপাশি তা অনেক সময়ই রাস্তায় গড়াচ্ছে। নগরীর নবগ্রাম রোডের বটতলা বাজারের পশ্চিম প্রান্ত থেকে হাতেম আলী কলেজ পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার এলকার আরসিসি ড্রেনটি গত কয়েক বছর ধরে ভড়াট হয়ে আছে। ফলে ভারী বর্ষণ বা নদীর জোয়ার নয়, সারা বছরই এ ড্রেনের পানি রাস্তা ছুই ছুই করে। সামান্য বৃষ্টি বা কির্তনখোলার জোয়ারেও এ ড্রেনের পানি রাস্তাকে সয়লাব করে দিচ্ছে। অথচ বরিশাল নগর ভবনে যে বিপুল দৈনিক মজুরী ভিত্তিক কর্মচারী রয়েছে, তার একটি বড় অংশই পরিচ্ছন্নতা কর্মী। জনবল সংকট না থাকলেও শুধুমাত্র সুষ্ঠু কর্ম পরিকল্পনার অভাবেই এনগরীর জলাবদ্ধতার কোন সুরাহা হচ্ছে না বলে অভিযোগ নগরবাসীর।
তবে বরিশাল সিটি করপোরেশনের আগের নগর পরিষদও নগরীর কিছু খাল খনন করে পুনরুদ্ধারের প্রকল্প নিয়ে মন্ত্রনালয় ও পরিকল্পনা কমিশনে দৌড়ঝাপ করলেও তা অনুমোদন লাভ করেনি। সাবেক নগর পরিষদ এলক্ষে প্রায় সোয়া ২শ কোটি টাকার একটি ‘উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তবনা-ডিপিপি’ দাখিল করলেও বর্তমান নগর পরিষদ দায়িত্ব গ্রহন করে প্রায় সাড়ে ১১শ কোটি টাকার একটি ভিন্ন ডিপিপি দাখিল করে। কিন্তু মন্ত্রনালয় পরমার্শকের মাধ্যমে সম্ভাব্যতা সমিক্ষা সহ প্রকল্প ব্যায় কমিয়ে ডিপিপি’টি পূণর্গঠনের দিক নির্দেশনা দিয়ে তা ফেরত পাঠায়।
নগর ভবন পরবর্তিতে পরামর্শকের সমিক্ষা সহ প্রায় ২ হাজার ২শ কেটি টাকার একটি সংশোধীত ডিপিপি দাখিল করলেও মন্ত্রনালয় তা অনুমোদন না করে ফেরত পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এসব ডিপিপি প্রস্তুতে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে পরামর্শ গ্রহন করা হয়নি বলে জানা গেছে। তবে বরিশঅল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ‘এ সংক্রান্ত একটি ডিডিপি এখনো পরিকল্পনা কমিশনের বিবেচনাধীন’ বলে জানিয়েছেন।
অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড স্ব প্রনোদিত হয়ে বরিশাল মহানগরীর ৭টি খাল সংস্কার ও উন্নয়নে ১০.৭৫ কোটি টাকাার একটি ডিপিপি দাখিল করার পরে তা অনুমোদন করেছে পরিকল্পনা কমিশন। কিন্তু নগর ভবন থেকে এ লক্ষে তাদের দাখিলকৃত একটি ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে চুড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় বলে জানিয়ে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কার্যক্রম বন্ধ রাখার অনুরোধ করা হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে।
বোর্ডের অনুমোদিত প্রকল্পটির আওতায় নগরীর পলাশপুর খাল, আমনতগঞ্জ খাল, জেল খাল, ভাটার খাল, চাঁদমারী খাল, সাগরদী খাল ও রূপাতলী খালগুলোর প্রায় ১৮ কিলোমিটার অংশ সংস্কারের লক্ষ্যে দর প্রস্তাব গ্রহন করে মূল্যায়নও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় এসব খালের দুধারে ওয়াকওয়ে নির্মান সহ বসার জন্য কিছু অবকাঠামো নির্মান করা হবে বলেও জানা গেছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পটিতেও নগরীর পশ্চিম প্রান্তের নবগ্রাম রোড খালটি সংস্কার ও উন্নয়নে অন্তভর্’ক্ত করা হয়নি। ফলে নগরীর পশ্চিম অংশের পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন এখনো সুদুর পরাহত। এত করে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরশনও দীর্ঘ সুত্রিতার কবলে পড়বে বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারিগড়ি বিশেষজ্ঞগন।
তবে এসব কিছুর চেয়েও বড় সংকট তৈরী হয়েছে বিআইডিব্লিউটিএ’র বিবেকহীন কর্মকান্ডে কির্তনখোলার তলদেশ ভড়াট সহ নগরীর সব খাল ও ড্রেনগুলো নিয়মিত রক্ষনাবেক্ষনে উদাশীনতা। পাশাপাশি ৭টি খাল সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমোদিত প্রকল্প বাস্তবায়নে যেকোন অন্তরায় পরিস্থিতির উন্নয়নকে আরো সংকটে ফেলবে বলেও মনে করছেন ওয়াকিবাহল মহল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ