Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

৬ শিক্ষার্থীকে পেটালো ছাত্রলীগ

ঢাবির গেস্টরুমে দেরি করে যাওয়া

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ছাত্রলীগের বেঁধে দেয়া নির্ধারিত সময়ের পরে তথাকথিত গেস্টরুমে উপস্থিত হতে না পারায় ৬ শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ হোসেনের গ্রুপে এ ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে ওই হলের ১০২৭ নাম্বার কক্ষে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়। বিষয়টিকে অপ্রীতিকর ঘটনা বলে স্বীকার করেছেন ওই হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ হোসেন।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের শিক্ষার্থী এইচ আর মারুফ, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের আশরাফুল ইসলাম, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের আরিফ, আইন বিভাগের নাহিয়ান নাবিল।

তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ হোসেনের ছোট ভাই হিসেবে পরিচিত। হোসেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারী।

অপরদিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রিসালাত, ফিন্যান্স বিভাগের শান্ত, অর্থনীতি বিভাগের মুইন, আরবি বিভাগের ইউনূস, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সোহাগ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের নাঈম।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন (মঙ্গলবার) রাতে বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের ক্রিকেট ম্যাচ থাকায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী (ভুক্তভোগী) ছাত্রলীগের বেঁধে দেয়া নির্ধারিত সময়ে গেস্টরুমে উপস্থিত হতে পারেননি। তাই তাদের ‹বিচার› করার জন্য আলাদাভাবে গেস্টরুমে ডেকে নেয়া হয়। চড়-থাপ্পড় থেকে শুরু করে লাঠিপেটা পর্যন্ত করা হয় তাঁদের। গেস্টরুমে উপস্থিত থাকা বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী এসব ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীরা মারধরের ঘটনা অস্বীকার করলেও প্রত্যক্ষদর্শী দুই ছাত্রলীগ কর্মী তা স্বীকার করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী জানান, অভিযুক্ত মারুফ নিয়মিত মাদক সেবন করে। যে কারণে প্রায়শই খিটখিটে মেজাজ নিয়ে থাকে আর তার প্রভাব পরে গেস্টরুমে প্রথম বর্ষের এসব শিক্ষার্থীর উপর। প্রায়ই গেস্টরুমে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের উপর পানির বোতল, স্ট্যাম্প ও জুতো ছুড়ে মারে।

আরেক অভিযুক্ত আশরাফুল শিক্ষার্থীদের মা-বাবা ধরে গালিগালাজ করে। এর আগেও গেস্টরুমে সবাইকে লাইনে দাঁড় করিয়ে স্ট্যাম্প দিয়ে মারধর করে আশরাফুল। খুবই উগ্র স্বভাবের আরেক অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী হলো নাবিল যে গেস্টরুমে জুনিয়রদের ‹আতঙ্ক› হিসেবে পরিচিত। নাবিল প্রায়ই জুনিয়রদের ফোন চেক করতো বলে জানা যায়। নাবিলের বন্ধুদের দাবি সে নিজেকে কর্মী নয় বরং ছাত্রলীগ নেতা মনে করে।

আরেক অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী আরিফ প্রায়শই গেস্টরুমে জুনিয়রদের গায়ে হাত তুলে বলে জানা গেছে। সেও জুনিয়রদের কাছে আতঙ্ক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।

জানা যায়, হলের উক্ত কক্ষটিকে (১০২৭) ছাত্রলীগের তথাকথিত ‹গেস্টরুম› হিসেবে ব্যবহার করা হয়। হল অফিসের অফিশিয়াল নথি অনুযায়ী এই রুমে কোনো আবাসিক শিক্ষার্থী নেই। দীর্ঘদিন ধরে এটি ছাত্রলীগের দখলে রয়েছে। অভিযোগ আছে, যেখানে সপ্তাহে ৬দিন কিংবা কখনো কখনো ৭ দিন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের গেস্টরুমের নামে শারীরিক মানসিক ও নির্যাতন করেন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ হোসেনের গ্রুপের নেতাকর্মীরা। নিয়মিত দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা ও মাঝে মাঝে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা এখানে গেস্টরুম পরিচালনা করেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীরা বিষয়টি অস্বীকার করেন। তাদের দাবি এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ।
তবে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ হোসেন বলেন, গতকাল রাতে একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল। পরবর্তীতে আমি এটা সলভ (সমাধান) করে দিয়েছি।

এ বিষয়ে হল প্রভোস্ট ড. মো. মাসুদুর রহমান বলেন, আমাদের কাছে লিখিত বা মৌখিক কোনো অভিযোগ আসেনি। লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়মানুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিব।##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ছাত্রলীগ

২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ