Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ছাড়া পেল গুজরাট দাঙ্গায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণে ও হত্যার দায়ে ১১ সাজাপ্রাপ্ত

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০২২, ৯:২৫ এএম

ভারতে ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গায় বিলকিস বানুকে দলবদ্ধ ধর্ষণ ও তাঁর পরিবারের সাত সদস্যকে হত্যার ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ১১ আসামি মুক্তি পেয়েছেন। রাষ্ট্রীয় ক্ষমার অধীনে গুজরাট সরকারের কাছে সাজা মওকুফের আবেদন করে তারা মুক্তি পেয়েছেন। কাতারভিত্তিক আল-জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়।

গতকাল সোমবার তাঁরা কারাগার থেকে বের হয়েছেন বলে জানা গেছে। ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি মুম্বাইয়ে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (সিবিআই) একটি বিশেষ আদালত বিলকিস বানুকে দলবদ্ধ ধর্ষণ ও তাঁর পরিবারের সাত সদস্যকে হত্যার দায়ে ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। পরে বোম্বে হাইকোর্ট তাঁদের সাজা বহাল রাখেন।

দণ্ডিত ব্যক্তিরা ১৫ বছরের বেশি কারাভোগ করেন। এরপর তাঁদের একজন সাজা শেষ হওয়ার আগেই কারামুক্তি চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন।
২০০২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সবরমতি এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৫৯ জন কর কর্মকর্তা নিহত হন। এ ঘটনায় দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়লে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিস বানু নিজের শিশুকন্যাকে সঙ্গে নিয়ে আরও ১৫ জনের সঙ্গে গ্রাম থেকে পালিয়ে যান। পরে ৩ মার্চ তাঁরা একটি মাঠে আশ্রয় নেন। তখন ২০-৩০ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র, তরবারি ও লাঠিসোঁটা নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা করে। দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন বিলকিস বানু। তাঁর পরিবারের সাতজনকে হত্যা করা হয়। বাকি ছয় সদস্য কোনোমতে পালিয়ে যান।

এদিকে, ওই ১১ আসামিকে মুক্তি দেওয়ায় গুজরাট সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছে ভারত। এই বিষয়ে ভারতের রাজনীতিতে আলোচিত মুখ ও দেশটির এমপি আসাদুদ্দিন ওয়াইসি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা দিবসে লাল কেল্লা থেকে নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলেন, আর একই দিনে এমন অপরাধীদের মুক্তি দেওয়া হয়। এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে একটি ভুল বার্তা পাঠাবে। এই ঘটনা বিলকিস বানুকে আবারও কষ্টের মুখে ফেলবে। আমি আশা করব শিগগিরই বিজেপির শুভ বুদ্ধির উদয় হবে।’

২০০২ সালের ওই দাঙ্গায় হিন্দু তীর্থযাত্রীবাহী একটি ট্রেনে অগ্নিসংযোগের পর ৫৯ জনের মৃত্যু হয়। সেসময় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় ওই ঘটনার জন্য মুসলমানদেরই দায়ী করে থাকে। পরের কয়েক দিন ধরে চলা সহিংসতায় সব মিলিয়ে ২ হাজার মানুষ মারা যান। যাদের অধিকাংশই মুসলমান। এবং এই সময় কয়েক শ নারী ধর্ষণের শিকার হন। তাদেরই একজন বিলকিস বানু।

২০০২ সালের ৩ মার্চের এক সহিংস ঘটনায় বিলকিস বানু গুজরাটের দাহোদ জেলার লিমখেদায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। ওই সময় তাঁর ৩ বছরের কন্যা সন্তান সালেহাসহ ১৪ জনকে হত্যা করা হয়। আদালত এক আদেশে জানায়, সালেহাকে হত্যার আগে তার মাথা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই সময় বিলকিস বানুর বয়স ছিল ২১ বছর এবং তিনি ৫ মাসের গর্ভবতী ছিলেন। বিলকিস বানু পরে আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় জানিয়েছিলেন তাঁকে ধর্ষণ করা ১১ জনই তাঁর আশপাশের প্রতিবেশী।

গুজরাট প্রশাসনে জ্যেষ্ঠ আমলা রাজ কুমার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, ওই ১১ জনের আবেদনের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে কারণ তাঁরা এরই মধ্যে ১৪ বছর সাজা খেটেছেন। ভারতে সাধারণত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বলতে ১৪ বছরই বোঝানো হয়।
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোকে (সিবিআই) ঘটনাটির তদন্ত করতে নির্দেশ দেয়। পরে সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি গুজরাট থেকে মহারাষ্ট্রের আদালতে স্থানান্তর করে। পরে ওই মামলায় আদালত ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। এ ছাড়া, দীর্ঘ ১৭ বছরের আইনি লড়াইয়ের পর ২০১৯ সালে আদালত বিলকিস বানুকে ৫০ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। সূত্র : আল জাজিরা



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ