Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রায়পুরে অবৈধ যানে রাস্তা সয়লাব

এ কে এম ফজলুল হক, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে হাজার হাজার অনিবন্ধিত যানবাহনের কারণে বহুমূখী ক্ষতির শিকার হচ্ছেন সরকার ও জনগণ। নিবন্ধন বিহীন এসব যানবাহন হতে এক দিকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমাণ রেজিস্টেশন ফি থেকে, অন্যদিকে অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের হাতে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত এসব যানবাহনের কারণে নিয়মিত ঘটছে দুর্ঘটনা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাস্তাঘাট, বিঘ্নিত হচ্ছে জননিরাপত্তা। শহর ও গ্রামগঞ্জের রাস্তাঘাটে এসব যানবাহনের বেপরোয়া চলাচলে তৈরি হচ্ছে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। অভিযোগ রয়েছে এ সব অবৈধ যানবাহন হতে নামে বেনামে চলছে রমরমা চাঁদাবাজি।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, রায়পুরের প্রধান প্রধান সড়কসহ উপজেলার সর্বত্র ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর, নিবন্ধনহীন সিএনজি ও মোটরসাইকেলসহ নানা ধরণের প্রায় দশ সহস্রাধিক অবৈধ যানবাহন রাস্তাঘাট দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
জানা গেছে, প্রধান সড়কে তিন চাকার যান চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও রায়পুর পৌর শহরসহ উপজেলার দশটি ইউনিয়নের সড়কগুলোতে দিন রাত চলাচল করছে নিবন্ধনহীন প্রায় ৭-৮ হাজার ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক। অনুমোদনহীন এসব বাহনের সংখ্যা দিন দিন আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সকল অটোরিকশা ও ইজিবাইকের প্রশিক্ষণহীন চালকদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে ধারণা না থাকায় জনাকীর্ণ স্থানগুলোতে যানজট তৈরির পাশাপাশি যখন তখন ঘটাচ্ছে দুর্ঘটনা, জীবনহানির পাশাপাশি অঙ্গহানি ঘটাচ্ছে নিরীহ যাত্রীদের। অথচ রায়পুর পৌর শহরে তিন চাকার ব্যাটারি চালিত যানবাহন চলাচল করতে পারবে না মর্মে গত ৬ মাস পূর্বে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হলেও অদ্যবধি তার কোন বাস্তবায়ন পরিলক্ষিত হয়নি।
অন্য দিকে যানজট তৈরি, জানমালের ক্ষয়-ক্ষতি ও সরকারি রেজিস্ট্রেশন ফি ফাঁকির পাশাপাশি ব্যাটারি চালিত অটোরিকশাগুলো গিলে খাচ্ছে মহামূল্যবান বিদ্যুৎ। রায়পুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘রায়পুরে দিনের বেলায় ১৬ এবং রাতের বেলায় ২১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে রাতের অতিরিক্ত ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জ দেয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়। আবার অনেকেই অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করে ব্যাটারি চার্জ দিয়ে থাকেন। যা বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে।
রায়পুরে অবৈধ যানবাহনের মধ্যে আরেক প্রকার হলো ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার। মূলত চাষাবাদের জন্য ট্রাক্টর তৈরি করা হলেও কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার আশায় ট্রাক্টরের সঙ্গে বডি জুড়ে দিয়ে মালামাল পরিবহণ করেন। এসব ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলারে অতিরিক্ত ওজনের মালামাল পরিবহনের কারণে এক দিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয় গ্রামের কাঁচা-পাকা রাস্তা অন্য দিকে যখন তখন ঘটছে দুর্ঘটনা। সর্বোপরি গোদের উপর বিশ ফোঁড়া হয়ে আছে নিবন্ধনহীন মোটরসাইকেল। অদক্ষ ও প্রশিক্ষণহীন টিনএজারদের হাতে পড়া একেকটি মোটরসাইকেল যেন একেকটি রেসের ঘোড়া। জীবনকে থোড়াই কেয়ার করা এসব মোটরসাইকেল চালকরা। যখন তখন হারাচ্ছে জীবন বা বরণ করে নিচ্ছে পঙ্গুত্ব।
রায়পুরের দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট শেখ রাসেল বলেন, ‘ধারনা করা হচ্ছে রায়পুরে প্রায় দশ হাজার অনিবন্ধিত যানবাহন রয়েছে।’ রায়পুর পৌরসভার লাইসেন্স পরির্শক পীরজাদা আরমান হোসেন বলেন, ‘পৌর এলাকায় কি পরিমাণ অনিবন্ধিত যানবাহন রয়েছে তা নির্ণয় করার চেষ্টা চলছে।’ নিবন্ধনহীন যানবাহনের বিষয়ে পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে রায়পুর থানার ওসি শিপন বড়ুয়া বলেন, ‘নিবন্ধনহীন যানবাহন চিহ্নিত করার লক্ষ্যে আমরা প্রায় প্রতিদিনই চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশী করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করি। অবৈধ যান চলাচল রোধে এ কার্যক্রম চলমান থাকবে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ