Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দ্বিগুণ ভাড়াতেও সেবা নেই

চট্টগ্রামে গণপরিবহন সঙ্কটে চরম দুর্ভোগ : ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছেই

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রামে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে গণপরিবহন ভাড়া দ্বিগুণ বেড়েছে। সে তুলনায় বাড়েনি যাত্রীসেবা। লক্কর-ঝক্কর বাসে ঠাসাঠাসি করে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। যাত্রীর তুলনায় বাস-মিনিবাসসহ গণপরিবহনের সংখ্যা কম হওয়ায় জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। ভাড়া নিয়েও চলছে নৈরাজ্য। এসব দেখার যেন কেউই নেই। গত ৫০ বছরেও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ মহানগরীতে নিরাপদ গণপরিবহন নিশ্চিত করা যায়নি। এ অবস্থায় নগরবাসীকে মেট্রোরেলের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন জনপ্রতিনিধিরা।
বন্দরনগরী ও বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে প্রায় পৌনে এক কোটি মানুষের বসবাস। প্রধান সমুদ্রবন্দর ছাড়াও দেশের সর্ববৃহৎ ইপিজেড চট্টগ্রামে। সরকারি-বেসরকারি তিনটি ইপিজেড ছাড়াও এখানে রয়েছে অসংখ্য শিল্প কারখানা। এসব কারখানায় লাখো শ্রমিক কাজ করে। মহানগরীর বাসিন্দাদের বিশাল একটি অংশ গণপরিবহনের উপর নির্ভরশীল। জনসংখ্যার তুলনায় গণপরিবহনের সংখ্যা অনেক কম। মহানগরীর ১৭টি রুটে এক হাজার ৫৭৫টি বাস-মিনিবাসকে চলাচলের জন্য রুট পারমিট দেয়া হয়েছে। কিন্তু এসব রুটে বর্তমানে এক হাজার ১২৫টি বাস-মিনিবাস চলাচল করছে। এর বিরাট একটি অংশ প্রতিদিন সকাল এবং বিকেলে ইপিজেডসহ বিভিন্ন কল-কারখানার শ্রমিক পরিবহনে রিজার্ভ ভাড়ায় চলে যাচ্ছে।
বিভিন্ন স্কুল-কলেজও শিক্ষার্থী পরিবহনের জন্য নগরীতে চলাচলকারী বাস-মিনিবাস রিজার্ভ ভাড়ায় নিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে সঙ্কট আরও তীব্র হচ্ছে। বিআরটিসির হাতেগোনা কয়েকটি বাস নগরীতে চলাচল করে। তাও আবার অনিয়মিত। মহানগরীর দুইটি রুটে চলছে কাউন্টার সার্ভিস বাস। তাও প্রয়োজনের তুলনায় বাসের সংখ্যা অনেক কম। একসময় সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নারী ও শিশুদের জন্য বাস সার্ভিস থাকলেও অব্যবস্থাপনায় লোকসানের মুখে তা বন্ধ হয়ে গেছে। মহানগরীতে এসি বাস নামানোর উদ্যোগ নেয়া হয় বেশ কয়েকবার। তবে তা বাস্তবায়ন হয়নি।
নগরীতে চলাচলকারী অধিকাংশ বাস-মিনিবাসের ফিটনেস নেই। জেলার বিভিন্ন রুটে দীর্ঘদিন চালানোর পর প্রায় বিকল হয়ে যাওয়া অনেক বাস-মিনিবাস সিটি সার্ভিসে সংযুক্ত করা হয়েছে। ভাঙাচোরা দরজা, জানালা, সিট- তাতে ঠাসাঠাসি করে যাত্রী পরিবহন করা হয়। ধুলাবালি আর ময়লা-আবর্জনায় যাত্রীরা ভ্রমণ করতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনগুণ ভাড়া নিয়েও কাউন্টার সার্ভিসে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। কোন বাসেই নেই পর্যাপ্ত ফ্যান।
লক্কর-ঝক্কর এসব বাস চলতে গিয়ে ব্যস্ত রাস্তায় বিকল হয়ে যাচ্ছে। পরিবহন শ্রমিকেরাও বেপরোয়া। যত্রতত্র বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করা হয়। এতে নগরীর প্রতিটি সড়কেই যানজট এবং বিশৃঙ্খলা এখন স্থায়ী রূপ নিয়েছে। নির্ধারিত রুটে বেশিরভাগ বাস-মিনিবাস চলাচল করে না। বিশেষ করে অফিস শুরু ও ছুটির সময় দ্বিগুণ ভাড়া নিয়েও নির্ধারিত গন্তব্যে না গিয়ে যাত্রীদের মাঝপথে নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।
সিটি সার্ভিসে বড় কোন বাস নেই। ছোট ছোট বাসে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। রুট পারমিট নিয়েও অনেক বাস-মিনিবাস এবং হিউম্যান হলার রাস্তায় চলছে না। এতে গণপরিবহন সঙ্কট আরও বাড়ছে। বাস-মিনিবাস সঙ্কটে নগরীতে টমটম, ইজিবাইকের মত অবৈধ যানবাহনের ছড়াছড়ি। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার সড়কে বেপরোয়াভাবে চলছে এসব ছোট যানবাহন। এর ফলে সড়কে যানজট হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের হিসেবে নগরীতে বৈধ রিকশার সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০ হাজার। কিন্তু বাস্তবে দুই লক্ষাধিক রিকশা চলাচল করছে। চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশাও। নগরীতে বৈধ অটোরিকশার সংখ্যা ১৩ হাজার। এর বাইরে আরও কয়েক হাজার অটোরিকশা চলাচল করছে। গণপরিবহন সঙ্কটের কারণে রিকশা-অটোরিকশায়ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।
গত নভেম্বরে প্রথম দফায় জ¦ালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর পরিবহন ভাড়া এক দফা বাড়ানো হয়। সম্প্রতি আরও এক দফায় জ¦ালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর গণপরিবহন ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। নগরীতে গণপরিবহন ভাড়া গত আট মাসে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। সরকারিভাবে বাস-মিনিবাসে সবর্বনিম্ন ভাড়া ৮ টাকা নির্ধারণ করা হলেও তা অনেকে মানছে না। কোন কোন রুটে ওঠানামা ভাড়া ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। জ¦ালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ডিজেলচালিত বাসের ভাড়া সমন্বয় করা হয়েছে। কিন্তু সিএনজিচালিত বাস-মিনিবাসেও অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে যাত্রীদের সাথে পরিবহন শ্রমিকদের তর্কাতর্কি, হাতাহাতি অব্যাহত আছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে এমনিতেই দিশেহারা স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষ। তার উপর গণপরিবহনে এমন ভাড়া নৈরাজ্যে দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। আয়ের বিরাট একটি অংশ যাতায়াত খাতেই ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে তুলনায় যাত্রীসেবা বলতে কিছুই নেই। গণপরিবহন সঙ্কটে প্রতিদিন নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কল-কারখানার লাখ লাখ শ্রমিকের পাশাপাশি বিশ^বিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, মাদরাসা, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ছাড়াও কর্মজীবীরা রাস্তায় নেমে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।
মহানগরীতে সুষ্ঠু গণপরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেই। গণপরিবহন মালিকরা বলছেন, ভ্যাট-ট্যাক্সসহ গণপরিবহনের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় এ খাতে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। ফলে নতুন বাস-মিনিবাস রাস্তায় নামছে না। আবার তদারকির অভাবে রুট পারমিট নেয়ার পরও অনেক গণপরিবহন নির্ধারিত রুটে চলাচল করছে না। বেশি লাভের আশায় এসব গণপরিবহন রিজার্ভ ভাড়ায় শ্রমিক পরিবহন করছে। লক্কর-ঝক্কর বাসের বিরুদ্ধে বিআরটিএ মাঝেমধ্যে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে জরিমানা ও কিছু বাস-মিনিবাস আটক করা হয়। এরপর সবকিছুই চলে আগের মত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গণপরিবহন

৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২
৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২
১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ